আগুন নিয়ে খেলতে গেলে হাত পুড়ে যাবে: সিলেটের জনসভায় বিএনপিকে হুঁশিয়ারি প্রধানমন্ত্রীর
বোমাবাজি ও আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'বিএনপি বলে নির্বাচন প্রতিহত করবে। এতো সাহস তারা পায় কোথায়। লন্ডনে বসে নির্দেশ দেয়, আর এখানে জ্বালাও-পোড়াও করে মানুষ হত্যা করে। আমি শুধু এইটুকু বলতে চাই, দু-চারটা গাড়ি পুড়িয়ে সরকার ফেলে দেয়া যাবে না। নির্বাচন ঠেকানো যাবে না। বরং আগুন নিয়ে খেলতে গেলে আগুনেই হাত পুড়ে যাবে।'
আজ বুধবার বিকেলে সিলেট নগরের আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এই জনসভার মাধ্যমেই আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করলেন তিনি।
এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার হারানোর কিছু নেই, আমি সব হারিয়েছি। কেবল এক বোন ছাড়া আমার আর কেউ নেই। এই জনগণই আমার সব। তাই আমাকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।
আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে তিনি বলেন, 'নৌকায় ভোট দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। উন্নয়ন পেয়েছে। আবার আপনারা নৌকায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন। বাংলাদেশকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালে আমেরিকা প্রস্তাব দিয়েছিল দেশের গ্যাস বিক্রি করতে হবে। আমি রাজী হইনি। এ কারণে আমাদের ক্ষমতায় আসতে দেয়া হলো না। গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এল বিএনপি। এরপর শুরু হলো দুঃশাসন।
তিনি বলেন, আমরা যখন উন্নয়ন করছি, বিএনপি তখন আগুন দিয়ে মানুষ পুড়াচ্ছে। দেশের সম্পদ ধ্বংস করছে। ২০১৩ সালেও তারা এমনটি করেছিল। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৩ হাজারের মতো মানুষ পুড়িয়েছে তারা। ২০১৮ সালে ভোটে এসে তারা নমিনেশন বাণিজ্য শুরু করলো।
গত ১৫ বছরে উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, গত ১৫ বছর বদলে গেছে বাংলাদেশ। বিএনপির আমলে দারিদ্রের হার ছিল ৪১ ভাগ। এখন আমরা ১৮ ভাগে নামিয়ে এনেছি। মাথাপিছু আয় অনেক বেড়ে গেছে। এ দেশের কোনও মানুষ যেন ভূমিহীন ও গৃহহীন না থাকে– এ জন্য ৮ লাখ ৪১ হাজার ঘর নির্মাণ করে দিয়েছি। এখন সিলেটে কোন গৃহহীন ও ভূমিহীন নেই। ৮ লাখ মানুষকে আমরা বয়স্ক ও বিধবা ভাতা দেই। শিক্ষা বৃত্তি ও উপবৃত্তি পাচ্ছে প্রায় ৩ কোটি শিক্ষার্থী। সাক্ষরতার হার ৪৫ ভাগ থেকে ৭৫ ভাগে উন্নীত করেছি। ১ কোটি টন থেকে খাদ্য উৎপাদন ৯ কোটিতে উন্নীত করেছি। তবে সবাই খেয়াল রাখবেন, কোনও জমি যেন পতিত না থাকে। নিজের খাদ্য নিজেই উৎপাদন করেন।
তিনি বলেন, আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। আজকে সবার হাতেই মোবাইল ফোন। ৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা মোবাইল ফোন দিয়েছি। এখন গ্রামেগঞ্জেও ইন্টারনেট আছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সিলেটের উন্নয়নের ফিরিস্তি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীত করা হচ্ছে, ওসমানী বিমানবন্দর আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। সিলেটে মেট্রোরেল চালু করা যায় কিনা– সে জন্য সমীক্ষা চলছে। সুরমা নদীর খনন শুরু হয়েছে। সিলেটে যেভাবে আমরা উন্নয়ন করেছি, আমাদের প্রতিটি লক্ষ্য পূরণ করেছি।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক জাকির আহমদ ও জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খানের সঞ্চালনায় জনসভায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কথা বলেছিলাম। তা করেছি। এখন আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব। আবার নির্বাচিত হলে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন বাংলাদেশ গড়ে তুলব।
তিনি বলেন, ৮১ সালে দেশে ফিরে সিলেটে জনসভার মাধ্যমেই রাজনীতি শুরু করি। এরপর থেকে সবসময়ই সিলেটে আসি। এবারও সিলেট থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু করলাম।
এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, 'বিএনপি এখন কোথায়? কোথায় আছে?- পালিয়ে গেছে। তারা বলেছিল, ২৭ অক্টোবরের পর শেখ হাসিনা পালিয়ে যাবে। এখন তারাই পালিয়ে গেছে। বিএনপিকে জনগণ লাল কার্ড দেখিয়ে দিয়েছে। বিএনপি খেলায় নাই। খেলায় আছে ১,৮৯৬ জন। ৭ তারিখ তারা খেলবে।'
কাদের বলেন, 'বিএনপি ভুয়া। তাদের ধর্মঘট, হরতাল, রাজনীতি সব ভুয়া। তাদের বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র রুখতে হবে। বিএনপি নেতারা মানুষ নয়, মানুষের নামে জানোয়ার। এরা থাকলে গণতন্ত্র থাকবে না, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি থাকবে না, শান্তি থাকবে না। এদের বাংলাদেশ থেকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে।'
জনসভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, আগামীতে ক্ষমতায় গেলে সিলেটে শহর রক্ষা বাঁধ হবে। সিলেটে রেলওয়ের উন্নয়ন হবে। ইতোমধ্যে এব্যাপারে উন্নয়ন প্রকল্প (প্রস্তাব) গেছে।
তিনি বলেন, 'গত ১৫ বছরে প্রধানমন্ত্রী দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করেছেন। এ কারণে দেশের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। এই শান্তি ও স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে হবে। এজন্য শেখ হাসিনা সরকার বার বার দরকার।'
মন্ত্রী বলেন, আমার বড় ভাই আবুল মাল আব্দুল মুহিত যেভাবে সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে গেছেন, আমিও তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে জনগনের কল্যাণে কাজ করতে চাই। শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে চাই।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি বলেন, 'নৌকা জয়ী হলে, মানুষ জয়ী হয়, দেশ জয়ী হয়। তাই সিলেটের মানুষ নৌকাকে জয়ী করতে কখনোই ভুল করবেন না। আর নৌকা জয়ী হলে ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে – স্মার্ট বাংলাদেশ।'
পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে দেশে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। সুনামগঞ্জের চেহারা বদলে গেছে। নেত্রকোনার সাথে সুনামগঞ্জের রেল যোগাযোগ স্থাপিত করা হবে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, 'একটি দল নির্বাচনকে বানচাল করতে জ্বালাও-পোড়াও করছে। মানুষ হত্যা করছে। আমরা জ্বালাও-পোড়াওয়ের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাস করি। তাই নির্বাচনে এসেছি।'
তিনি বলেন, সিলেট বন্যাপ্রবণ এলাকা। তাই বন্যা মোকাবেলায় একটি বিশেষ প্রকল্প এবং পরিবেশবান্ধব উপায়ে সিলেটের কোয়ারিগুলো থেকে সীমিত আকারে পাথর উত্তোলনের দাবি জানান তিনি।
জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, আওয়ামী লীগের উপদেষ্ঠা-মণ্ডলীর সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ, ইনাম আহমদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল, কার্যকরী কমিটির সদস্য আজিজুস সামাদ ডন, মুশিকুর রহমান, সুজিত রায় নন্দী, সিলেট সিটি মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী প্রমুখ।
এর আগে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচার শুরু করতে সকাল সাড়ে ১১টায় সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় তাঁকে অভ্যর্থনা জানান কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।
এরপর প্রটোকলবিহীন গাড়িতে করে হজরত শাহজালাল (রহ.) ও হজরত শাহ পরান (রহ.) এর মাজার জিয়ারত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় তার ছোট বোন শেখ রেহানাসহ দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবারের মতো এবারও সিলেট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের পর বুধবার আবার সিলেটের কোনো জনসভায় বক্তব্য দিলেন প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্বাচনী সফরের সম্পূর্ণ খরচ বহন করছে তাঁর দল।