ধান উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয়, অথচ উৎপাদনশীলতায় পিছিয়ে বাংলাদেশ
ধান উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে তৃতীয় হলেও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির হারে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে তলানিতে রয়েছে বাংলাদেশ।
সোমবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরাম (বিএজেএফ) আয়োজিত 'বাংলাদেশের কৃষির রূপান্তর: কাজী বদরুদ্দোজার আবদান' শীর্ষক কৃষি সম্মেলনে উপস্থাপিত কী-নোট পেপারে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। কী-নোট পেপার উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ব্যবসা ও বিপণন বিভাগের অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম।
কী-নোট পেপারে বলা হয়, ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ সবচেয়ে দ্রুত গতির প্রবৃদ্ধি পেলেও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির হার মাত্র ১%। যেখানে চীনের উৎপাদনশীলতার হার ৩.৭%, ভারতের ২.৪%, থাইল্যান্ডের ও ভিয়েতনামের ১.৯%, ইন্দোনেশিয়া ও শ্রীলংকার ১.৮%, এবং নেপালের ১.৭%। প্রতিবেশি দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের 'ইল্ড গ্যাপ' অনেক বেশি থাকার কারণে উৎপাদনশীলতার প্রবৃদ্ধি কম বলে জানানো হয়।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ব্যবসা ও বিপণন বিভাগের অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, "জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের আবাদযোগ্য ৬.৭১ লাখ একর জমি রয়েছে যেটা আমরা চাষের আওতায় আনতে পারছি না। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী যখন উৎপাদন কমে যাচ্ছে তখন আমাদের নিজেদের খাদ্য উৎপাদনে বাড়তি চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। নিজেরা নিজেদের খাদ্য উৎপাদন করতে পারলে বৈশ্বিক কোন সংকট আমাদের ক্ষতি করতে পারবে না।"
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক কৃষি বিজ্ঞানী কাজী এম বদরুদ্দোজার অবদানের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, "কাজী বদরুদ্দোজা সনাতন কৃষিকে বিজ্ঞানভিত্তিক করার স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং সে কাজটি করে গেছেন। এটি ছিল বাংলাদেশের কৃষির প্রথম রূপান্তর। এখন আমাদের দ্বিতীয় রূপান্তরের চ্যালেঞ্জ নিতে হচ্ছে।"
তিনি বলেন, ধান রোপণ থেকে শুরু করে মাড়াই পর্যন্ত এখন যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ করতে হবে। একইসঙ্গে কৃষি পণ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে আধুনিক কৃষিতে রূপান্তরের কাজটিই আমাদের চ্যালেঞ্জ।
তিনি বলেন, ভালো ফলনের কারণে বাজারে চালের দাম এখন নিম্নমুখী। বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে না। এর কারণ হলো আমাদের ভালো জাত। আগে আউশে প্রতি বিঘায় ২-৩ মণ ধান হতো। সার, ভালো জাত এবং সেচের কারণে এখন বোরোতেও সবচেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হয়; প্রতি বিঘায় ২১ মণের বেশি। এটাই হচ্ছে কৃষির বড় রূপান্তর।
এসিআই এগ্রি বিজনেসের সভাপতি ড. এফ এইচ আনসারী বলেন, দেশে কৃষি গবেষণায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। উচ্চ ফলনশীল গমের দুটি জাত উদ্ভাবন, ৯৩% ভাগ হাইব্রিড ধানের জাত নিবন্ধন, ২২.৫% ড্রাইমেটার সম্পন্ন ইন্ডাস্ট্রিয়াল আলু নিবন্ধন করেছে বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা। এছাড়া ৪৫টি সবজির প্রায় ৬০০টিরও অধিক হাইব্রিড নিজস্ব গবেষণা বা আমদানি করে আনছে।
তিনি বলেন, আগামী দিনের কৃষির চ্যালেঞ্জ আছে। কারণ আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় নতুন ধরনের রোগবালাই বেড়ে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বৃষ্টিপাত ও দীর্ঘমেয়াদি শীতের প্রভাব কমে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়া, লবণাক্ততা বৃদ্ধির চ্যালেঞ্জগুলো নিতে হচ্ছে। দ্রুত 'ক্লাইমেট-স্মার্ট' ফসলের জাত উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ইল্ড গ্যাপ কমানোর মতো কাজগুলো করতে হবে।