নাসা’র ইউএফও প্রতিবেদন: এলিয়েনের অস্তিত্বের প্রমাণ নেই, তবে তারা থাকতেও পারে
কয়েকশ অজ্ঞাত উড়ন্ত বস্তু তথা ইউএফও (আনআইডেন্টিফায়েড ফ্লাইং অবজেক্ট) দেখার ঘটনা নিয়ে তদন্ত করার পর মার্কিন মহাকাশ সংস্থা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে, এসব ব্যাখ্যাহীন ঘটনার পেছনে এলিয়েনের 'হাত' থাকার কোনো প্রমাণ নেই। তবে এমনিতে এলিয়েনের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়নি নাসা।
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত ইউএফওসংক্রান্ত নাসার ৩৬ পৃষ্ঠার নতুন প্রতিবেদনে এ বিতর্কের সমাপ্তি আনতে পারে এমন কোনো প্রমাণের উল্লেখ ছিল না।
নাসা ইউএফওকে বর্তমানে অজ্ঞাত অস্বাভাবিক প্রপঞ্চ বা ইউএপি (আনআইডেন্টিফায়েড অ্যানোমেলাস ফেনোমেনা) হিসেবে অভিহিত করে। এটি জানিয়েছে, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আরও উন্নত প্রযু্ক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তদন্ত করবে এটি।
নাসা প্রশাসক বিল নেলসন জানিয়েছেন, মার্কিন মহাকাশ সংস্থাটি এখন থেকে এলিয়েন বিষয়ক তথ্য আরও স্বচ্ছভাবে প্রকাশ করবে।
এলিয়েনের অস্তিত্বের প্রমাণ নেই, তবে তারা থাকতেও পারে
প্রতিবেদনের একদম শেষপৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে, 'এ সিদ্ধান্তে আসার কোনো কারণ নেই' যে, নাসার তদন্ত করা কয়েকশ ইউএপি দেখার ঘটনার পেছনে মহাজাগতিক কোনো উৎস ছিল।
'তবে সেটাকে যদি আমরা একটি সম্ভাবনা হিসেবে স্বীকার করি, তাহলে হতে পারে ওই বস্তুসমূহ এখানে আসার জন্য আমাদের সোলার সিস্টেমের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করেছে,' প্রতিবেদনে বলা হয়।
যদিও নাসার প্রতিবেদনে মহাজাগতিক প্রাণ তথা এলিয়েন থাকার বিষয়ে কোনো হ্যাঁ-বাচক সিদ্ধান্ত উল্লেখ করা হয়নি, তবে নাসা 'পৃথিবীর নভোমণ্ডলে সম্ভাব্য অজ্ঞাত এলিয়েন প্রযুক্তি সক্রিয় থাকার' সম্ভাবনাকে প্রত্যাখ্যান করেনি।
সীমাবদ্ধ ইউএপি তথ্য
নাসা'র সায়েন্স মিশন ডিরেক্টরেট-এর সহযোগী প্রশাসক নিকোলা ফক্স বলেন: 'ইউএপি আমাদের গ্রহের অন্যতম বড় রহস্য' এবং সেটার মূল কারণ এ বিষয়ে উচ্চমানের তেমন তথ্য-উপাত্ত নেই।
ইউএপি দেখার অসংখ্য ঘটনার কথা জানা থাকলেও ফক্স জানান, এসব ঘটনার প্রকৃতি ও উৎস নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্তে আসার জন্য পর্যাপ্ত ডেটা সচরাচর পাওয়া যায় না।
তিনি আরও ঘোষণা করেন, ইউএপি নিয়ে গবেষণার জন্য নাসা নতুন একজন পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে। ডেটা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের জন্য এ পরিচালক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি ব্যবহার করবেন।
তবে নতুন এ পরিচালকের কোনো পরিচয় প্রকাশ করেনি নাসা। এর কারণ খুব সম্ভবত সংস্থাটি চায় না তাদের একজন কর্মকর্তা এলিয়েন বিষয়ে গবেষণা করার জন্য জনসাধারণের হয়রানির মুখে পড়ুক।
মেক্সিকোর ভাইরাল 'এলিয়েন' ছবির বিষয়ে নাসা
ইউএপি প্রতিবেদনটি নিয়ে নাসা একটি সংবাদ সম্মেলন করেছে। সেখানে নাসার কর্তাব্যক্তিদের একটি প্যানেল উপস্থিত ছিল।
গত সপ্তাহে মেক্সিকোর আইনসভা কংগ্রেসের সামনে তথাকথিত মহাজাগতিক প্রাণীর ছবি উপস্থাপন করার বিষয়ে নাসার প্যানেলের কাছে প্রশ্ন করেন বিবিসি'র সাংবাদিক স্যাম ক্যাব্রাল।
মেক্সিকোর আইনপ্রণেতাদের দুটি মমি দেখিয়ে স্বঘোষিত ইউএফও গবেষক জেইমি মসান দাবি করেছেন, মমি করা নমুনা দুটি এলিয়েন বা ভিনগ্রহবাসীর মৃতদেহ।
মসানের দাবি, নমুনা দুটি ২০১৭ সালে পেরুতে পাওয়া গেছে। ছোট আকারের মমিগুলোর গায়ের রং চকের মতো। এদের প্রত্যেক হাতে তিনটি করে আঙুল রয়েছে। আর রয়েছে শুকিয়ে কুঁচকে যাওয়া মাথার মতো আকৃতি।
তিনি আরও দাবি করেন, মেক্সিকোর ন্যাশনাল অটোনমাস ইউনিভার্সিটির গবেষকদের কার্বন পরীক্ষায় জানা গেছে এ মৃতদেহগুলো অন্তত এক হাজার বছরের পুরনো।
এসব নমুনার সত্যতা ঘিরে বৈজ্ঞানিক মহলে ব্যাপক সংশয় দেখা দিয়েছে। মসান এর আগেও এলিয়েন থাকার দাবি করেছিলেন, কিন্তু তার সেসব দাবি ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়।
এ বিষয়ে নাসার বিজ্ঞানী ড. ডেভিড স্পার্জেল বলেন, 'আগে বিশ্বের বিজ্ঞানী মহলকে এসব নমুনা পরীক্ষা করতে দিন। তারপর আমরা দেখব বিষয়টা কী।'
এআই প্রযুক্তি ব্যবহারের পক্ষে নাসা
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউএপি চিহ্ণিতকরণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিং 'অত্যাবশ্যক হাতিয়ার'।
এছাড়া ইউএপি গবেষণায় 'সারাবিশ্বের একাধিক বেসামরিক পর্যবেক্ষকের' স্মার্টফোন মেটাডেটা এবং 'স্মার্টফোনভিত্তিক ওপেন-সোর্স অ্যাপ্লিকেশন' ব্যবহার করবে নাসা।