চলে গেলেন এন্ড্রু কিশোর
সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে রাজশাহী মহানগরীর মহিষবাথান এলাকায় বোনের বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন খ্যাতিমান কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোর। তার বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর।
তার পারিবারিক বন্ধু ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শফিকুল আলম বাবু এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, 'এন্ড্রু কিশোরের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় গত দুই দিন ধরে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। আজ সন্ধ্যায় তিনি মারা গেছেন।'
ব্লাড ক্যান্সার নিয়ে গত বছরের অক্টোবর থেকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন জনপ্রিয় এই কণ্ঠশিল্পী। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পর ১১ জুন রাতে বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় আসেন। পরের দিন তিনি ঢাকা থেকে রাজশাহী চলে আসেন। এরপর থেকে তিনি তার বোন ডা. শিখার বাড়িতে ছিলেন। সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই গুণী কণ্ঠশিল্পী।
তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এন্ড্রু কিশোর তার গানের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
প্রখ্যাত এই কণ্ঠশিল্পীর মৃত্যুতে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদও গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
এন্ড্রু কিশোরের জন্ম ১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর, রাজশাহীতে। সেখানেই কেটেছে তার শৈশব ও কৈশোর। প্রাথমিকভাবে সংগীতের পাঠ তিনি শুরু করেন রাজশাহীর আবদুল আজিজ বাচ্চুর কাছে। একসময় গানের নেশায় রাজধানীতে ছুটে আসেন। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি রবীন্দ্র সঙ্গীত, নজরুল সঙ্গীত, আধুনিক গান, লোকগান ও দেশাত্মবোধক গানে রেডিওর তালিকাভুক্ত শিল্পী হন।
১৯৭৭ সালে আলম খানের সুরে 'মেইল ট্রেন' চলচ্চিত্রে 'অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ' গানের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে প্লেব্যাকযাত্রা শুরু হয় এন্ড্রু কিশোরের। এরপর তো রীতিমতো ইতিহাস! চলচ্চিত্রের গানের কিংবদন্তিতে পরিণত হন তিনি।
এন্ড্রু কিশোরের কণ্ঠে ভীষণ জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে 'জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প', 'হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস', 'ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে', 'আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি', 'আমার বুকের মধ্যেখানে', 'আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান', 'ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা', 'সবাই তো ভালোবাসা চায়', 'পড়ে না চোখের পলক', 'পদ্মপাতার পানি', 'ওগো বিদেশিনী', 'তুমি মোর জীবনের ভাবনা', 'আমি চিরকাল প্রেমের কাঙ্গাল' প্রভৃতি।
'বড় ভালো লোক ছিল' (১৯৮২), 'সারেন্ডার' (১৯৮৭), 'ক্ষতিপূরণ' (১৯৮৯), 'পদ্মা মেঘনা যমুনা' (১৯৯১), 'কবুল' (১৯৯৬), 'আজ গায়ে হলুদ' (২০০০), 'সাজঘর' (২০০৭) ও 'কি জাদু করিলা' (২০০৮) চলচ্চিত্রে গান গেয়ে সেরা পুরুষ কণ্ঠশিল্পী হিসেবে আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
মৃত্যুকালে এন্ড্রু কিশোর স্ত্রী লিপিকা এন্ড্রু এবং কন্যা সজ্ঞা (২৬) ও পুত্র সপ্তককে (২৪) রেখে গেছেন।