‘কৃষ্ণাঙ্গ হওয়াই ছিল তার একমাত্র অপরাধ’- জর্জ ফ্লয়েডের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে বক্তারা
যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়াপোলিশ শহরে শ্বেতাঙ্গ পুলিশের নির্যাতনে মৃত জর্জ ফ্লয়েডের শেষকৃত্য সম্পন্ন করেছে তার পরিবার। গতকাল মঙ্গলবার টেক্সাসের হিউস্টন রাজ্যের একটি চার্চে শেষকৃত্যানুষ্ঠানের পর পোর্টল্যান্ডের একটি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। ফ্লয়েডের কবর হয়েছে তার মায়ের পাশেই। যে মাকে তিনি মৃত্যুর সময় বারবার ডেকেছিলেন আকুল স্বরে।
ফ্লয়েডের অন্ত্যষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠানে যোগ দেন হাজার হাজার শোকার্ত মানুষ, তার পরিবারের সদস্য এবং অধিকার কর্মী। একজন পিতা, ভাই এবং ক্রীড়াবিদ হিসেবে ফ্লয়েডকে সম্মান জানিয়ে তার জীবনকে স্মরণ করেছেন তারা।
ফ্লয়েডের ভাই রডনি বলেন, হিউস্টনের থার্ড ওয়ার্ড এলাকায় কুনে হোমস নামে গরিবদের জন্য তৈরি সরকারি এক আবাসন স্থাপনায় ফ্লয়েডের জন্ম। সে অসাধারণ কিছু করার সুযোগ পায়নি। কিন্তু এখন সারা বিশ্ব তাকে মনে রাখবে। ফ্লয়েড বিশ্বকে বদলে দিতে চলেছে।
এদিকে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুতে শোক পালন করে হিউস্টনের সকল রেডিও স্টেশন কয়েক মিনিট নীরবতা পালন করে। জনপ্রতিনিধি এবং নগর কর্তৃপক্ষও তার স্মরণে সামাজিক গণমাধ্যমে শোকবার্তা পোস্ট করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য শহরেও শোক পালন করা হয়। নিউইয়র্ক পুঁজিবাজারে স্টক ট্রেডাররা ৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড সময়জুড়ে সকল লেনদেন বন্ধ হাঁটু গেড়ে বসে রেখে নীরবতা পালন করেন। ঠিক এতটুকু সময়ের মধ্যেই গত ২৫মে মিনিয়াপোলিস পুলিশ সদস্য ডেরেক শভিন গলার ওপর হাঁটু গেড়ে বসে হত্যা করে জর্জ ফ্লয়েডকে।
এই হত্যাকাণ্ড ভিডিও করেন এক প্রত্যক্ষদর্শী নারী। পরবর্তীতে সেই ভিডিওটি ভাইরাল হলে, তাতে আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী। পুরো বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ এই নিষ্ঠুর হত্যার ভিডিও দেখেছে, সেখানে দমবন্ধ হয়ে আসা ফ্লয়েড বারবার বলছিলেন, আই কান্ট ব্রিদ।
ফ্লয়েডকে স্মরণ করে তার ভাগ্নি ব্রোক উইলিয়ামস বলেন, আত্মিক শক্তির বলে বলীয়ান আমার প্রয়াত চাচা বরাবরই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছিলেন। তার কথা মানুষের অন্তরে সাড়া ফেলত। আমার নাম ব্রোক উইলিয়ামস, আর আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি। তবে যতক্ষণ আমি নিঃশ্বাস নিতে পারব, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য তা ব্যয় করব।
'আফ্রিকান-আমেরিকানদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। এই আইন ও ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করতেই হবে' যোগ করেন তিনি।
চার্চের রেভারেন্ড আল শার্পটন বলেন, যতক্ষণ না হত্যাকারীদের বিচারের সম্মুখীন হওয়া নিশ্চিত হবে, ততদিন জর্জ ফ্লয়েডের মতো (কৃষ্ণাঙ্গ) মানুষদের জীবনের কোনো মূল্যই নেই এদেশে। তবে আমি পুরো পৃথিবীতে দেখেছি কিভাবে দাস ব্যবসায়ীদের পরবর্তী প্রজন্ম তাদের মূর্তি ভেঙ্গে ফেলছে। আমি আশাবাদী এই প্রজন্মের হাতেই যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদ হেরে যাবে।
জর্জ ফ্লয়েডের শেষকৃত্যের অনুষ্ঠান চলাকালে তাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে চার্চের বাইরে 'আই কান্ট ব্রিদ' এবং ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার' লেখা টিশার্ট পড়ে জড়ো হন অসংখ্য মানুষ।
তাদেরই একজন ৩৫ বছরের যুবক সাভান্ট মুর। তিনি বলেন, যেভাবে তার জীবন কেড়ে নেওয়া হয়েছে, সেভাবে যেন আর কারও জীবন কেড়ে না নেওয়া হয়- তা এখন আমাদেরই নিশ্চিত করতে হবে।'