জোটে না থাকার দাবি জাপার, কিন্তু নেতারা প্রচারণা করছেন ‘আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী’ হিসেবে
জাতীয় পার্টি (জাপা) এবারের নির্বাচনে কোনো জোট কিংবা মহাজোটে না থাকার ঘোষণা বারবার দিয়ে এলেও আওয়ামী লীগ থেকে ছাড় পাওয়া আসনগুলোতে 'আওয়ামী লীগ সমর্থিত' বলেই প্রচারণা চালাচ্ছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। এতে তৈরি হচ্ছে বিতর্ক।
বৃহস্পতিবারও জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু পার্টির ইশতেহার ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, 'আমরা কোনো জোট, মহাজোটে নেই। আওয়ামী লীগ যেসব আসনে ছাড় দিয়েছে, কেন দিয়েছে সেই প্রশ্নের উত্তর তারা দেবে। আমরা তো কোনো আসনে ছাড় দেই নাই। আমরা তো প্রতিটি আসনে লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করব।'
তবে চুন্নুসহ অন্তত ১৫ জন প্রার্থী তাদের নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের সমর্থনেই নির্বাচন করছেন, এমনভাবেই প্রচারণা করছেন। আওয়ামী লীগ থেকে ছাড় দেওয়া ২৬টি আসনেই এসব প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের সমর্থন কিংবা মহাজোটের সমর্থনে নির্বাচনে আছেন, এমনটা উল্লেখ করেই নির্বাচনী এলাকাগুলোতে পোস্টার, ফেস্টুর, ব্যানার এর মাধ্যমে প্রচার করছেন। এমনকি এসব নেতা ও তাদের সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও আওয়ামী লীগ সমর্থিত বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
এসব আসনের স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলছেন, সরকার সমঝোতা করে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহার করলেও দলের অধিকাংশ ভোটার এটা মেনে নিতে পারছেন না। কারণ গত ১৫ বছর নৌকার সমর্থন নিয়ে লাঙ্গল বিজয়ী হলেও তারা নিজের ও জাতীয় পার্টির কিছু নেতা-কর্মী ছাড়া কারও কোনো কাজে আসেননি। দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলেও এসব আসনে জাতীয় পার্টির কারণে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বঞ্চিত ও অবহেলিত।
কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর নির্বাচনী প্রচারণার জন্য টানানো পোস্টারে চুন্নু নিজেকে 'জাতীয় পার্টি মনোনীত' প্রার্থীর পাশাপাশি 'আওয়ামী লীগ সমর্থিত' প্রার্থী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এরপর থেকেই এ নিয়ে বিতর্ক আরও তীব্র হয়।
এভাবে পোস্টার ছাপানো নিয়ে নিয়ে কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের ভোটার ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র এক প্রার্থী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগও দিয়েছেন।
একই ঘটনা দেখা গেছে ফেনী-৩ আসনেও। ওই আসনের জাপা প্রার্থী মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী তার নির্বাচনী পোস্টার ও লিফলেটে উল্লেখ করেছেন, 'মহাজোট মনোনীত প্রার্থী' হিসেবে তিনিত লাঙ্গল মার্কায় ভোট চান।
এছাড়া নীলফামারী-৩ আসনের জাপা প্রার্থী মোজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল তার নির্বাচনী পোস্টার ও লিফলেটে উল্লেখ করেছেন 'জাতীয় পার্টি মনোনীত ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত'। ময়মনসিং-৫ আসনের প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদ মুক্তিও এমন প্রচারণা চালাচ্ছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া তার প্রচারণায় নিজেকে 'জাতীয় পার্টি মনোনীত ও মহাজোট সমর্থিত প্রার্থী' বলে উল্লেখ করেছেন। গাইবান্ধা-১ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী শামীম হায়দার পাটওয়ারীও তার প্রচারণায় নিজেকে মহাজোট প্রার্থী হিসেবে উল্লেখ করে লাঙ্গল মার্কায় ভোট চাইছেন। কুড়িগ্রাম-২ আসনের প্রার্থী পনির উদ্দিন আহমেদও নিজেকে মহাজোটের প্রার্থী বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেকে তিনি কুড়িগ্রাম-২-এর মহাজোটের একক প্রার্থী উল্লেখ করেও প্রচার করছেন। পিরোজপুর-৩ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. মাশরেকুল আজম (রবি) তার প্রচারণায় নিজেকে জোট মনোনীত প্রার্থী হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
জাপার এসব প্রার্থীদের এমন কর্মকাণ্ডে ওইসব এলাকার আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ বলছেন, জাপার প্রার্থীরা নিজেদেরকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত বলে ভোটারদের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছেন। জাপা যেখানে সবসময় বলেছে যে তারা বিরোধীদল এবং এককভাবে নির্বাচন করছেন, তাহলে তারা কীভাবে সরকারি দল সমর্থিত হয়—এমন প্রশ্ন তুলছেন তারা।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চুন্নু দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'যারা পোস্টার, ব্যানারে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কিংবা মহাজোট সমর্থিত লিখেছেন, তারা ভুল করে করেছেন। এক-দুইজন এমনটা করেছিলেন। তাদেরকে আমরা না করে দিয়েছি, যাতে এমন পোস্টার ব্যবহার না করেন।'
তিনি আরও বলেন, গতবার আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও মহাজোটের সাথে ছিলেন বলে এবারেও কেউ কেউ ভুল করে আগের ফরম্যাটে পোস্টার করেছিল। তাদেরকে মানা করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
গত ১৭ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ জাপাকে ২৬টি আসন ছেড়ে দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি পাঠিয়ে এসব আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। এরপর থেকেই বিতর্ক আরও তীব্র হয়।
যদিও সেদিনই জাপা মহাসচিব বলেছিলেন, 'আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো জোট হয়নি। আসন সমঝোতা হয়নি। কিছু আসনের ক্ষেত্রে কিছু কৌশল রয়েছে।'