বঙ্গবন্ধু টানেলের ভেতর যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় প্রাইভেট কার বিধ্বস্ত
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের ভেতরে একটি প্রাইভেট কারকে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়েছে যাত্রীবাহী বাস। প্রাইভেট কারটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। টানেলের ভেতরে ডেকোরেটিব বোর্ড ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
শুক্রবার (৩ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নগরীর পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে আনোয়ার প্রান্তে যাওয়ার পর দুর্ঘটনাটি ঘটে। পরে টানেল কর্তৃপক্ষ গাড়ি দুটিকে সরিয়ে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে। এটি টানেলের ভেতরে দ্বিতীয় দুর্ঘটনা।
টানেল প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "টানেলের ভেতরে প্রতি ১০০ মিটারে ৪ মিটার করে নিচের দিকে নেমেছে। এজন্য চলাচলকারী যানবাহনগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ৬০ কিলোমিটার বেগে চলতে। কিন্তু তারা নির্দেশনা না মানায় দুর্ঘটনা হচ্ছে। যানবাহনের গতি পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনা অমান্যকারীদের শনাক্ত করতে স্পিড ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।"
টানেল পরিচালনাকারী সংস্থা সিসিসিসি-এর সহকারী ব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা) মো. জাহাঙ্গীর আলম টিবিএসকে বলেন, "দুর্ঘটনার পরপরই দ্রুত গাড়ি দুটি সরানো হয়েছে। গাড়িগুলো হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জহির হোসেন টিবিএসকে বলেন, "দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমাদের মোবাইল টিম সেখানে গিয়েছে। গাড়িগুলো টোল প্লাজায় রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
১০ হাজার ৬৮৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে তলদেশে নির্মিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম সড়ক টানেলটি গত ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। পরদিন ২৯ অক্টোবর সকাল ৬টা থেকে যান চলাচলের জন্য তা উন্মুক্ত করা হয়।
চালুর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৩০ অক্টোবর রাত ৩টার দিকে একটি প্রাডো গাড়ি উচ্চগতির কারণে টানেলের টোল প্লাজায় ধাক্কা দিলে রেলিং কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর মূল টানেলের বাইরের সড়কে রেসিং কারকে স্টান্ট (গেম বিশেষ: যেখানে গাড়ি শূন্যে উঠে পড়ে) করতে এবং টানেলের ভেতরে বেপরোয়া গাড়ি চালানোর ভিডিও ভাইরাল হয়।
একইদিন বিকালে টানেলের ভেতরে গাড়ি থামিয়ে সেলফি তুলতে দেখা গেছে সাতকানিয়ার এক জনপ্রতিনিধি ও এক ছাত্রলীগ নেতাকে। অথচ টানেলে গাড়ি থামানো এবং গাড়ি থেকে নামা সম্পূর্ণ নিষেধ।
আবার, গত ৩১ অক্টোবর বিকালে একটি প্রাইভেট কারকে একটি মিনি বাস পেছন থেকে ধাক্কা দেওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে টানেল কর্তৃপক্ষের গৃহীত ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। টানেলে কর্তৃপক্ষ প্রাডো গাড়িটি থেকে জরিমানা আদায় করেছে। এছাড়া টানেলের ভেতরে স্পিড ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রেসিং কার চালকদের বিরুদ্ধে একটি মামলাও করা হয়েছে।
টানেল কর্তৃপক্ষ ও রক্ষণাবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান পরামর্শক্রমে মোটরযানের গতিসীমা সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার নির্ধারণ করেন। এ বিষয়ে টানেলের প্রবেশ মুখ, ভেতরসহ বিভিন্ন দৃশ্যমান স্থানে গতিসীমা সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটারের সাইনবোর্ড সাঁটানো হয়। এছাড়া মাইকিং করা হয়। এরপরও নির্দেশনা অমান্য করছেন চালকেরা।
এদিকে টানেলটি উদ্বোধনের পর থেকে বিএনপি-জামায়াতের ডাকে দেশব্যাপী হরতাল-অবরোধ চলছিল। গত ২৯ অক্টোবর টানেলে বাণিজ্যিকভাবে যান চলাচল করলেও হরতাল-অবরোধের কারণে তেমন গাড়ি চলাচল করেনি।
হরতাল-অবরোধহীন প্রথম দিন শুক্রবার (৩ নভেম্বর) ছিল সাপ্তাহিক ছুটির দিনও। এজন্য সকাল থেকে টানেলে চলাচলকারী যানবাহনের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ভ্রমণে আসতে শুরু করেন মানুষ। ফলে যানজট লেগে যায় টানেল ও অ্যাপ্রোচ সড়কে।
টানেল পরিচালনাকারী সংস্থা সিসিসিসি-এর টোল ব্যবস্থাপক মো. বেলায়েত হোসেন টিবিএসকে বলেন, "সকাল থেকে প্রচুর যানবাহন পার হয়েছে টানেলের দুইপ্রান্ত দিয়েই। ফলে যানজট লেগে গেছে। টানেল চালু হওয়ার পর আজই পুরোদমে গাড়ি চলেছে। এটি আমাদের জন্য অভিজ্ঞতার বিষয়।"
এখন পর্যন্ত গাড়ি পারাপারের হিসাব করা হয়নি বলে জানান তিনি।