বছরের পর বছর পানি না পেলেও দিতে হচ্ছে বিল: চট্টগ্রাম ওয়াসার বিরুদ্ধে অভিযোগ
বছরের পর বছর পানি পান না। তবুও মাস শেষে ধরিয়ে দেওয়া হয় বিল। বিল পরিশোধ না করায় কারো কারো লাখ টাকা পর্যন্ত বকেয়া বিল দেখানো হচ্ছে। পাওয়া যাচ্ছে না এর কোনো সমাধান— চট্টগ্রাম ওয়াসার গণশুনানিতে এমন অভিযোগ করলেন এক গ্রাহক। বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে মতবিনিময় সভা ও গণশুনানির আয়োজন করা হয়।
দক্ষিণ খুলশীর সরদার বাহাদুর নগর এলাকার বাসিন্দা নোমান ই আলম খান নামের এক গ্রাহক অভিযোগ করে বলেন, "আমরা বছরের পর বছর ধরে পানি পাই না। কিন্তু সংযোগ থাকার অজুহাতে আমাদের মাসের পর মাস বিল ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পানি না পেয়েও অনেকের এক লাখ টাকা পর্যন্ত বিল বকেয়া দেখানো হচ্ছে। কিন্তু আমরা বারবার বলেও কোনো সমাধান পাচ্ছি না।"
সরেজমিন তদন্ত করে বিলগুলো মওকুফ করার দাবি জনান এই গ্রাহক।
জবাবে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে এম ফজলুল্লাহ ওই গ্রাহককে পরামর্শ দেন, সংযোগ বিচ্ছিন্নের আবেদন করতে। বিল মওকুফ করার ক্ষমতা ওয়াসার নেই জানিয়ে এমডি বলেন, "আবেদন না করলে গ্রাহকের নামে সংযোগের ভিত্তিতে বিল যাওয়াটা স্বাভাবিক।"
মতবিনিময় সভায় গত ১৪ বছরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরা হয়। গ্রাহকদের সঙ্গে গণশুনানিও করে সংস্থাটি। তবে সভায় উন্নয়নের গল্প শোনানোর চেয়ে গ্রাহকদের পানি না পাওয়ার অভিযোগই বেশি শুনতে হলো ওয়াসার কর্মকর্তাদের।
সভার শুরুতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শোনান চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ। ছয় পৃষ্ঠার বক্তব্যে তিনি ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম ওয়াসার বাস্তবায়ন করা বিভিন্ন প্রকল্পের চিত্র তুলে ধরেন। পাশাপাশি তিনি ওয়াসার রূপকল্প ও অভিলক্ষ্যের পাশাপাশি ওয়াসার প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলোর কথাও উল্লেখ করেন।
এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, ২০০৯ সালে চট্টগ্রামে ৩৭ কোটি লিটার পানির চাহিদা থাকলেও ওয়াসা উৎপাদন করতে পারত মাত্র ১২ কোটি লিটার পানি। ২০১৭ সালে এসে পানির চাহিদা এসে দাঁড়ায় ৪০ কোটি লিটারে, কিন্তু বিপরীতে ওয়াসা উৎপাদন করতে পারত ৩০ কোটি লিটার। বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরীতে পানির চাহিদা ৪৮ কোটি লিটার। এর বিপরীতে চট্টগ্রাম ওয়াসা এখন ৫৬ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করছে।
পানি উৎপাদনের চিত্র তুলে ধরে ওয়াসার এমডি আরও বলেন, ২০০৯ সাল পর্যন্ত ওয়াসার উৎপাদন করা পানির ৩৬ শতাংশই আসত ভূ-গর্ভস্থ থেকে। বাকি ৬৪ শতাংশ আসত মোহরা পানি শোধনাগার থেকে। বর্তমানে চট্টগ্রাম শহরে ভূ-গর্ভস্থ পানির উৎস নির্ভরশীল নয়। ভূ-গর্ভস্থ পানিতে রয়েছে অত্যধিক আয়রন ও এবং পানির স্তরও দ্রুত নিচে নেমে গেছে। এছাড়া ভূ-গর্ভস্থ মাটির সঙ্গে পাথর থাকায় গভীর নলকূপ খনন কষ্টসাধ্য। বর্তমানে চট্টগ্রাম ওয়াসার ৮ শতাংশ পানি ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে সরবরাহ করা হয়। বাকি পানি চারটি পানি শোধনাগার থেকে আসছে।
ওয়াসার এমডির বক্তব্যের পরই শুরু হয় প্রশ্নত্তোর পর্ব। হালশহরের গ্রিনভিউ আবাসিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক শিমুল বড়ুয়া এসেছিলেন তার আবাসিক এলাকার গ্রাহকদের নানান অভিযোগ ওয়াসাকে জানাতে। তিনি বলেন, "আমার এলাকায় নিয়মিত পানি যায় না। কিন্তু অনেক জায়গায় সংযোগ লাইন ছিদ্র হয়ে পানি নষ্ট হচ্ছে। আমাদের এলাকায় আগে ১০-১২টা বাড়ি ছিল, কিন্তু এখন প্রায় ৪০০ বাড়ি হয়েছে। কিন্তু পানি দেওয়া হচ্ছে আগের অনুপাতেই।"
তখন ওয়াসার কর্মকর্তারা নতুন একটি প্রকল্প হাতে নেওয়ার কথা জানান। সেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে আর পানির সমস্যা থাকবে না বলে আশ্বস্ত করেন।
চট্টগ্রাম ওয়াসার বিভিন্ন অনিয়মের কথা তুলে ধরে এক সাংবাদিক এমডিকে প্রশ্ন করেন, অনেকে বাইরে বলাবলি করেন গ্রাহক হয়রানির কারণে সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম ওয়াসা দুর্নীতে এক নম্বর! এটি কি সত্যি কিনা?
সেই প্রশ্নের জবাবে ওয়াসার এমডি এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, "আমার প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি একেবারে নেই, তা আমি বলব না। তবে আগের তুলনায় তা একেবারেই কমে গেছে। আমি গ্রাহকদের বলে দিয়েছি, তাদের জন্য আমার দুয়ার খোলা। যেকোনো সমস্যা নিয়ে তরা আমার দপ্তরে এসে কথা বলতে পারে।"
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে চট্টগ্রাম ওয়াসার বিভিন্ন দপ্তরের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।