১৫ বছরে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে ৯২%
আগামী ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত মা ইলিশ সংরক্ষণ করা হবে। এসময়ে কেউ ইলিশ ধরতে পারবে না। কেউ যাতে অবৈধভাবে ইলিশ ধরতে না পারেন সেজন্য জল, স্থল ও আকাশপথে পর্যবেক্ষণ চালানো হবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
সচিবালয়ে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী জানান, এই ২২ দিন সারা দেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয়, মজুত ও বিনিময় নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এসময় তিনি বলেন, ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে সরকার সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ায় গত ১৫ বছরে উৎপাদন ৯২ শতাংশ বেড়েছে।
তিনি বলেন, ইলিশ সম্পদের উন্নয়নে সরকার সমন্বিত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করায় ইলিশের উৎপাদন আশাতীতভাবে বেড়েছে। বিগত ২০০২-০৩ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন উদ্বেগজনকভাবে কমে ১ দশমিক ৯৯ মেট্রিক টনে পরিণত হয়েছিল।
"২০০৮-০৯ অর্থবছরে ইলিশের আহরণ ছিল ২ দশমিক ৯৮ লাখ টন। বর্তমান সরকারের গৃহীত পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় ইলিশের আহরণ বেড়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৭১ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। বিগত ১৫ বছরে ইলিশের উৎপাদন প্রায় ৯২ শতাংশ বেড়েছে।"
মন্ত্রী বলেন, ইলিশ সংরক্ষণের সময় যারা আইন মানবে না তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালত চালানোর পাশাপাশি মামলা দেওয়া হবে। বিভিন্ন মোহনায়ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরা কর্মকর্তারা নিয়োজিত থাকবেন।
মন্ত্রী বলেন, যারা ইলিশ আহরণ থেকে বিরত থাকেন, তাহের ভিজিএফ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এই সহায়তা উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২২ সালে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানের আওতায় ২ হাজার ৬২টি ভ্রাম্যমাণ আদালত, ১০ হাজার ৮২১টি অভিযান পরিচালনা করে ৩১ দশমিক ৪১ মেট্রিক টন ইলিশ, ৯১৯ দশমিক ৮৫ লাখ মিটার নিষিদ্ধ জাল জব্দ এবং ২ হাজার ৯০৮টি মামলা দায়েরের মাধ্যমে ২ হাজার ১০৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে জেল ও ৪৭ দশমিক ৩২ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এছাড়া জব্দকৃত মালামাল নিলামে বিক্রি করে ২২ দশমিক ১১ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়েছে।
মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান সফলভাবে বাস্তবায়িত হওয়ায় গত বছর ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধকরণের ২২ দিনে প্রায় ৫২ শতাংশ মা ইলিশ ডিম ছাড়তে সক্ষম হয়েছে। ফলে গত বছর প্রায় ৮ লাখ ৫ হাজার ৫১৫ কেজি ডিম উৎপাদিত হয়েছে যা থেকে প্রায় ৪০ হাজার ২৭৬ কোটি জাটকা ইলিশ যুক্ত হয়েছে।
রেজাউল করিম বলেন, "ইলিশ এখন শুধু আমাদের জাতীয় সম্পদই নয়, ইলিশ এখন কূটনীতির অংশে পরিণত হয়েছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে দুর্গাপূজায় সীমিত পরিসরে ইলিশ রপ্তানি হয়ে থাকে; যা প্রতিবেশী দেশের কাছে আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে এবং দুই দেশের বাণিজ্যিকসহ কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
২০১৯-২০ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত ৫ হাজার ৫৪১ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রপ্তানি করা হয়েছে, যা মোট ইলিশ উৎপাদনের মাত্র দশমিক ৫ ভাগেরও কম; যা থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৪৩৯ হাজার কোটি টাকা।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৩ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এরমধ্যে গত ১০ অক্টোবর ৬০৯ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রপ্তানি হয়েছে, যা থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৬৮ কোটি ২০ লাখ টাকা।
ভারতে প্রতি কেজি ইলিশের রপ্তানি মূল্য ১১০০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও দেশের বাজারে দাম বেশি। ইলিশের দাম কমাতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া যায় কিনা, এ প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, "আমরা উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত, সেখানে আমাদের কোনো ব্যর্থতা আছে বলে মনে করি না।"