পণ্যের প্যাকেটের তারিখ শুধু মেয়াদ শেষ হওয়ার বিষয়? মেয়াদোত্তীর্ণ বলতে আসলে কী বোঝায়?
দোকান থেকে চিপসের একটি প্যাকেট কিনলেন আপনি, কিন্তু খাওয়ার সময় গিয়ে লক্ষ করলেন মোড়কে লেখা মেয়াদের তারিখ পেরিয়ে গেছে। কিংবা সুপার শপে গিয়ে ডিসকাউন্ট দেওয়া পণ্য কিনতে গিয়ে খেয়াল করলেন মেয়াদের তারিখ শেষ হতে আর মাত্র কিছুদিন বাকি।
অনেকেই দ্বিধায় পড়ে যান এতে, তারিখ পেরিয়ে গেলেই খাওয়ার অনুপযোগী ভেবে খাবার ফেলে দেন। কিন্তু মেয়াদোত্তীর্ণ হলেই কি খাবার ফেলে দেওয়া উচিত?
খাবারের গায়ে লেখা মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখের অর্থ কী?
যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) অনুসারে, আপনি খাবারের মোড়কে মেয়াদোত্তীর্ণের যে তারিখটি দেখেন তার অর্থ এই নয় যে ওই তারিখের পরই খাবারটি একেবারে নষ্ট হয়ে যাবে।
মার্কিন কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এফডিএ কেবল শিশু খাদ্যের পুষ্টির মানের গ্যারান্টি দেওয়ার জন্য মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে, অন্য খাদ্যের তারিখ নিয়ন্ত্রণ করে না।
এফডিএ বলছে, ভোক্তারা প্রায়শই খাবারের মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ পেরিয়ে গেলে খাবার নষ্ট হয়ে গেছে ভেবে তা ফেলে দেন, এতে কোটি কোটি টাকার খাবারের অপচয় হয়। খাদ্য পণ্যগুলোতে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ নির্দেশ করে যে খাবারটির গুণমান হ্রাস পেতে শুরু করার আগে আপনার কত দ্রুত তা গ্রহণ করা উচিত।
কর্নেল কলেজ অব অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড লাইফ সায়েন্সেসের ফুড সায়েন্সের সহযোগী অধ্যাপক অ্যাবি স্নাইডারের মতে, এই নির্দেশিকাটি ভোক্তাদের বুঝতে সহায়তা করে যে কতক্ষণ খাবারের সতেজতা বজায় থাকবে।
পেন স্টেট এক্সটেনশনের সিনিয়র এক্সটেনশন এডুকেটর অ্যান্ডি হিরনিসেন বলেন, 'মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ অতিক্রম করার অর্থ এই নয় যে খাবারটি খাওয়ার জন্য অনিরাপদ বা আপনাকে অসুস্থ করে তুলবে। এটি কেবল পরামর্শ দেয় যে সেই সময়ের পরে খাবারের গুণমান খারাপ হতে পারে।'
আপনি বিভিন্নভাবে বুঝতে পারবেন যে খাবারের গুণগত মানে পরিবর্তন এসেছে। যেমন- টমেটো কেচাপের বোতল থেকে ঘন কেচাপের বদলে তরল পানি ছেড়ে দেওয়া কেচাপ বেরিয়ে আসতে পারে। কিংবা ছত্রাকের কারণে খাবারের স্বাদে পরিবর্তন আসতে পারে। কিন্তু স্নাইডার এর মতে, এরকম হলেও আপনার অসুস্থ হওয়ার কোনো ভয়ের কারণ নেই।
কখন খাবার খাওয়া নিরাপদ নয়?
ইউএসডিএ বলেছে যে, কোনো খাবারের মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ পেরিয়ে গেলেও ছত্রাকের লক্ষণ প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত এটি নিরাপদ। ব্যাকটিরিয়াজনিত কারণে খাবারে অস্বাভাবিক গন্ধ, স্বাদ বা টেক্সচারে পরিবর্তন আসলে তখন আর খাওয়া উচিত নয়।
অনেক খাবারের মোড়কে সেগুলো কীভাবে সংরক্ষণ করবেন সে সম্পর্কে নির্দেশাবলি দেওয়া থাকে। যেমন- ক্যাচাপের গায়ে এটি খোলার পরে রেফ্রিজারেশনের পরামর্শ দেওয়া থাকে। একইভাবে মাখনের প্যাকেজিংয়েও অনুরূপ সুপারিশ থাকে।
পিজ্জার মতো কিছু পণ্য ফ্রিজে রাখার প্রয়োজন হতে পারে। আবার কালো মরিচের, ব্ল্যাক ওলিভের মতো খাবারকে শীতল ও শুকনো জায়গায় সংরক্ষণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
কিন্তু ইউএসডিএ জানায়, পরামর্শ নির্দেশিকার ভিত্তিতে খাদ্য সংরক্ষণ করা না হলে তখন ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে এবং এর গুণমান প্রভাবিত হতে পারে।
আপনি যদি পিনাট বাটারের একটি বৈয়াম কিংবা দইয়ের বাটি হাতে নেন এবং দেখেন যে একদিন আগেই তাদের মেয়াদ ফুরিয়ে গেছে, এর অর্থ এই নয় যে এটি আপনাকে ফেলে দিতে হবে। ইউএসডিএ এবং এফডিএর ব্যাখ্যা অনুসারে, আপনাকে কেবল খাবারটি এখনও ভালো রয়েছে কিনা বা এতে কোনও ছত্রাক ব্যাকটেরিয়া জন্ম নিয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করতে হবে।
ইউএসডিএ ফুডকিপার নামে একটি অ্যাপ তৈরি করেছে, যা খাবারের সতেজতা এবং গুণমান বজায় রাখতে কীভাবে সংরক্ষণ করবেন তার নির্দেশিকা সরবরাহ করে। এতে খাবার কতদিন রাখা যায় এবং কোথায় সংরক্ষণ করা উচিত সে সম্পর্কিত তথ্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যের কিছু খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান খাদ্য বর্জ্য হ্রাস করতে তাদের খাবারে 'মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ' সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পণ্য সতেজতা সম্পর্কে ভোক্তাদের উদ্বেগ মোকাবেলার জন্য ১৯৭০ এর দশকে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখের লেবেল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
২০১৯ সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৮০% খাদ্য সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করা 'ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন' (এফডিএ) খাদ্য উৎপাদনকারীদের খাবারের সতেজতা বোঝানোর জন্য মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখের পরিবর্তে '...... তারিখের পূর্বে সর্বোত্তম' লেবেল ব্যবহারের জন্য পরামর্শ দিয়েছে।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন