গাজা যুদ্ধে সৃষ্ট শ্রমিক সংকট কাটাতে ইসরায়েল ভারতীয়দের দিকে ঝুঁকছে
চলমান গাজা যুদ্ধের কারণে ইসরায়েলে শ্রমিকের ঘাটতি দেখা দেওয়ায় ভারত থেকে শ্রমিক নিয়ে এই ঘাটতি পূরণ করার চেষ্টা চালাচ্ছে ইসরায়েল।
গাজা যুদ্ধের পর ফিলিস্তিনি শ্রমিকের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর দেশটিতে এই শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। ইসরায়েলি নির্মাণ ও অন্যান্য খাতে দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী ফিলিস্তিনিদের নিষিদ্ধ করা হয়েছে যুদ্ধের কারণে।
৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাস হামলা চালানোর আগেই ইসরায়েল শ্রমিক নিয়োগের বিষয়ে ভারতের সাথে আলোচনা করছিল। ফিলিস্তিনি শ্রমিকদের উপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করার পর দেশটির অর্থনীতি একটি ধাক্কা খায়৷ অনেক বিদেশি শ্রমিক বিশেষ করে থাইল্যান্ডের হাজার হাজার অভিবাসী শ্রমিক সংঘাতের কারণে ইসরায়েল ছেড়ে বাড়ি ফিরেছে।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বলেছে, আগামী মাসগুলোতে দেশটি ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার ভারতীয় অভিবাসী শ্রমিক নেওয়ার আশা করছে। ইসরায়েলের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল মাইগ্রেশন অ্যান্ড ইন্টিগ্রেশনের (সিআইএমআই) তথ্য অনুসারে, এটি ২০২১ সালে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে এখন পর্যন্ত দেশটিতে প্রবেশকারী বিদেশি শ্রমিকদের মোট সংখ্যার সমান হবে।
ইসরায়েল বিল্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল শেই পজনার বলেছেন, "আগামী বছরগুলোতে ভারত ইসরায়েলে নির্মাণ শ্রমিকদের বৃহত্তম সরবরাহকারী দেশ না হলেও অন্যতম দেশ হবে।"
পজনার জানিয়েছেন, নয়া দিল্লি এবং চেন্নাই থেকে ইতোমধ্যেই প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক নিয়েছে ইসরায়েল।
তিনি আরো বলেন, ইসরায়েলি নির্মাণ খাতের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শ্রমিক ফিলিস্তিনি ছিলেন। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরের শ্রমিকদের কাজের অনুমতি বাতিল করা হয়েছে। তাই ভারতীয় শ্রমিক নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ বাড়ছে দেশটির।
ডিসেম্বরে ইসরায়েল বিল্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রাউল স্রুগো ইসরায়েলি আইন প্রণেতাদের বলেছিলেন, দেশটির নির্মাণ খাতের উৎপাদন ক্ষমতা ৩০ শতাংশে পৌঁছেছে।
ভারতীয় শ্রমিকদের প্রতি ইসরায়েলের আগ্রহ সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারতের সাথে দেশটির বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের প্রতিফলন। প্রকাশ্যে ইসরায়েলকে সমর্থন জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
প্রাক্তন ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোহেনের মন্তব্য অনুসারে গাজা যুদ্ধের আগেও দুই দেশ গত বছরের মে মাসে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল যাতে বলা হয়েছিল, ৪২ হাজার ভারতীয় নির্মাণ ও নার্সিং কর্মী ইসরায়েলে পাঠানো হবে।
স্থানীয় ভারতীয় মিডিয়া এবং ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১৭ হাজার ভারতীয় কর্মী এখন ইসরায়েলে বসবাস করছেন, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই নার্সিংয়ে নিযুক্ত।
ভারতীয় কর্মকর্তারা যুদ্ধের সাথে সম্পর্ক কমিয়ে দিলেও তারা বলেছেন, শ্রমিক নিয়োগ আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নিয়োগের সাথে জড়িত একজন ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তা (যিনি আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলার জন্য অনুমোদিত নন) বলেছেন, "এটি কেবল শুরু। সামনে এর পরিসর আরো বাড়বে।"
ভারতীয় শ্রমিক ইউনিয়ন ইসরায়েলে এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে শ্রমিক নিয়োগের নিন্দা জানিয়েছে।
হরিয়ানার নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রামহের বিভানি বলেন, "আমরা এর বিরুদ্ধে কারণ এটি শ্রমিকদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। তারা শ্রমিকদের বিশাল বেতন দিয়ে প্রলুব্ধ করছে কিন্তু আমার শ্রমিক কেউ যাবে না।"
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বরাতে পাওয়া রিপোর্ট থেকে জানা যায়, হামাসের হামলার পর থেকে নিরাপত্তাজনিত কারণে ইসরায়েল থেকে থাই শ্রমিকদের পাশাপাশি অনেক নেপালি শ্রমিকও দেশে ফিরে গেছে।
ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ভারতীয় ইউনিয়ন প্রেস রিলিজ দিয়ে জানিয়েছে, এই পদক্ষেপটি 'ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের চলমান গণহত্যা ও যুদ্ধের' সাথে ভারতের সম্পর্ক ইঙ্গিত করবে।
হরিয়ানার একজন নির্মাণশ্রমিক বিনোদ ডাঙ্গি (ইসরায়েলে যাওয়ার জন্য তার কিছু কাগজ বাকি) বিপজ্জনক জেনেও ইসরায়েলে যাওয়ার ব্যাপারে বলেন, "আমাকে কোথাও না কোথাও কাজ করতে হবে। এটা এখানেও বিপজ্জনক। কিন্তু আমি ইসরায়েল ঘুরতে যাচ্ছি না; আমি আমার পরিবারের জন্য যাচ্ছি।"