ইরাক ও সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলা 'ভুল কৌশল': ইরান
গত সপ্তাহে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় তিন মার্কিন সেনা নিহত হওয়ার জবাবে শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) অন্তত ৮৫টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে পালটা হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরাক ও সিরিয়ায় চালানো এ বিমান হামলাকে যুক্তরাষ্ট্রের 'ভুল কৌশল' বলে অভিহিত করেছে ইরান।
মার্কিন ঘাঁটিতে ড্রোন হামলার জন্য ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী, ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স ইন ইরাককে দায়ী করেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। তারা জানিয়েছে, ড্রোনটি ইরানের তৈরি এবং রাশিয়াকে সরবরাহ করা ড্রোনগুলোর মতোই।
একাধিক মিলিশিয়ার সমন্বয়ে গঠিত সংগঠনটি আইআরজিসি'র সশস্ত্র, অর্থায়ন ও প্রশিক্ষণ পেয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে, ইরান মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার পেছনে তাদের কোনো ভূমিকা থাকার কথা অস্বীকার করে বলেছে, তারা সশস্ত্র প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর কোনো সিদ্ধান্তে জড়িত নয়।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "ইরাক ও সিরিয়ায় ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি'র কুদস ফোর্সের ওপর হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র থেকে উড়ে আসা দূরপাল্লার বোমারু বিমানসহ বেশ কয়েকটি মার্কিন বিমান এতে অংশ নেয়।"
অভিযানে সাতটি স্থানে হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী, যার মধ্যে চারটি সিরিয়ার এবং তিনটি ইরাকের। অন্তত ৮৫টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা হয়েছে। তবে ইরানের মাটিতে কোনো হামলা হয়নি।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ইরাক ও সিরিয়ায় হামলা এ অঞ্চলে উত্তেজনা ও অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি ছাড়া আর কোনো ফল বয়ে আনবে না।
আর এর আগে ইরাক বলেছিল, মার্কিন পালটা হামলা ওই অঞ্চলের জন্য 'বিপর্যয়কর পরিণতি' বয়ে আনবে।
ইরাকি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হামলায় বেসামরিক নাগরিকসহ অন্তত ১৬ জন নিহত হয়েছেন।
ইরাকের প্রধানমন্ত্রীর একজন মুখপাত্রের ভাষ্যে, এই হামলা তার দেশের সার্বভৌমত্বের 'লঙ্ঘন' এবং এতে ইরাক ও ওই অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব পড়বে। যদিও সিরিয়া বলেছে, সিরিয়ার ভূখণ্ডে মার্কিন দখলদারিত্ব অব্যাহত থাকতে পারে না।
সিরিয়ার মিশন সাপোর্ট সাইট ইউফ্রেটিসে অবস্থিত মার্কিন বাহিনীকে লক্ষ্য করে রকেট হামলা চালানো হলেও এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, 'আমাদের পছন্দমতো সময়ে ও স্থানে হামলা অব্যাহত থাকবে'। তবে তার দেশ মধ্যপ্রাচ্য বা বিশ্বের অন্য কোথাও সংঘাত চায় না।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র মার্কিন মিত্র ইসরাইলের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন, ইরাক, সিরিয়া ও ইয়েমেনে মার্কিন হামলা কেবল ইহুদিবাদী সরকারের লক্ষ্য পূরণের সুযোগ করে দিচ্ছে।
আর জাতিসংঘে নিযুক্ত মস্কোর কূটনীতিক দিমিত্রি পোলিয়ানস্কি সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছেন, সিরিয়া ও ইরাকে মার্কিন হামলায় সৃষ্ট শান্তি ও নিরাপত্তার হুমকি নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের 'জরুরি' বৈঠক আহ্বান করেছে রাশিয়া।
উল্লেখ্য, ড্রোন হামলায় নিহত তিন মার্কিন নাগরিকের প্রত্যাবাসন অনুষ্ঠানের কয়েক ঘণ্টা পর হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন রিপাবলিকানরা পালটা হামলার সময়ের সমালোচনা করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র পালটা আঘাত হানার জন্য অনেক দেরি করে ফেলেছে। তবে, মার্কিন কর্মকর্তারা পালটা হামলায় দেরি করার জন্য মেঘলা আবহাওয়াকে দায়ী করেছেন।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন