যেভাবে ভারতবর্ষে ট্রেনে এলো টয়লেট ব্যবস্থা
ভারতে প্রথম যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয় ১৮৫৩ সালে। আমরা এখন ট্রেনে যে টয়লেট ব্যবস্থা দেখি প্রথমদিকে সেটি ছিল না। ভারতে ট্রেন চলাচল শুরুর ৫০ বছরেরও বেশি সময় পর এই টয়লেট ব্যবস্থার সংযোজন করা হয়।
ট্রেনে কীভাবে এই টয়লেট ব্যবস্থা চালু হলো তা নিয়ে রয়েছে বিচিত্র এক গল্প। আর এ গল্পটি ভারতের অখিল চন্দ্র সেন নামে এক সাধারণ ট্রেন যাত্রীর।
সময়টা ১৯০৯ সালের ২ জুলাই। অখিল চন্দ্র সেন ট্রেনে টয়লেট ব্যবস্থা স্থাপনের জন্য অনুরোধ জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গের শিবগঞ্জ বিভাগীয় কার্যালয়ের উদ্দেশে একটি চিঠি লিখেন। তার লেখা এ চিঠিটি ছিল চরম যন্ত্রণায় ভরা, যে যন্ত্রণা কেবল তিনি নিজেই অনুভব করতে পেরেছিলেন।
অখিল চন্দ্র সেনের চিঠির লেখাটি ছিল আরো বেশি রসাত্মক। চিঠিতে তিনি লিখেছেন- "আমি ট্রেনে করে যাত্রার জন্য আহমেদপুর স্টেশনে আসি। কাঁঠাল খেয়ে আমার পেট অনেক ফেঁপে ছিল। তাই আমি প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারতে গিয়েছিলাম। ঠিক তখনই স্টেশনের গার্ড ট্রেনের ছাড়ার জন্য হুইসেল বাজায়। ট্রেনও চলতে শুরু করে। উপায় না পেয়ে আমি তখন ট্রেন ধরার জন্য এক হাতে লোটা (পানির পাত্র), আরেক হাতে পরনের ধুতি আঁকড়ে ধরে দৌড়াতে শুরু করি। একপর্যায়ে আমি হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাই। তখন প্ল্যাটফর্মে উপস্থিত নারী-পুরুষের সামনে আমার সবকিছু উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। লজ্জায় আমি আহমেদপুর স্টেশন থেকে চলে যাই।"
চিঠির শেষ অংশে তিনি লিখেন- "এটি খুবই খারাপ। যদি যাত্রী তার প্রাকৃতিক প্রয়োজন মেটাতে যায়, তাহলে কী স্টেশনের গার্ড সেই যাত্রীর জন্য ট্রেন পাঁচ মিনিট দাঁড় করিয়ে রাখবে না? আমি তাই জনসাধারণের স্বার্থে সেই গার্ডকে মোটা অঙ্কের অর্থ জরিমানা করার জন্য আপনার কাছে বিনীত প্রার্থনা জানাই। অন্যথায় আমি খবরের কাগজে বড় অভিযোগ দিব।"
অখিল চন্দ্র সেনের এ চিঠিটি পাওয়ার পর বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা শুরু করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এরপর তারা সে সময় ৫০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে চলাচলকারী ট্রেনগুলোর নিম্নশ্রেণির সব বগিতে টয়লেট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়।
সে সময় ব্রিটিশ শাসনের অধীনে ছিল ভারত। সম্ভবত চিঠিটি কোনো ইংরেজ ব্যক্তি পড়েছিলেন এবং তিনি অখিল চন্দ্র সেনের অভিপ্রায় বুঝতে পেরেছিলেন।
ইংরেজি ভাষায় লেখা এ চিঠিটিতে যদিও ব্যাকরণগত নানা অসঙ্গতি ছিল, তারপরেও এই চিঠি ভারতীয় রেলওয়ের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ একটি নথি হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অবস্থিত রেল মিউজিয়ামে এই চিঠি আজও সংরক্ষিত আছে।