স্থানীয় শিল্পের কর, ভ্যাট ও কাস্টমস শুল্কের বিদ্যমান সুবিধা কমবে: এনবিআর চেয়ারম্যান
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বলেছেন, স্থানীয় শিল্পকে দেওয়া কর, ভ্যাট ও কাস্টমস শুল্কের বিদ্যমান সুবিধা এখনকার মতো অবারিত থাকবে না।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআরের কার্যালয়ে প্রাক-বাজেট সভায় বক্তৃতাকালে মুনিম স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, 'আমরা আপনাদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য একটি লাঠি [কর সহায়তা] দিয়েছিলাম। কিন্তু আজীবন এ সহায়তা রেখে কি আপনাদের পঙ্গু করে রাখব? এ সমর্থন একই মাত্রায় থাকবে না।'
তবে তিনি বলেন, দেশীয় খাত রক্ষায় স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্য বাইরে থেকে আমদানির ক্ষেত্রে আমদানিকৃত পণ্যের শুল্ক কমানো হবে না।
মুনিম বলেন, 'যারা ফাইট [লড়াই] করে টিকে থাকবে, তাদের সাপোর্ট [সমর্থন] দেওয়া হবে। কিন্তু যে মরে যাবে, তাকে টিকিয়ে রাখব কেন? দুর্বল প্লেয়ারকে অনবরত সাপোর্ট দিয়ে রাখতে চাই না।'
সভায় বাংলাদেশ রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ার-কন্ডিশনিং মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (ব্রামা)-এর সদস্যরা গত দেড় দশকে আমদানি-নির্ভরতা কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে তাদের অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে এ খাতের বিদ্যমান হ্রাসকৃত ভ্যাট সুবিধা (বিক্রয়ের উপর ৫ শতাংশ) আরও কয়েক বছরের জন্য অব্যাহত রাখার দাবি জানান।
সভায় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)-এর সহ-সভাপতি সামিরা জুবেরি হিমিকা এ খাতে কর অব্যাহতির মেয়াদ ২০৩১ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর দাবি জানান।
প্রসঙ্গত, আগামী জুনে এ খাতের কর অব্যাহতির মেয়াদ শেষ হচ্ছে।
বৈঠকে ব্যবসায়ীরা এনবিআরের শুল্ক সংক্রান্ত বিভিন্ন আইনি জটিলতা, বন্দরে কাস্টমস কর্মকর্তার দ্বারা আমদানি পণ্যের অ্যাসেসমেন্টে বর্ধিত ভ্যালুয়েশনসহ বিভিন্ন ধরনের হয়রানির অভিযোগ তোলেন।
বৈদ্যুতিক খাতের উদ্যোক্তারা বলেন, যে পণ্য ১,৬০০ ডলারে আমদানি করা হয়, তা ২,৪০০ ডলার ধরে মূল্যায়ন করা হয়। এতে করের হার বেড়ে যায়।
এ খাতের উদ্যোক্তা মহসিন ভূঁইয়া বলেন, 'শুধু আমাদের সেক্টরে নয়, সব সেক্টরেই এ ধরনের অরাজকতা চলছে। এটা বন্ধ করা দরকার।'
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, 'চীন থেকে সার্কিট ব্রেকার আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটের মূল্য ০.৪৫ ডলারের বেশি নয়। কিন্তু আমাদের ০.৬৫ ডলার থেকে ১ ডলার পর্যন্ত মূল্য ধরে ট্যাক্স আদায় করা হয়।'
এ ক্ষেত্রে ট্যারিফ ভ্যালু নির্ধারণ করে দেওয়ার প্রস্তাব করেন তিনি।
কিছু বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি তৈরির কাঁচামাল আমদানিতে ৩৫ শতাংশ ট্যাক্স হলেও এর চূড়ান্ত পণ্য আমদানিতে কর মাত্র ১ শতাংশ।
এ খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ খরচ বাড়বে, যার জন্য ৬০ থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের প্রয়োজন হবে।
এসব পণ্য স্থানীয়ভাবে তৈরি করা গেলে অর্থ দেশেই থাকবে জানিয়ে বিভিন্ন কর সুবিধা দাবি করেন তারা।
সভায় বৈদ্যুতিক গাড়ির ওপর শুল্ক কমানোর দাবি জানান অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশন অভ বাংলাদেশ-এর প্রতিনিধি।
জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, থ্রি-হুইলারও এর অংশ ছিল, কিন্তু মাত্র কয়েকটি কোম্পানি সুবিধা নিচ্ছে, যা অযৌক্তিক।
'নির্দিষ্ট মানদণ্ড ঠিক করে সবার জন্য উৎপাদনের সুযোগ উন্মুক্ত করে দেওয়া উচিত। নীতির অভাবে একটি অংশ বর্তমানে সুবিধা নিচ্ছে। তারা ছয় লাখ টাকা দাম নিচ্ছে, অথচ দুই লাখ টাকা খরচ পড়ছে,' মুনিম বলেন।
এসব কোম্পানি প্রাসঙ্গিক নীতিমালা প্রণয়নে বাধা দিচ্ছে কি না সে প্রশ্নও তোলেন তিনি। বৈঠকে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।