১৫ মার্চের মধ্যে ভারতীয় সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানালেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট
১৫ মার্চের মধ্যে মালদ্বীপ থেকে ভারতীয় সেনা প্রত্যাহারের করতে বলেছেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু। মুইজ্জুর চীন সফরের পরপরই ভারতীয় দূতাবাস কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মুইজ্জু বলেন, 'আয়তনে ছোট হওয়া সত্ত্বেও কাউকে মালদ্বীপকে হেয় করার লাইসেন্স দেওয়া হয়নি।'
মালদ্বীপের তিন উপমন্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অবমাননাকর পোস্ট দেয়ার পর– ভারতীয়দের মালদ্বীপে পর্যটন বয়কটের প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
দক্ষিণ ভারতের কেরালার উপকূলের কাছাকাছি লাক্ষা দ্বীপে গিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নিজের কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ পোস্ট করেন। সেখানে তাকে সমুদ্রতটের পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে ও সাগরে ডুব দিতে দেখা যায়। এই ছবিগুলোকে কেন্দ্র করেই বিতর্কের সূত্রপাত হয়।
মোদি তার পোস্টে মালদ্বীপের কথা উল্লেখ করেননি। তবে তার পোস্টে তিনি স্বল্প পরিচিত এই দ্বীপপুঞ্জের মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যের প্রশংসা করেছেন।
মোদির এই পোস্ট দেখে অনেকে ধরে নেন, প্রকারান্তরে তিনি ভারতের নাগরিকদের মালদ্বীপে না গিয়ে লাক্ষাদ্বীপে ছুটি কাটাতে যেতে উদ্বুদ্ধ করছেন।
মালদ্বীপের তিনজন উপমন্ত্রী তার পোস্টের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
তারা মোদিকে 'ভাঁড়', 'সন্ত্রাসী' এবং 'ইসরায়েলের হাতের পুতুল' বলে মন্তব্য করেছেন।
তাদের এসব মন্তব্যের জেরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মালদ্বীপ বর্জনের ডাক দেয় ভারতীয়রা।
মুইজ্জু তাঁর উপমন্ত্রীদের সাময়িক বরখাস্ত করে বলেন, তাদের মন্তব্য সরকারের নীতির প্রতিফলন নয়।
তবে চীন থেকে ফিরে মুইজ্জু জানান, তিনি ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে চান।
এছাড়া মালদ্বীপের নাগরিকদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা এবং প্রধান প্রধান পণ্যসামগ্রী ও ওষুধ আমদানির জন্য বিকল্প উৎস খুঁজে বের করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেন তিনি।
বর্তমানে মালদ্বীপের নাগরিকরা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বিনামূল্যে স্বাস্থ্য কর্মসূচির আওতায় ভারত ও শ্রীলঙ্কার হাসপাতালে যায়। তাদের প্রধান খাদ্য সামগ্রীসমূহও ভারত থেকে আমদানি করা হয়।
মুইজ্জু ঘোষণা করেছেন, মালদ্বীপের নাগরিকরা এখন থাইল্যান্ড এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে চিকিৎসা সেবা নিতে পারবেন। এছাড়া জানান, মালদ্বীপের সকল ওষুধ ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরাসরি ওষুধ আমদানি করা হবে।
গতবছর মালদ্বীপে সবচেয়ে বেশি ভারতের পর্যটক ছিল। তবে মুইজ্জু বলেন, করোনা মহামারির আগে চীন থেকে সবচেয়ে বেশি আয় হতো এবং এই সংখ্যা আবার দ্বিগুণ করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মালদ্বীপে কমপক্ষে ৭৫ জন ভারতীয় সেনা মোতায়েন রয়েছে এবং চীনপন্থী মুইজ্জু, গত নভেম্বরে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার আগে ভারতীয় সেনা অপসারণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছিলেন। তাঁর দল কয়েক মাস ধরে 'ইন্ডিয়া আউট' প্রচার চালিয়ে আসছিল।
মুইজ্জু বিগত সরকারের বিরুদ্ধে মালদ্বীপে ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তাদের আশ্রয় দিয়ে দেশের সার্বভৌমত্বের সাথে আপস করারও অভিযোগ তুলেছিলেন।
বর্তমানে মালদ্বীপে ভারতীয় সামরিক বাহিনী দুটি বিমান পরিচালনা করছে। বিমান দু'টি সমুদ্রে আটকা পড়া বা দুর্যোগের মুখোমুখি হওয়া লোকদের উদ্ধারে সহায়তা করে।
অনুদানে পাওয়া এসব বিমান সম্পর্কে ইব্রাহিম বলেন, 'সামারিক কর্মকর্তাদের অবশ্যই চলে যেতে হবে, তবে দান করা বিমান পরিচালনার জন্য বেসামরিক নাগরিকরা থাকতে পারে। এটাই চলমান আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।'