মোবাইল অতিরিক্ত ছবি আর অ্যাপে ভরা? যেভাবে এড়াবেন ডিজিটাল ক্লাটার
ডজনের বেশি মোবাইল অ্যাপ আছে যেগুলোতে লগইন করা হয় না, গ্যালারিতে হাজার হাজার ছবি বিশৃঙ্খল অবস্থায় পড়ে আছে কিংবা ই-মেইলের ইনবক্স ভরা; আমাদের অনেকের ডিভাইসের অবস্থাই হয়তো বর্তমানে এমন।
গবেষণা অনুযায়ী, এমন অগোছালো (ক্লাটার) অবস্থা ডিভাইস হ্যাং বা নষ্ট করে দিতে পারে, ব্যবহারকারীর জন্য চাপ হয়ে উঠতে পারে এবং বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের জন্য সাইবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঝুঁকি তৈরি করে।
কিন্তু কীভাবে আপনার ডিভাইসকে গুছিয়ে নেবেন? এ বিষয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছে এল পাইস। ওয়াশিংটনের জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সাইন্সের অধ্যাপক ক্যাল নিউপোর্ট বলেন, ডিজিটাল ক্লাটার তৈরি হওয়া ব্যবহারকারীর জন্য চাপের। যে ডিজিটাল বিশ্বে প্রতিনিয়ত আরো ছবি, ভিডিও কিংবা ডকুমেন্ট তৈরি ও সংরক্ষিত হচ্ছে, সেখানে ডিভাইস সুশৃঙ্খল রাখা একটি চ্যালেঞ্জ।
ইন্ডিগো অর্গানাইজিং এর স্বত্ত্বাধিকারী আমান্ডা জেফারসন বলেন, ডিজিটাল ক্লাটারের সমাধান পেতে মরিয়া হয়ে গুগলে সার্চ করার আগে একবার নিজেকে জিজ্ঞাসা করে নিন, পুরো ডিভাইসই আপনাকে চাপে ফেলছে নাকি ফটো বা ফাইলের মতো কেবল এক বা দুটো জিনিস? বিশেষজ্ঞদের মতে, কোন বিষয়গুলো উদ্বেগের সেখানে মনোযোগ দেওয়া উচিত।
হাজার হাজার ছবি, কি করবেন?
জেফারসন বলেন, হাজার হাজার ছবির মধ্য থেকে অপ্রয়োজনীয়গুলো ডিলেট করতে গিয়ে পেরেশান হওয়ার আগে ফটো অ্যাপে থাকা কিছু দরকারি টুল ব্যবহার করা শিখে নিন। যেমন, ফেসিয়াল রিকগনিশন কিংবা সময় ও তারিখ হিসেবে পৃথক করে রাখার টুল এ ক্ষেত্রে কাজে আসতে পারে।
যেমন আইফোনের ফটোজ অ্যাপ মানুষের মুখ শনাক্ত করতে পারে এবং সেগুরোকে 'পিপল' অ্যালবামে পৃথক করে রাখে। কোনো মানুষের নাম দিয়ে আইফোনে সার্চ করা যায়।
এছাড়া তারিখ, স্থান, অনুষ্ঠান বা ক্যাটাগরির (যেমন- সৈকত, সূর্যাস্ত অথবা খাদ্য) ভিত্তিতে ছবি খুঁজে বের করার সুযোগ দেয় আইফোন। অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলের গ্যালারি কিংবা গুগল ফটোজেও এসব সুযোগ থাকে। গুগল ফটোজে অনেক সময় পুরনো কোনো ইভেন্টের মেমোরিও আসে।
জায়গা বাঁচাতে ব্লার বা এক ধরনের কয়েকটি ছবি থাকলে সেখান থেকে একটি রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। গুগল ফটোজে মুহূর্তেই এমন ডুপ্লিকেট বা ব্লার ছবি ডিলেট করার সুযোগ আছে। ডুপ্লিকেট ছবি থেকে মুক্তি পেতে 'রেমো ডুপ্লিকেটফটোজ' নামে একটি অ্যাপও ব্যবহার করা যেতে পারে। আইফোন ব্যবহারকারীরা ফটোজ গিয়ে প্রথমে 'অ্যালবাম' এরপর 'ডুপ্লিকেট' এবং সর্বশেষ 'মার্জ' এ প্রেস করে একই সুবিধা নিতে পারেন।
ডিজিটাল ফাইল সংরক্ষণ
কম্পিউটার বা গুগল ড্রাইভ কিংবা ড্রপবক্সের মতো প্লাটফর্মে কোনো ফাইল খুঁজে পেতে ফাইলের নামকরণ গুরুত্বপূর্ণ। জেফারসন যেমন ফাইলের নাম শুরু করেন তারিখ (প্রথমে সাল, তারপর মাস ও তারিখ) দিয়ে, এরপর ফাইল সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ শব্দ লেখেন।
তিনি বলেন, আপনি যদি সন্তানের ফলাফল সেভ করে রাখতে চান তাহলে শুরুতে তার নাম এবং পরে সেমিস্টার নাম্বার লেখুন।
বিশেষজ্ঞরা একই ফোল্ডারে সব ডকুমেন্ট বা ফাইল সেভ না করে সবকিছুর জন্য পৃথক ও স্বতন্ত্র ফোল্ডার করার পরামর্শ দেন। যেমন মেডিকেল রেকর্ড, স্কুল ও অটোমোবাইল। এগুলোর জন্য পৃথক ফোল্ডার তৈরি করা। প্রয়োজনে ফোল্ডার বাড়ানো।
ব্যাকআপ প্রস্তুত রাখা
হারিয়ে যাওয়া, চুরি কিংবা হ্যাক হওয়ার আশঙ্কা থাকায় যে কোনো ফাইল ক্লাউডে ব্যাকআপ কপি রাখা কিংবা অন্য কোনে ডিভাইসে সেভ রাখা জরুরি। কিন্তু সবার জন্য পদ্ধতিগুলো মনে রাখা সহজ নয়।
সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ইসেট-এর মতে, মানুষ সবচেয়ে বেশি ভুল করে একই ডিভাইস বা কম্পিউটারে ফাইল কপি করে।
ন্যাশনাল সাইবারসিকিউরিটি ইন্সটিটিউট অব স্পেনের বিশেষজ্ঞ অ্যাঞ্জেলা জি. ভালদেস বলেন, ব্যাকআপ রাখার ভালো বিকল্প হলো ৩-২-১ নীতি। আমরা একই ফাইল দুটি ভিন্ন মাধ্যমে (একটি ক্লাউড, অপরটি ভিন্ন কম্পিউটারে) তিনটি কপি করি। তারমধ্যে একটি রাখি আমার বাড়ি কিংবা কর্মক্ষেত্র ছাড়া অন্য কোনো স্থানে থাকা ডিভাইসে। এর মাধ্যমে আমরা কোনো জরুরি ফাইলের ব্যাকআপ নিশ্চিত করি।
ই-মেইলের জন্য করণীয়
২০২২ সালে হিসেবে অনুযায়ী, প্রতিদিন প্রায় ৩৩৩.২ বিলিয়ন ই-মেইল আদান-প্রদান করা হয়। স্ট্যাটিস্টার অনুমান অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে এই সংখ্যা প্রায় ৩৭৬.৪ বিলিয়নে গিয়ে দাঁড়াবে।
প্রতিনিয়ত কারো যদি ই-মেইল আসে তাহলে 'ল্যাবেল' অপশন হতে পারে স্বস্তিদায়ক উপায়। ল্যাবেল হলো বুকমার্কের মতোই, মেসেজকে পৃথক ক্যাটাগরিতে রাখার সুযোগ দেয়। আর এই সুবিধা পেতে, স্ক্রিনের উপরের বাম কোণার ম্যানু আইকনে ক্লিক করে ল্যাবেল অপশনে যেতে হবে। যেখানে গিয়ে 'কাজ', 'ভ্রমণ', কিংবা 'ইনভয়েস'; এভাবে নানা নামে পৃথক ফোল্ডার করা যাবে। এভাবে ই-মেইলকে আদালা গ্রুপ করে নিলে খুঁজতে সুবিধা হবে।
বিশেষজ্ঞ জেফারসন এই পদ্ধতির পাশাপাশি 'সুপারহিউম্যান' নামে একটি অ্যাপ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। যেটাকে ই-মেইল ক্লিনিং অ্যাপও বলা যায়। প্রতি মাসে ৩০ ডলার দিয়ে এই অ্যাপ ব্যবহার করতে হয়। কি-বোর্ড শর্টকার্টের মাধ্যমে খুব সহজেই মেইলগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যায় অ্যাপটিতে। সিলিকন ভ্যালিতে কয়েক বছর ধরে ব্যাপক জনপ্রিয় অ্যাপটি।
অব্যবহৃত অ্যাপ ডিলেট করা
ডিজিটাল ক্লাটার এড়ানোর অন্যতম উপায় হলো মোবাইলের অপ্রয়োজনীয়, অব্যবহৃত অ্যাপ ডিলেট করা। স্টোরেজ পূর্ণ করার পাশাপাশি ব্যাটারির পারফরম্যান্স খারাপ হয় অতিরিক্ত অ্যাপ থাকলে।
হোম স্ক্রিনে গিয়ে একে একে অ্যাপগুলি ম্যানুয়ালি আনইন্সটল করা যাবে। আর এক সাথে অনেক অ্যাপ আনইন্সটল করতে অ্যান্ড্রয়ডের প্লে স্টোরের 'ম্যানেজ অ্যাপ এবং ডিভাইসেস' অপশনে যেতে হবে এবং ডিলেট করতে ইচ্ছুক সব অ্যাপ সিলেক্ট করে একসঙ্গে আনইনস্টল করা যাবে।
আর আইফোনের ক্ষেত্রে ফোন সেটিংয়ে গিয়ে 'আইফোন স্টোরেজ' অপশনে যেতে হবে। সেখান থেকে কোনটি কত জায়গা দখল করে আছে যাচাই করে সেগুলো ডিলেট করা যাবে।
অব্যবহৃত অ্যাপ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুক্তি পাওয়ার আরো একটি উপায় আছে আইফোনে। তারজন্য সেটিংস এর 'অ্যাপ স্টোর' এ যেতে হবে এবং 'আনইন্সটল আনইউজড অ্যাপ' অপশন চালু করতে হবে। অ্যাপল থেকে জানানো হয়েছে, অ্যাপ স্টোরে অ্যাপটি যতদিন আছে ততদিন পর্যন্ত রি-ইন্সটল করলে সব ডেটা ফিরে আসবে।