এপ্রিল-জুনে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২,০৯৭ কোটি টাকা
গ্রাহকের ঋণ পরিশোধের বিশেষ ছাড়া তুলে নেওয়া ও অর্থনৈতিক মন্থরতার কারণে এপ্রিল-জুন সময়ে বিতরণের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেড়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিপোর্ট বলছে, চলতি বছরের এপ্রিল-জুন সময়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ বিতরণ হয়েছে ৮৮৫ কোটি টাকা। অথচ একই সময়ে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২০৯১ কোটি টাকা।
চলতি বছরের মার্চ শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭২,১৫০ কোটি টাকা এরমধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৯,৯৫১ কোটি টাকা যা মোট ঋণের ২৭.৬৫%।
গত বছরের জুনে মোট ঋণের ২২.৯৬% ছিল খেলাপি ঋণ; এবং একই বছরের ডিসেম্বরে মোট ঋণের ২৩.৮৮% ছিল খেলাপি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪০১৫ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, বেশ কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তহবিল সংকটসহ নানা কারণে ঋণ তেমন বাড়ছে না। এছাড়া এপ্রিল থেকে ঋণ পরিশোধের বিশেষ ছাড় তুলে নেওয়ায় হঠাৎ করে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ব্যপকহারে বেড়ে গেছে।
তিনি বলেন, বিশেষ করে তহবিল সংকট মোকাবিলায় খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধার বাড়ানোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
আভিভা ফাইন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল জব্বার টিবিএসকে বলেন, "গ্রাহকরা প্রায় ৩ বছর ঋণ পরিশোধে বিশেষ ছাড় পেয়েছে। এখন এ সুবিধা উঠে যাওয়ায় খেলাপি ঋণ বাড়ছে।"
তিনি আরও বলেন, "অনেক প্রতিষ্ঠান খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন করে রেখেছে। এখন প্রকৃত অবস্থা দেখাতে হচ্ছে।"
ঋণ বিতরণ কম হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, "নির্বাচনকে সামনে রেখে অনেকে বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে না যার কারণে ঋণের গতি কম।"
আরেকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিবিএসকে বলেন, "কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান এমন কাগজে গ্রাহককে ঋণ দিয়েছে যেগুলো পাওয়া সম্ভব নয়। দীর্ঘদিন এগুলো গোপন রাখছে তারা।"
"এখন আইএমএফ এর শর্তের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মনিটরিং জোরদার হচ্ছে যার কারণে খেলাপি ঋণের পরিমাণটা বেড়ে গেছে," বলেন তিনি,
তিনি আরও বলেন, কিছু ব্যাংক মার্কেটে বন্ড ছেড়ে ১২% সুদ দিচ্ছে। যদিও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সর্বোচ্চ আমানতের সুদ দিতে পারবে ১০% এর মতো। এভাবে ব্যাংকগুলো উচ্চ রেট দেওয়ায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আমানত পাচ্ছে না; যার কারণেও তারল্য সংকটে রয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর।
করোনা ও এরপর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে ব্যাংকের ন্যয় ২০২০ এর মার্চ থেকে ২০২৩ এর মার্চ পর্যন্ত তিন বছর যাবৎ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকরাও ঋণ পরিশোধে নানা ধরনের সুবিধা পেয়েছেন।
দেশের ব্যাংকিং খাতে এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ২৪,৪১৮ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুন মাসে ব্যাংকিং খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১,৫৬,০৩৯ কোটি টাকা, যা ছিল মোট বকেয়া ঋণের ১০.১১%।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কায়সার হামিদ বলেন, "ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে মোট ঋণ ও খেলাপি ঋণের অনুপাত ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষদিকে বেড়েছে মূলত ব্যবসায়িক কার্যক্রম কমে যাওয়ায় এবং ঋণ পরিশোধে শিথিলতা প্রত্যাহারের কারণে।"