সায়েন্স ফিকশন ক্যাফে! টেবিলে ক্লিক করলেই হাজির খাবার!
রেস্টুরেন্ট বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সারি সারি করে সাজানো টেবিল-চেয়ারের দৃশ্য। সাথে থাকে ধোঁয়া ওঠা গরম গরম খাবার কিংবা পছন্দের পানীয়। একপাশে হয়তো ছবি তোলার জন্য থাকে দোলনা, আনুষঙ্গিক শিল্পকর্ম বা দেয়ালে ঝোলানো ছবি। আপাতদৃষ্টিতে নগরীর সিংহভাগ রেস্তোরাঁ দর্শন মোটামুটি একই রকমের। চিরায়ত দর্শনের বাইরে যদি নতুন কিছু সামনে আসে তাহলে কেমন হয়? যেমন ধরুন, যে টেবিলে খেতে বসলেন সেই টেবিলটিই একটি স্ক্রিন। যে স্ক্রিনে স্পর্শ করেই দেয়া যাবে খাবারের অর্ডার। শুধু অর্ডার দেওয়াই নয়, টেবিলরূপী স্ক্রিনে থাকবে একাধিক গেম খেলার সুযোগ।
নাহ, অন্য কোনো দেশে নয়; ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে খোদ বাংলাদেশেই রেস্টুরেন্ট শিল্পে নতুন ধারা চালু করেছে 'উইনবিজ'। যেখানে খাবার টেবিলগুলো নিছকই সাদামাটা কোনো টেবিল নয়। বরং টেবিলের একেকটি ক্লিকে লুকিয়ে আছে বিনোদনের অফুরন্ত ভাণ্ডার। টেবিলের স্ক্রিনেই দেখা যাবে খাবারের মেন্যু। আর তাতে ক্লিক করে অর্ডার দেওয়া যাবে খাবার। পাশাপাশি বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে টেবিলেই রয়েছে এয়ার হকি, পাজল সহ বিভিন্ন গেমের ব্যবস্থা। কেউ যদি ছবি আঁকতে চান, টেবিলেই আঁকিবুকির মাধ্যমে পাওয়া যাবে সেই আনন্দ।
শুরুর গল্প...
রাজধানীর খিলগাঁওয়ে ভিন্নধর্মী ক্যাজুয়াল রেস্টুরেন্ট হিসেবে চলতি বছরের মে মাসে চালু হয়েছে 'উইনবিজ' রেস্টুরেন্ট। খিলগাঁওয়ের তালতলা মার্কেটের ঠিক বিপরীত পাশে উইনবিজ-এর অবস্থান। বাইরে থেকে দেখে বুঝতে পারা না গেলেও অন্দরমহল পুরোটাই ১৯৭৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত 'স্টার ওয়ার্স' সিনেমার আদলে সাজানো। ভেতরে প্রবেশমাত্রই পরিচিতি ঘটবে গ্রহ, উপগ্রহের এবং নক্ষত্রের সাথে। বসে খানিক ধাতস্থ হওয়ার পর নাকে ভেসে আসবে মিষ্টি ফুলের গন্ধ।
অভিনব এই রেস্টুরেন্টের কারিগর আশরাফুল ইসলাম মামুন। পেশাগতভাবে বিগত ২৫ বছর যাবত তিনি যুক্ত গার্মেন্টস শিল্পের সাথে। কাজের সূত্রে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের কারণে বিভিন্ন ধরণের রেস্টুরেন্ট অবলোকনের সুযোগ ঘটেছে। তাই অনেকটা শখের বশেই নতুন কিছু করার তাগিদে খোলেন রেস্টুরেন্ট ব্যবসা।
২০২১ সালে পরিকল্পনা শুরুর পর তার পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন ঘটে ২০২৩ সালে। পূর্বে অর্জিত শিল্পদক্ষতার সাথে মিলিয়ে তাই এমন একটি রেস্টুরেন্ট খোলার পরিকল্পনা করেন, যেখানে থাকবে নতুনত্ব; পাশাপাশি সেটিকে শিল্পেও পরিণত করা যাবে। দীর্ঘ দুই বছর রেস্টুরেন্ট বিষয়ে পড়াশোনা এবং বিভিন্ন ভিডিও দেখে মামুন পরিচালনা পদ্ধতি সম্পর্কে বুঝতে পারেন; জানতে পারেন বিভিন্ন রকমের তথ্য।
প্রচলিত ধারণার বাইরে ভিন্নধর্মী ভাবধারা থেকেই সূচনা হয় 'উইনবিজ' রেস্টুরেন্টের। প্রায় দেড় বছর খাবার নিয়ে গবেষণার পর নির্ধারিত হয় খাবারের তালিকা। ব্যতিক্রমধর্মী রেস্টুরেন্ট তৈরির আগ্রহ কীভাবে এলো জানতে চাইলে মামুন বলেন, 'প্রথমত, আমার চিন্তাভাবনা ছিল এমনও একটা ডিজাইন করা উচিত যেটা অন্যান্য জায়গা থেকে ব্যতিক্রম হবে। দশ বছর পরেও এটা ব্যতিক্রমই থাকবে। অন্যদের সাথে মিলে যাবে না। তাছাড়া আমি চেয়েছিলাম পরিবর্তনশীল কোনো থিম নিয়ে কাজ করতে। সিলিং এবং দেয়ালে এলইডি সিস্টেম করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তাতে খরচের পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে। তাই স্টার ওয়ার্স এর থিমে সাজানোর চেষ্টা করেছি।'
ব্যক্তিজীবনে সবসময়ই ইতিবাচকতাকে ধারণ করে চলেন মামুন। তাই নতুন রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় শুরুর পর নামের ক্ষেত্রেও বজায় রেখেছেন সেই ধারা। প্রতিষ্ঠানের নাম রেখেছেন 'উইনবিজ'। যেটি সবসময় জয়ের মতো ইতিবাচকতা বহন করবে।
আড়াআড়ি ফ্যান্টাস্টিক পিজ্জা!
উইনবিজের খাবারের তালিকায় নজর দিলে দেখা যাবে, ফাস্টফুড হিসেবে মোমো, স্যুপ, বার্গার, পিজ্জা, পাস্তা, ফ্রাইস এগুলোই স্থান পেয়েছে। তবে সাধারণ এই খাবারগুলোকে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করেছে উইনবিজ। ধরা যাক, পিজ্জার কথা। উইনবিজের সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার হিসেবে ফ্যান্টাস্টিক পিজ্জা পরিচিত।
ফ্যান্টাস্টিক পিজ্জার সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে, এখানে গোল পিজ্জাটি দেখতে অনেকটা ওয়াফেলের মতো। বড় আকৃতির পুরো পিজ্জা আড়াআড়িভাবে ১৬ ভাগে বিভক্ত। দৈর্ঘ্য-প্রস্থে প্রতিটি টুকরার আকার ২ ইঞ্চি। প্রতি ভাগে ছড়ানো আছে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের টপিংস। চিংড়ি, মুরগি, গরু, প্যাপারোনি, মোজারেলা চিজ, চেডার চিজ, ক্রিম চিজ, ক্যাপসিকাম সহ ১৬ রকমের স্বাদের টপিংস ছড়ানো থাকে। অর্থাৎ একটি পিজ্জাতেই ১৬ রকমের স্বাদ পাওয়া যাবে। একে সাধারণ পিজ্জার মতো ত্রিভুজাকৃতিভাবে কাটা যায় না। খেতে হলে আড়াআড়ি ভাবে কেটে খেতে হবে।
ফ্যান্টাস্টিক পিজ্জাতে নিজের পছন্দমতো টপিংস বাছাইয়ের সুযোগ রেখেছে উইনবিজ কর্তৃপক্ষ। মামুন বলেন, 'আমাদের এখানে ফ্যান্টাস্টিক পিজ্জা সবচেয়ে জনপ্রিয়। আমাদের কাছে ৫টা অর্ডার এলে তিনটাই ফ্যান্টাস্টিক পিজ্জার অর্ডার আসে।'
ফ্যান্টাস্টিক পিজ্জা ছাড়াও মার্গারিটা পিজ্জা, চিক পিজ্জা, বিফ পিজ্জা, বিফ প্যাপারোনি পিজ্জা রয়েছে। তবে সেগুলো দেখতে সাধারণ পিজ্জার মতোই। পিজ্জা ছাড়াও পাওয়া যাবে ক্রিম লোডেড মাশরুম স্যুপ, ডাম্পলিং স্যুপ প্রভৃতি স্যুপ। পাওয়া যাবে কয়েক পদের বার্গার, পাস্তা, কালামারি, চিকেন লোডেড উইথ ফ্রাইজ সহ বাহারি খাবার। ফাস্টফুড খেয়ে গলা শুকিয়ে গেলে গলা ভেজানোর জন্য শেক, মকটেল এবং কফির ব্যবস্থাও রেখেছে উইনবিজ। কোল্ড কফি, হট কফি, ফ্রাপে সহ বিভিন্ন স্বাদের কফি পাওয়া যায় এখানে।
উইনবিজে তিন আকারের পিজ্জা পাওয়া যায়। ছোট, মাঝারি এবং বড় আকার অনুযায়ী দামও ভিন্ন ভিন্ন হয়। ছোট আকৃতি ফ্যান্টাসির পিজ্জার দাম ৪৪৯ টাকা; মাঝারি পিজ্জার দাম ৮৪৯ টাকা এবং বড় আকৃতির পিজ্জার দাম ১৫৪৯ টাকা। অন্যান্য পিজ্জার দাম ১৪৯ টাকা থেকে শুরু হয়ে সর্বোচ্চ ১৩৪৯ টাকা পর্যন্ত হয়। এছাড়াও প্রণ টেম্পুরার দাম ৪৪৯ টাকা এবং পটেটো ওয়েজেস ১০৯ টাকা থেকে শুরু।
ক্যাজুয়াল রেস্টুরেন্ট উইনবিজ
রেস্টুরেন্টের ধরন ও খাবারের ধরন যাচাইয়ের ক্ষেত্রে মামুনকে প্রথমে গ্রাহক ও তাদের পছন্দকে প্রাধান্য দিতে হয়েছে। মামুনের মতে, উইনবিজের প্রধান গ্রাহক উচ্চ-মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত শ্রেণির মানুষ। তাই তাদের পছন্দ বিবেচনায় রেখে এই রেস্টুরেন্টটি প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।
রেস্টুরেন্টকে শিল্পে পরিণত করার কথা উল্লেখ করে মামুন বলেন, 'ফাইন ডাইনিং রেস্টুরেন্ট ইন্ডাস্ট্রিলাইজ করা একটু কঠিন। তখন মনে হলো ফাস্টফুডের কথা। কারণ এটাকে পরিচালনা এবং নিয়ন্ত্রণ করা অপেক্ষাকৃত সহজ। আর ফাস্টফুডের প্রতি মানুষের আকর্ষণও সবসময় বেশি থাকে। পশ্চিমা বিশ্বে ফাস্টফুড যেহেতু অনেক জনপ্রিয়, তাই আমার মনে হলো এমনভাবে ব্যবসা পরিচালনা করা যায়।'
খাবারের তালিকা নির্ধারণের পর মামুন ক্যাজুয়াল রেস্টুরেন্টের মতো করে সবটা সাজানোর পরিকল্পনা করেন। ক্যাজুয়াল রেস্টুরেন্ট হলো এমন এক ধরণের রেস্টুরেন্টের ধারা, যেখানে পরিবার বা বন্ধুবান্ধবের সাথে বসে খাবার খাওয়ার পাশাপাশি মানুষ আনন্দের মাধ্যমে সময় উপভোগেরও সুযোগ পাবে। খাবারের দামও সহনীয় থাকবে।
মামুন জানান, 'শুধু খাবারের জন্য মানুষ রেস্টুরেন্টে আসবে না। রেস্টুরেন্টে আসবে ভালো সার্ভিস ও সুন্দর অভিজ্ঞতার জন্য। যেখানে মানুষ সময়কে ভালোভাবে উপভোগ করতে পারবে। এখানে ঢুকলে শুধু যে খাবারের গন্ধ পাওয়া যাবে, তা নয়। খাবারের মিশ্র গন্ধ সবাই পছন্দ করে না। তাই আমাদের এখানে যুক্ত করা হয়েছে সুগন্ধি ডিফিউজার। যেখানে পাওয়া যাবে বিভিন্ন ফুলের হালকা মিষ্টি সুগন্ধ।'
মামুনের রেস্টুরেন্টকে প্রযুক্তির আওতায় আনার পরিকল্পনা শুরু হয় পশ্চিমের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের পর। সেখানে তিনি দেখেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে মানুষের পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে অনেক রেস্টুরেন্টই ব্যবসা করে থাকে। বাংলাদেশি প্রেক্ষাপটে রেস্টুরেন্ট শিল্পে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার খুব একটা দেখা যায় না। তাই মামুনের চেষ্টা ছিলো ভিন্নরকম কিছু করার।
গার্মেন্টস শিল্পের সাথে বহুদিন যুক্ত থাকায় মামুনের নিজস্ব আইটি এবং সফটওয়্যার টিম ছিলো। যাদের সহযোগিতায় নতুন ধারার রেস্টুরেন্ট তৈরিতে মামুনের বেগ পেতে হয়নি।
খাবার অর্ডারে টেবিলের কেরামতি!
উইনবিজের খাবার টেবিল সচরাচর টেবিল থেকে ভিন্ন। টাচ স্ক্রিন যুক্ত প্রতিটি টেবিল মামুন সংগ্রহ করেছেন চায়না থেকে। মূলত বিশ্বব্যাপী অগ্রসর হওয়া নতুন প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য করেছেন এই ব্যবস্থা।
'প্রচলিত ধারার রেস্টুরেন্টে গেলে দেখা যায়, ওয়েটার ক্যাটালগ নিয়ে আসে এবং সেখানে ওয়েটারকে খাবার কেমন হবে তা প্রশ্ন করেই অর্ডার দেওয়া হয়। কিন্তু এখানে ডিজিটালি সবকিছু হচ্ছে। খাবার দেখতে কেমন হবে তা টেবিলেই ক্লিক করলে দেখা যাবে। এখানে অর্ডার করা সহজ', বলেন তিনি।
উইনবিজে প্রতিটি টেবিলে চারটি করে 'ভিজ্যুয়াল ম্যাট' থাকে। এর ফলে স্ক্রিনে স্পর্শ করে প্রতিটি টেবিল থেকে কেউ চাইলে একসাথেও খাবার অর্ডার করতে পারবে, আবার টেবিলের চার কোণায় বসে চারজন ভিন্ন ভিন্ন খাবারও অর্ডার দিতে পারবে। প্রতিটি ক্লিকেই উঠে আসবে খাবারের ছবি। সেখানে পছন্দমতো ক্লিকের মাধ্যমে অর্ডার শেষ করলে তা মেইন সিস্টেমে গিয়ে জমা হবে। পাশাপাশি মোট কত টাকা খাবারের বিল আসবে সেটা দেখেই গ্রাহক খাবার অর্ডারের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
খাবার টেবিলে ক্লিক করে অর্ডার করার কারণে ওয়েটারের দাঁড়িয়ে থেকে অর্ডার নেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এখনো বিষয়টি নতুন হওয়ায় ওয়েটাররা দাঁড়িয়ে থেকে খাবারের হিসাব গ্রাহকদের থেকে বুঝে নেয়। তবে অচিরেই গ্রাহক টেবিলের মাধ্যমে অর্ডার দিতে পারবে- এমনটাই বিশ্বাস মামুনের।
তিনি বলেন, 'এই টেবিল আসলে রেস্টুরেন্টের মালিক এবং গ্রাহক উভয়কেই সাহায্য করছে। মালিকের লাভ হচ্ছে, অর্ডারে ভুলের সম্ভাবনা অনেক কমে যাচ্ছে। অপরদিকে গ্রাহক বসে বসে সময় নিয়ে অর্ডার করতে পারছে। এতে করে প্রতিটি জিনিস দেখে এবং পরিবার, বন্ধুবান্ধবের সাথে আলোচনা করে খাবার অর্ডার দিতে পারছে।',
বিনোদনের উৎস যখন খাবার টেবিল!
শুধু খাবার অর্ডার দেওয়াই নয়, বিনোদনের মাধ্যম হিসেবেও উইনবিজের খাবার টেবিলের জুড়ি মেলা ভার। শিশু থেকে বয়োঃবৃদ্ধ সকলেই যাতে অর্ডারকৃত খাবার আসার আগ পর্যন্ত সময়কে উপভোগ করতে পারেন তার জন্য ব্যবস্থা রেখেছে উইনবিজ। খাবার টেবিলে গেমস, পাজল মেলানো এবং ছবি আঁকার সুযোগ রয়েছে।
টেবিলে যুক্ত থাকা বিভিন্ন গেম মাইক্রোসফটের গেম ইঞ্জিন দিয়ে বানানো। স্ক্রিনে স্পর্শ করে এসব গেমস কেউ একাও খেলতে পারে, আবার দু'জন কিংবা চারজন মিলেও খেলতে পারবে।
এছাড়া আছে ছবি দেখে পাজল মেলানোর সুযোগ। শিশুদের জন্য গেমটি যুক্ত করা হলেও যে কেউ অংশ নিতে পারবেন এই খেলায়।
আরো বিভিন্ন ফিচার টেবিলের সাথে যুক্ত করার পরিকল্পনা মামুনের রয়েছে। কম সময়ে অধিক কাজের লক্ষ্যে নিয়েছেন এমন উদ্যোগ। মামুন বলেন, "কিছু ফিচার আমাদের আন্ডার কন্সট্রাকশন রয়েছে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত টেবিলের স্ক্রিনে স্পর্শ করে 'ওয়েটার কলিং সিস্টেম'। অনেকে দেখা যায়, কেবল টিস্যু চাওয়ার জন্য ওয়েটারকে ডাকে। তাই আমরা এই সিস্টেমে টিস্যুর জন্য একটা ফিচার যুক্ত করেছি। গ্রাহক সেখানে ক্লিক করলে ওয়েটার বুঝতে পারবে টিস্যু প্রয়োজন। পাশাপাশি ওয়েটারের হাতে একটা ঘড়ি দেয়া থাকবে। টিস্যুর প্রয়োজন ফিচারে ক্লিক করা হলে ওয়েটারের হাতে থাকা ঘড়ি ভাইব্রেট করবে। সেখানে দেখে প্রয়োজনীয় টেবিলে টিস্যু নিয়ে যেতে পারবে।"
শুধু ওয়েটারকে ডাকাই নয়, টেবিলে যুক্ত হতে যাচ্ছে সংবাদ পড়া ও আবহাওয়া দেখারও ফিচার।
তৈরি করতে চান 'দেশী ব্র্যান্ড, আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড'
উইনবিজ কিচেনের সাথে প্রায় ৩০ জনের মতো মানুষ যুক্ত আছেন। আলাদা ২৫ জন আইটি বা সফটওয়্যার উন্নয়নে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজে করে যাচ্ছে। এখানকার কিচেনে কাজ করা এবং খাবার পরিবেশনকারী প্রতিটি কর্মীকেই টেবিল ব্যবহার সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
গ্রাহকের কাছে টেবিলে ক্লিক করে অর্ডারিং সিস্টেম পরিচিত না হওয়ায় সেটা শুরু থেকেই একটা চ্যালেঞ্জ ছিল মামুনের জন্য। মানুষের খাপ খাওয়াতে অনেকটা ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। তবে তারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন মানুষের কাছে সহজবোধ্যভাবে পৌঁছে দেয়ার।
পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা উইনবিজের মূল লক্ষ্য। তাই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রতিটি গ্লাস, কাপ, প্লেট সবকিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করা হয় সবসময়।
গ্রাহকের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত ইতিবাচক সাড়াই পেয়েছেন মামুন। গ্রাহকের পছন্দের তালিকায় সবচেয়ে বেশি জায়গা পেয়েছে ক্রিম লোডেড মাশরুম স্যুপ, ডাম্পলিং স্যুপ এবং ফ্যান্টাস্টিক পিজ্জা। প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত চলমান থাকে উইনবিজ। মাস কয়েক আগে রেস্টুরেন্ট চালু করায় এখন পর্যন্ত অনলাইনে অর্ডার দেওয়ার সিস্টেম চালু করেনি উইনবিজ কর্তৃপক্ষ। তবে পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা অর্জনের পর অনলাইনে অর্ডার দেওয়ার পদ্ধতিও চালু করবে তারা।
তবে যে পরিমাণ প্রচারণার প্রয়োজন ছিলো, ততোটা এখনো হচ্ছে না বলে মনে করছেন মামুন। প্রচারণা বাড়লে গ্রাহক আরো বাড়বে, ধারণা তার।
উইনবিজের একটি শাখা বর্তমানে খিলগাঁওয়ে রয়েছে। শহরজুড়ে নতুন নতুন থিমে আরো কয়েকটি শাখা খোলার পরিকল্পনা আছে মামুনের। ইচ্ছা, দেশীয় রেস্টুরেন্টকে আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠা করার। তিনি বলেন, "আমাদের দেশে অনেক গ্রাহকের একটা দৃষ্টিভঙ্গি আছে যে, যারা ভালো ব্র্যান্ড এবং বিদেশি তারাই অনেক বেশি স্মার্ট। আর আমাদের দেশীয় রেস্টুরেন্টগুলো নোংরা এবং অস্বাস্থ্যকর। তারা স্মার্টনেস বোঝে না বলে মনে করেন। আমি সেই ধারণা ভাঙতে চাই। আমি তৈরি করতে চাই 'দেশী ব্র্যান্ড, আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড'- এর রেস্টুরেন্ট।"