চামড়া শিল্পে এলডব্লিউজি সনদের জন্য সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ ব্যবসায়ীদের
বিশ্বের বড় বড় ব্র্যান্ডগুলোতে চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির সুবিধার্থে দেশের চামড়া শিল্পের ব্যাবসায়ীরা কারখানাগুলোতে লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ (এলডব্লিউজি) সার্টিফিকেশন নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সরকারকে এ সংক্রান্ত উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
ঢাকায় চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্পের ৩ দিনের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে আসা দেশের ফুটওয়্যার কোম্পানিগুলো এমন দাবি জানিয়েছেন।
লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে।
বিশ্বের বড় ব্র্যান্ডগুলোর কাছে ভালো দামে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য বিক্রি করতে হলে চামড়া খাতের বৈশ্বিক সংস্থা লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ থাকতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশে মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠানের এলডব্লিউজি সনদ রয়েছে।
ফলে বাংলাদেশ মূলত এমন বাজারে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে, যেখানে ব্র্যান্ড মূল্য নেই। এ কারণে দেশের রপ্তানিকারকেরা পণ্যের দাম কম পান।
বাংলাদেশ শো সিটি লিমিটেডের প্রকল্প পরিচালক সঞ্জয় সাহা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "দেশে মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠানের এলডব্লিউজি সার্টিফিকেট আছে। অনেক সময় তাদের কাছে ফিনিশ চামড়া পাই না। তাই আমাদের দেশের বাইরের এলডব্লিউজি সার্টিফাই প্রতিষ্ঠান থেকে চামড়া কিনতে হয়। প্রতি বছর ৫ থেকে ১০ লাখ স্কয়ারফিট চামড়া আমাদানি করতে হয় আমাদের।"
তিনি বলেন, "ক্রেতারা আমাদের তৈরি করা পণ্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দিয়ে পরীক্ষা করে নেয়। তারা কোনো ক্ষতিকর উপাদান পেলে ক্রয় বাতিল করে দেয়। তাই আমরা দেশের বাইরে থেকে এলডব্লিউজি সার্টিফাই প্রতিষ্ঠানের ফিনিশ চামড়া কিনে নিয়ে আসি।"
তিনি আরও বলেন, "সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে যে রাসায়নিক ব্যবহার করার কথা তা ব্যবহার করা হয় না। ফলে তারা এলডব্লিউজি সার্টিফিকেট পাচ্ছে না। সেখানে যে কঠিন বর্জ্য ফেলা হচ্ছে এবং যে রাসায়নিক ব্যবহার করা হচ্ছে তা পরিবেশবান্ধব নয়।"
এসডিএস প্রতিষ্ঠানটি ক্রেতাদের চাহিদা মতো পণ্যর মান পরীক্ষা করে। এই প্রতিষ্ঠানের ডেপুটি ম্যানেজার এবং হেড অব মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস মো. ইমরান হোসেন বলেন, "পরিবেশগত দিক দিয়ে এলডব্লিউজি দেখতে চান ক্রেতারা। বিদেশি বায়ারা দেখতে চান পরিবেশ কতটা সুরক্ষার মাধ্যমে আমরা আমাদের রিকোয়ারমেন্ট ফুলফিল করতে পারছি। লেদারের কেমিক্যাল আমরা কতটা পরিবেশ দুষণমুক্ত রাখতে পারছি। বায়ারদের একটি গাইডলাইন থাকে তাদের পণ্য তৈরির বিষয়ে।"
"তারা এলডব্লিউজি সার্টিফাই কারখানা থেকে পণ্য নিতে বলে। আমাদের দেশে এমন কারখানা কম থাকায় অনেক কারখানা বিদেশ থেকে চামড়া আমদানি করে সেই চামড়া দিয়ে পণ্য বানিয়ে রপ্তানি করে। রপ্তানির জন্য আমরা অনেকটাই দেশের বাইরের চামড়ার ওপর নির্ভরশীল," বলেন তিনি
বে গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউর রহমান টিবিএসকে বলেন, "আমরা চাই চামড়া শিল্পনগরী দ্রুত যেন এলডব্লিউজি সার্টিফিকেট পায়। এ সার্টিফিকেট পেলে সকলেই উপকৃত হবে। সেইসঙ্গে বড় প্রতিষ্ঠান এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) তৈরি করলে এর সক্ষমতা আরও বাড়বে।"
সবাই মিলে কাজ করলে আগামী ২০৩০ সালে ১০ বিলিয়ন ডলারের চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির যে লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে, তা অর্জন সম্ভব হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলাদেশে এখন ১.৭ বিলিয়ন ডলার চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে।
এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং লেদার-গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, "আমরা যাতে রপ্তানিযোগ্য পণ্য তৈরিতে আমাদের দেশীয় চামড়া ব্যবহার করতে পারি, তার জন্য নিশ্চিত করতে হবে সাভারের চামড়া শিল্পগনরীর সিইটিপি তথা কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার আন্তর্জাতিক কমপ্লায়েন্স মানদণ্ড অনুসারে সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা। ইতোমধ্যে একটি টাস্ক ফোর্স সাভার সিইটিপি মূল্যায়ন এবং পুনরুদ্ধার (রেট্রোফিট) করার জন্য উন্নত দেশগুলো থেকে বিশ্বমানের, প্রমাণিত সিইটিপি প্রযুক্তি সরবরাহকারী নির্বাচন করতে কাজ করছে, যাতে এটি স্বল্পতম সময়ে এলডব্লিউজি গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড অর্জন করতে পারে।"
তিনি বলেন, "ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট এবং জাপানসহ সকল উন্নত দেশসমূহ স্বচ্ছ এবং টেকসই সরবরাহ চেইনকে এরজন্য উচ্চ স্তরের কমপ্লায়েন্স তথা সাপ্লাই চেইন সিকিউরিটি অডিট, ডিউ ডিলিজেন্স অডিট, ইউ.এস. কনজিউমার প্রোডাক্ট সেফটি কমিশন (সিপিএসসি) লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ সার্টিফিকেশনের বাস্তবায়ন প্রয়োজন। দেশে এ ধরনের টেকসই সক্ষমতা গড়ে তোলার জন্য আমরা ইইউ, জাপান, এডিবি এবং বিশ্বব্যাংক গ্রুপের মতো আমাদের উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে কাজ করতে পারি।"