লাদাখ সীমান্তে চীন-ভারতের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ
গত সোমবার রাতে পূর্ব লাদাখে ভারতীয় সেনা ও চীনের সৈন্যদের মধ্যে সংঘর্ষে উভয়পক্ষের সেনা নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে । সর্বশেষ খবর, এই সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছে। পূর্ব লাদাখের গালওয়ানে দীর্ঘ ৪৫ বছর পর কোনো সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনার মৃত্যুর ঘটনা ঘটলো, যদিও প্রথমে, প্রাথমিকভাবে ভারত থেকে ৩ জন সৈনিকের মৃত্যুর কথা বলা হয়েছিল। এর মধ্যে একজন কর্নেল পদ মর্যাদার বলে উল্লেখ করা হয়। পরে রাতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে জানানো হয় গুরুতর আহত আরো ১৭ জন সৈন্য প্রবল ঠাণ্ডায় মারা গেছেন।
ভারতীয় সেনা সূত্রে দাবি করা হয় সংঘর্ষে চীনের পক্ষেও একাধিক সৈন্য নিহত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৫ চীনা সৈন্য নিহত হওয়ার কথা জানানো হয়েছিল, পরে সংবাদ সংস্থা এএনআই সহ বিভিন্ন ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, চীনা পক্ষে হতাহতের সংখ্যা ৪৩।
দাবি করা হয় চীনা কর্তৃপক্ষ সীমান্তরেখার ওপার থেকে হেলিকপ্টারে করে নিহত সৈনিকদের মৃতদেহ তুলে নিয়ে গেছে। চীনা তরফ থেকে এই হতাহতের কথা স্বীকার করা হয়নি। তবে চীনা সরকারী সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমস সংঘর্ষে চীনা সৈন্য প্রাণ হারানোর কথা উল্লেখ করেছে।
প্রথমে যে তিনজন ভারতীয় সৈনিক নিহত হওয়ার কথা বলা হয়েছিল তারা হলেন: কর্নেল বি. সন্তোষবাবু, হাবিলদার কে. পাঝানি ও কুন্দন ওঝা। গত ডিসেম্বর মাসেই লাদাখের কমান্ডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন সন্তোষ। সূত্রগুলোর দাবি গত রাতে দুই পক্ষ কোনোরকম গোলাগুলিতে অংশ নেয় নি। পাথর ও রড নিয়ে হাতাহাতি যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলন তারা। কিন্তু প্রশ্ন দেখা দিয়েছে স্রেফ হাতাহাতিতে এত লোক মারা যাওয়া সম্ভব কিনা!
ভারতের দাবি চীন প্রকৃত সীমান্তরেখা না মানার কারণে লাদাখে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। দিল্লিতে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, দুদেশের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, চীন তা মেনে চললে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটত না।
তিনি দাবি করেন ভারতীয় সৈন্যদের সব তৎপরতা নিজ এলাকায়, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার ভারতীয় অংশেই ছিল। আমরা চীনের কাছ থেকেও একই রকম আচরণ আশা করি।
উপরের এই বক্তব্যের মাধ্যমে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় চীনের বিরুদ্ধে প্রকৃত সীমান্তরেখা লঙ্ঘনের অভিযোগ আনল। দু দেশের উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা মেনে চলার ব্যাপারে যে ঐক্যমত হয়েছিল চীন তা লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ জানায় এ মুখপাত্র। রাতের সংঘর্ষের ঘটনার মধ্য দিয়েই সরকারিভাবে, ভারত এই প্রথম চীন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার লঙ্ঘন করেছে বলে স্বীকার করে নিলো।
চীনের সরকারি সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমs একজন চীনা সৈনিকের উদ্ধৃতি দিয়ে দাবি জানিয়েছে, একজন ভারতীয় সৈন্য প্রথম প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে চীনে প্রবেশ করে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধন করেছে। এখান থেকেই সংঘর্ষের সূচনা। গ্লোবাল টাইমস আরো বলে ভারতের বেপরোয়া উদ্ধত্যপূর্ণ আচরণই দু'দেশের সীমান্তে বারবার উত্তেজনা সৃষ্টি করছে।
লাদাখে দুই পক্ষের উত্তেজনা শুরু হয় মে মাসের গোড়ার দিকে। দারবুক থেকে দৌলত বেগ ওল্ডি বিমানঘাঁটি পর্যন্ত, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার বরাবর ভারত রাস্তা তৈরি করছে, এই রাস্তা নির্মাণ নিয়েই চীনের আপত্তি।
শায়ূক নদীর উপরে সেতু নির্মাণের সময়ই চীন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে ভারতীয় ভূ-খন্ডের কয়েক কিলোমিটার ভেতরে প্রবেশ করে, পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকা, নাকু আর প্যাংগং হ্রদের উত্তর প্রান্তে এসে চীনা সৈন্যরা তাবু গাঁড়ে। তারপর থেকেই দু'দেশের সীমান্তে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। দারবুকে ভারত অতি উচ্চতায় (১৬ হাজার ৬শ ১৪ ফুট) অবস্থিত এয়ারস্ট্রিপ (সামরিক বিমান অবতরণ ক্ষেত্র) পর্যন্ত দীর্ঘ রাস্তা নির্মাণ করছে। গালওয়ান উপত্যকা থেকে সিয়াচেন হিমবাহ পর্যন্ত গিয়ে মিশেছে এই রাস্তা। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ভারতীয় এই রাস্তা নির্মাণ নিয়েই চীনের মূল আপত্তির।