সে, আমি ও অন্য কেউ
ব্যাপারটা এমন কিছু ছিল না। বাজার করে ফেরার পথে রিকশা পাচ্ছিল না। হাতের ব্যাগটা ভর্তি শাকসবজি-তেল এই সব নিয়ে। অনেক বাজার। টানতে টানতে হাত ধরে আসছিল। এমনিতে রিকশা পাওয়া যায়, আজ কী যে হলো?
এমন সময় একটা রিকশা আসে এক প্যাসেঞ্জার নিয়ে। সে প্রায় হুমড়ি খেয়ে কাছে যায়। যাত্রী লোকটা তাকে এভাবে আসতে দেখে বলে, 'আমি তো খালি করছি না, একটা টুথপেস্ট কিনব তারপর আবার চলে যাব। আপনি কৈ যাবেন?'
সে বলে, 'নিকেতন বাজার গেট।'
'ঠিক আছে শেয়ারে আসেন। আপনি উঠেন, আমি আসতাসি,' বলে লোকটা নেমে গিয়ে দোকানে যায়। সে উঠে অপেক্ষা করে। লোকটা ফিরে আসলে রিকশা রওনা হয়।
২
সকালে ঘুম থেকে উঠে সে গোসল সারে, নাশতা খায়, তারপর বাজার তোলে ফ্রিজে। ডিভাইসে দিনের খবর পড়ে। রাজনীতি, খুন, আক্সিডেন্ট, অসুখ, পরকীয়া, যুদ্ধ ও সব খবর মন খারাপ করে দেয়। তাই খেলার খবরে যায়। মেসি, আন্তন, কোহলি, সাকিব... নামগুলার মধ্যে সে হারিয়ে যায়। মানুষ তো নাম ছাড়া কিছু না। নামের সাথেই থাকে পরিচয়। চেহারা না দেখলেও চলে। হঠাৎ বেল বাজে, বুয়াটা এল বোধ হয়। সে দরজা খোলে। বুয়াটা তার দিকে তাকিয়ে থাকে বোকার মতো। তারপর বলে, 'সায়েব নাই ?'
মানে?
'সায়েব কৈ? আপ্নে কে?'
লোকটা কিছু বলার আগে বুয়াটা পিঠ দেখিয়ে নিচে চলে যায়।
৩
নিজেকেই রান্না চাপাতে হয়। অত ভালো সে পারে না তাই বুয়াটাকে রেখেছে কিন্তু আজ কী যে ঝামেলা হলো, কিছুই বোঝা গেল না। তা-ও সবজি, মাছ বসিয়ে সে বাথরুমে যায়। হাত ধুতে গিয়ে সে আয়নার দিকে তাকায়। প্রথমে তার খেয়াল হয়নি। মুখটা দেখে, দেখে যে চেহারাটা আয়না থেকে তার দিকে তাকিয়ে আছে, সেটা তার না, যেটার সাথে তার জন্মের পরিচয়। সে তাকিয়েই থাকে। এটা কে? তার মাথা তখন ভয় ভাবনার অনেক দূরে চলে গেছে। সে কে তবে?
৪
ফোন করে তার এক বন্ধুকে এই সব বলতে যায় কিন্তু কথা বেশি আগায় না। তার বন্ধু তাকে কোন স্ক্যামার ভেবে লাইন কেটে দেয়। বলে তার বন্ধুর গলা সে চেনে, এটা সে না। ফোন চুরি করে সে ব্ল্যাকমেল করছে বন্ধুর নাম নিয়ে। পুলিশে খবর দেবে। লাইন কেটে দেয়। একই ঘটনা ঘটে আরও কয়েকজনের সাথে। সে ফোন করা বন্ধ করে দেয়। শরীর, গা অন্যজনের, এমনকি চেরাটাও ও কাপড়-কাগজপত্র সব একই, কিন্তু সে অচেনা হয়ে গেছে। তার ভয় লাগতে থাকে। কৈ যাবে, কৈ পালাবে সে নিজের কাছ থেকে?
৫
সে ৯৯৯-এ পুলিশকে ফোন করে জানাবে ভেবে দেখে লাইন ডিসকানেক্ট করে দিয়েছে। তার বন্ধু নিশ্চয় কমপ্লেন করেছে। তখন সে এত অস্থির হয়ে পড়ে যে আর ঘরে থাকতে পারে না। রাস্তায় বেরিয়ে যায় দরজায় তালা না লাগিয়েই। পাড়ার দোকানদারটা তাকে দেখে জিজ্ঞাসা করে কাকে খুঁজছে। সে উত্তর না দিয়ে সামনে আগায়। দেখে একদল লোক চিৎকার করছে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে, কাকে যেন খুঁজছে।
৬
কিছু বোঝার আগেই লোকগুলা তাকে দেখতে পেয়ে ছুটে আসতে থাকে তার দিকে। সে কিছু বোঝার আগেই কোনো অজানা ভয়ে সে পালাতে থাকে। কেন, কোথাও কিছুই বোঝে না। কিন্তু পালানো যায় না। ধরে ফেলে চড়, কিল থাপ্পড় চলতেই থাকে ক্ষিপ্ত মানুষের ও মার খেতে খেতে সে ক্রমে জ্ঞান হারাতে থাকে তখন দেখে অবিকল তার আগের/নিজের চেহারার একজন মানুষ আততায়ী ভিড়ের মধ্যে থেকে মনোযোগ দিয়ে দেখছে সে মারা গেছে কি না।