আবারও দুর্বল হলো টাকা
স্থানীয় বাজার হারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির রেট ০.৫০ টাকা বাড়িয়ে ১১১ টাকা করেছে।
এ নিয়ে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত ষষ্ঠবারের মতো ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হলো। এই সামঞ্জস্যের চেষ্টা সত্ত্বেও, বাজার ও আন্তঃব্যাংক হারের মধ্যে পার্থক্য রয়ে গেছে। ফলে স্থিতিশীলতা আনতে মুদ্রা বাজারে সক্রিয়ভাবে হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
জুলাইয়ের শুরুতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বিক্রি করেছে ১০৮ টাকা ৭০ পয়সা দরে। সেই হিসাব অনুযায়ী, গত চার মাসে টাকার মান কমেছে ২.১২ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর আগে বলেছিল, রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির ক্ষেত্রে আন্তঃব্যাংক রেট অনুসরণ করতে হবে। তবে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তিন ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বুধবার (১ নভেম্বর) ডলার বিক্রির ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো আমদানি নিষ্পত্তির হার অনুসরণ করেছে।
সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ১১১ টাকায় ডলার বিক্রি করতে পারবে। তবে, আন্তঃব্যাংক ডলার বিক্রির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১১৪ টাকা পর্যন্ত দেওয়া যাবে।
মঙ্গলবার অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) এবং বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) মধ্যে এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়।
বাজারে হস্তক্ষেপেরের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের রিজার্ভ থেকে প্রতিদিন গড়ে ৭০ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করছে। সংকটের কারণে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ করতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি হয়েছে ৩.৭৫ বিলিয়ন। কেবল অক্টোবরেই রিজার্ভ থেকে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে আর্থিক বাজারের এই নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান। এর আগে, ২০২৩ অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে মোট ১৩.৫৮ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, রিজার্ভ থেকে পাওয়া ডলার জ্বালানি, সার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ আমদানি পণ্যের লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) পরিশোধে ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, রিজার্ভ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংককে যে সহায়তা দিচ্ছে, তা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর এলসি খোলার সক্ষমতা বাড়ায়।
গত বছরের সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণ করেছিল ৯৫ টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে ডলারের দাম প্রায় ১৬ শতাংশ বেড়ে ১১০ টাকা হয়েছে।
জুলাইয়ের শুরু থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক আলাদাভাবে ডলারের দাম ঘোষণা করেনি। রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আন্তঃব্যাংক বাজারের ডলার রেটই অনুসরণ করে আসছিল। ফলে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে টাকার অবমূল্যায়ন হয় সর্বোচ্চ ২.৮৫ টাকা। এরপর থেকে আন্তঃব্যাংক ডলার রেট অনুযায়ী রিজার্ভের ডলারের বিক্রয়মূল্য বাড়িয়ে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একটি ব্যাংকের এক ট্রেজারি কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, "ডলার সংকটের কারণে, আমরা ঠিকভাবে সরকারি এলসি পেমেন্ট করতে পারছি না... আমাদের হাতে পর্যাপ্ত ডলার না থাকায় অনেক পেমেন্ট পিছিয়ে দিতে হয়েছে। চাহিদা মেটাতে বুধবার আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি চেয়েছিলাম। কিন্তু এর ৫ শতাংশও আমরা পাইনি। অন্য ব্যাংক থেকেও ডলার পাওয়া যাচ্ছে না, কারণ তারাও সংকটে ভুগছে।"
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাবেক অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেন, অল্প অল্প করে ডলারের দাম বাড়িয়ে সংকট কমাতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত ডলারের মূল্য বাজারভিত্তিক করা।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, আগামী সোমবার সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সময়ের আমদানি বাবদ এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নকে (আকু) ১.২১ বিলিয়ন ডলার বিল পরিশোধ করতে হবে। এই বিল পরিশোধের পর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নেমে আসবে ১৯.২৯ বিলিয়ন ডলারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য থেকে জানা যায়, বিপিএমসিক্স অনুসারে গত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে ২০.৫০ বিলিয়ন ডলার।