যে বীরত্ব গাঁথা ব্যাটসম্যান কামিন্সের
প্যাট কামিন্স, অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। দলের বোলিং আক্রমণের অন্যতম বড় ভরসাও বটে। বল হাতেই ম্যাচ জেতানোর কথা তার, কিন্তু ২০২৩ সাল জুড়ে কামিন্স যত ম্যাচ অস্ট্রেলিয়াকে জিতিয়েছেন, তার সবই যে ব্যাট হাতে!
বোলার কামিন্সের ব্যাটসম্যান হয়ে অজিদেরকে ম্যাচ জেতানোর শুরুটা অ্যাশেজ থেকে। ইংল্যান্ডের মাটিতে হওয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় এই প্রতিদ্বন্দ্বীতার প্রথম টেস্টে স্বাগতিকদেরকে দুই উইকেটে হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। রুদ্ধশ্বাস সেই ম্যাচে চতুর্থ ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার সামনে লক্ষ্য ছিলো ২৮১ রান। ২০০৫ সালেও এই এজবাস্টনেই ২৮২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত দুই রানে হেরেছিল অজিরা।
ইতিহাস তারই পুনরাবৃত্তি করার ইঙ্গিত দিচ্ছিল, অস্ট্রেলিয়া নিজেদের অষ্টম উইকেট হারায় ২২৭ রানে। সেখান থেকে নাথান লায়নকে নিয়ে দক্ষ নাবিকের মতো দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন ক্যাপ্টেন কামিন্স। ৭৩ বলে ৪৪ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। সেই জয় অস্ট্রেলিয়াকে অ্যাশেজ ধরে রাখতে পরবর্তীতে সাহায্য করে।
২০২৩ বিশ্বকাপে তো ব্যাটসম্যান কামিন্সের অন্য এক রূপই দেখতে পাওয়া গেছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল কেড়ে নিয়েছেন সব আলো। তর্কসাপেক্ষে ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ইনিংসটি খেলেছেন ম্যাক্সি, কিন্তু সেটি পাশে কামিন্স ছিলেন বলেই সম্ভব হয়েছে। অষ্টম উইকেটে দুজনের ২০২ রানের জুটিতে কামিন্সের অবদান ছিলো ৬৮ বলে ১২ রান। কিন্তু ক্রিকেট দেখা দর্শক মাত্রই জানেন, সেই ৬৮ বল আর ১২ রানের মাহাত্ম্য আসলে কত বড়।
বিশ্বকাপেরই প্রথম পর্বে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টানটান উত্তেজনার ম্যাচে পাঁচ রানে জেতে অস্ট্রেলিয়া। ৩৮৮ করেও মাত্র পাঁচ রানে জেতা মানে গুলি কানের পাশ দিয়েই যাওয়া। কিন্তু অজিদের সংগ্রহ ৩৮৮ তে পৌঁছে দেওয়ার পেছনের কৃতিত্বও যে ব্যাটসম্যান কামিন্সের। ইনিংসের শেষের দিকে তার ১৪ বলে ৩৭ রানের ঝড়ো ইনিংসই তো শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দিয়েছে সেই ম্যাচে।
আর আজ সেমি-ফাইনালে ইডেন গার্ডেনে খেলেছেন ২৯ বলে ১৪ রানের ছোট কিন্তু মহাগুরুত্বপূর্ণ এক ইনিংস। দক্ষিণ আফ্রিকার দেওয়া মাত্র ২১৩ রানের লক্ষ্য পেরোতেও ঘাম ছুটে গেছে অস্ট্রেলিয়ার। কামিন্স যখন ক্রিজে আসেন তখনও ৬১ বলে ২০ রান দরকার অজিদের। হাতে আছে তিন উইকেট, আগুনের গোলা ছুঁড়ছিলেন জেরাল্ড কোয়েটজা, যা যে কোনো সময় অঘটন ঘটিয়ে দিতেই পারতো।
সেখান থেকে ধীরস্থিরভাবে নিজের কাঁধে দায়িত্ব তুলে নিলেন কামিন্স। তিনি যে দলের নেতা, তাকে তো বিপদে এগিয়ে আসতেই হবে। লক্ষ্যে অবিচল থেকে, কোনো ধরনের প্ররোচনায় প্রভাবিত না হয়ে, কোনো ফাঁদে পা না দিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে বের করে আনলেন চাপের ভেতর থেকে। সেই ২০ রানের ১৪ রানই করলেন কামিন্স। অস্ট্রেলিয়াও নিশ্চিত করল আরেকটি বিশ্বকা ফাইনাল।
১৯ নভেম্বর আহমেদাবাদে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ উঁচিয়ে ধরতে পারলে পরিপূর্ণ হবে অধিনায়ক কামিন্সের ক্যারিয়ার। ২০১৫ বিশ্বকাপ জিতেছেন ঘরের মাঠে, তবে অধিনায়ক হিসেবে ভারতকে তাদেরই মাটিতে হারিয়ে জেতার অনুভূতিটাই যে অন্যরকম। সেটি কামিন্স নিশ্চয়ই পেতে চাইবেন।
তবে নিজের ব্যাটসম্যান সত্ত্বা যতোই জেগে উঠুক না কেন, কামিন্স নিশ্চিতভাবেই ফাইনালে ব্যাট হাতে না নামতে হলেই বেশি খুশি হবেন। নিজের আসল কাজ বোলিংয়েই সেদিন কামিন্সকে বেশি দরকার অস্ট্রেলিয়ার। আর ব্যাট হাতে যদি প্রয়োজন পড়েও, কামিন্স তো দেখিয়েছেনই, তিনি পারেন।