নগরের কিশোর-কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্যে গুরুত্ব দিতে হবে: বিশেষজ্ঞরা
বাংলাদেশে ৪৬ লাখ কিশোরী সিটি করপোরেশনভুক্ত এলাকাগুলোতে বসবাস করে, যার মধ্যে বস্তি ও নিম্ন আয়ের কিশোরীরাও আছে। নগরের স্কুলগুলোতে কিশোরীদের জন্য পরিচ্ছন্ন টয়লেট সুবিধা নেই, স্যানিটারি প্যাডের ব্যবস্থা নেই। কিশোরীদের সুষ্ঠুভাবে বেড়ে ওঠার জন্য যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা না গেলে সমাজ সুস্থ মা, সুষ্ঠু জাতি ও সুষ্ঠু নারী নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত হবে।
সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় একটি হোটেলে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ আয়োজিত 'নগরীর কিশোর-কিশোরী ও মায়েদের প্রজনন স্বাস্থ্যবিষয়ক পলিসি কনফারেন্স' এ বক্তারা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, সিটি কর্পোরেশন এলাকার বিদ্যালয়গামী ৮ থেকে শুরু করে ১৯ বছরের ছেলেমেয়েদের বিশেষ করে মেয়েদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবায় প্রবেশাধিকার অত্যন্ত সীমিত। গ্রামাঞ্চলের প্রতি ৬,০০০ মানুষের জন্য একটি কমিউনিটি ক্লিনিকের আদলে আরবান এলাকায় সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র নেই বললেই চলে। সিটিতে এ ধরনের সেবা কখনও ৫০,০০০ এর অধিক মানুষের জন্য।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, "সামাজিক নানারকম সংকোচ এবং দ্বিধার কারণে আমাদের দেশে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার বিষয়গুলো সেভাবে আলোচিত হয় না। এতে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হতে হয় কিশোরীদের, যারা আমাদের মেয়ে ও ভবিষ্যতের গর্ভধারিণী মা এবং পরিবারের মূল চালিকাশক্তি।"
পলিসি কনফারেন্সে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আবি জামিল ফয়সাল বলেন, "আমাদের স্কুলগুলোতে ক্লাসে প্রজনন স্বাস্থ্যের অধ্যায়টি পড়ানো হয় না যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা আছে এটি পড়ানোর। কিশোরীদের জন্য সুলভে স্যানিটারি প্যাড নিশ্চিত করতে হবে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর কিন্তু গ্রাম এলাকায় বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন দেয়, আরবান হেলথের দায়িত্ব যেহেতু স্থানীয় সরকারের, তাই সেখানে তারা স্যানিটারি ন্যাপকিন দেয় না। আরবান এরিয়াতেও বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।"
অনুষ্ঠানে ওয়ার্ল্ড ভিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঢাকা শহরের ১০-১৯ বছরের মেয়েদের সাথে কথা বলে জানা গেছে যে, স্কুলের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে স্কুল ও কোচিং সহ কারো কারো ৭-৯ ঘণ্টাও কেটে যায়। অথচ কোন কোন বিদ্যালয়ের স্যানিটেশন ব্যবস্থা, রানিং ওয়াটার ফ্যাসিলিটিস, নোংরা টয়লেট, টয়লেটের সংখ্যা কম প্রভৃতি কারণে অনেক মেয়ে বিদ্যালয়ের টয়লেট ব্যবহার না করে একেবারে বাড়ি ফিরে টয়লেট ব্যবহার করে। দীর্ঘক্ষণ টয়লেট আটকে রাখার জন্য তারা বিভিন্ন ধরণের জটিলতায় ভোগে। মেয়েরা বলছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ বিষয়টি দেখার কেউ নেই।
প্রায় ৭০-৮০ ভাগ মেয়ে বলছে যে, মাসিককালীন জরুরী সময়ে মাসিক ব্যবস্থাপনার কোন ব্যবস্থাও বিদ্যালয়ে নেই; যেমন স্যানিটারি প্যাড, আয়রন ট্যাবলেট, ফলিক এসিড বা প্রয়োজনীয় ঔষধ নেই।
এদিকে সংসদ সদস্য এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল আজিজ বলেন, "বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে না পারলে প্রিম্যাচিউর শিশুর জন্ম বন্ধ করা যাবে না। কিশোরীদের পাশাপাশি কিশোরদের কথাও ভাবতে হবে কারণ কিশোরগ্যাং বেড়ে যাচ্ছে।"