স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই চট্টগ্রাম নগরীতে চলছে গণপরিবহন
স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে চট্টগ্রাম নগরে চলছে গণপরিবহন। ১ জুন থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চালুর কথা থাকলেও ৩১ মে নগরীর বিভিন্ন সড়কে গণপরিবহন চলাচল করতে দেখা গেছে।
ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) শনিবার পরিবহন মালিক শ্রমিকদের সঙ্গে এক বৈঠকে ১৬টি নির্দেশনা দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে 'সীমিত আকারে' নগরীতে গণপরিবহন চালাতে বললেও সেসব মানা হচ্ছে না।
নগরীর একটি আইটি ফার্মে কর্তরত রাকিব হোসাইন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, রোববার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে আন্দরকিল্লা যাওয়ার জন্য একে খান মোড়ে অপেক্ষা করছিলাম। রিকশা ও সিএনজি অটোরিকশা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে প্রায় তিন গুণ ভাড়া দাবি করছিল। ৩০ মিনিট অপেক্ষার পর ৪ নম্বর রুটের একটি বাস আসে। ওঠা-নামা ৫ টাকার বিপরীতে ২০ টাকা ভাড়া দাবি করার পরেও বাসে উঠি। কিছুদূর যেতেই পুরো বাস ভর্তি যাত্রী ওঠান হেলপার। আমি প্রতিবাদ করলাম। কেউ শুনল না। গণপরিবহনে গাদাগাদি করে যাত্রী উঠালে স্বাস্থ্যবিধি মানা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
রাকিব হোসেন আরও বলেন, জিইসির মোড়ে বাস থেকে নেমে দেখি সড়কে বিভিন্ন রুটে গণপরিবহন চলাচল করছে। ভাড়া আদায় করছে চার গুণেরও বেশি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করলেও কিছুটা সহনীয় হতো।
এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
এদিকে চট্টগ্রাম নগরীতে চলাচলকারী ১১০০ গণপরিবহনে (বাস- মিনিবাস) স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা দুরূহ বলে মনে করছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপ।
সংগঠনটির সভাপতি বেলায়েত হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, মহানগর এলাকায় কাউন্টার সার্ভিসে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা গেলেও নগরীতে চলাচালকারী ১১০০ লোকাল বাসে বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে যাবে। এমনিতে এসব বাসে আসনসংখ্যার চেয়ে বেশি যাত্রী পরিবহন করা হতো। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন পরিচালনার যে সিদ্ধান্ত রয়েছে, তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি।
তবে, কাউন্টারভিত্তিক পরিচালিত ৫৫টি মেট্রো প্রভাতী বাসে একজন যাত্রীকে দুটি টিকেট নিয়ে এক সিটে বসিয়ে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা হবে বলে জানান তিনি।
৩১ মে সড়কে গণপরিবহন চলাচলের বিষয়ে তিনি বলেন, পরিবহন শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। অনেক বাস গার্মেন্টসের শ্রমিক পরিবহন শেষে ফেরার পথে সাধারণ যাত্রী পরিবহন করে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি মোঃ মুসা বলেন, ১ জুন থেকে চট্টগ্রাম নগরে গণপরিবহন চালু হওয়ার কথা। কেউ যদি এর আগে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে সড়কে গাড়ি পরিচালনা করেন, তারা আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন।
কোনো পরিবহন শ্রমিক গাড়ি পরিচালনায় সরকারি নির্দেশনা অমান্য করলে তাকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
এদিকে সড়কে গণপরিবহন পরিচালনার বিষয়ে শনিবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সঙ্গে পরিবহন মালিক শ্রমিকদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভায় ১৬টি নির্দেশনা দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে 'সীমিত আকারে' নগরীতে গণপরিবহন চালাতে বলেছে সিএমপি।
সভায় দেওয়া নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে- জ্বর, সর্দি-কাশির লক্ষণ থাকলে কিংবা অসুস্থ- এমন চালক বা শ্রমিককে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব থেকে বিরত রাখা, চলাচলের সময় গাড়ির দরজা বন্ধ রাখা, পাশাপাশি সিটে দুইজন যাত্রী না বসানো, জীবাণুনাশক দিয়ে প্রতিটি গাড়ি জীবাণুমুক্ত করা, স্যানিটাইজার রাখা নিশ্চিত করা, যেন প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায় এবং গাড়ির চালক, সহকারী এবং যাত্রীদের মাস্ক ও হ্যান্ডগ্লাভস ব্যবহার নিশ্চিত করা, সম্ভব হলে ফেসশিল্ডও ব্যবহার করতে হবে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও বিস্তার প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে পুলিশ কঠোর হবে বলেও সভায় জানিয়ে দিয়েছেন সিএমপি কমিশনার মাহবুবুর রহমান।
সিএমপির উপ-কমিশনার (ট্রাফিক-উত্তর) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে নগরীতে গণপরিবহন পরিচালনা করতে হবে। ১ জুন থেকে আমরা সেটি কঠোরভাবে মনিটরিং করব।