ঈশ্বরকে বলি তাড়াতাড়ি নিয়ে যাও, বেশি কষ্ট দিও না: এন্ড্রু কিশোর
দেশের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোরকে অক্সিজেন সাপোর্টে রাখা হয়েছে। তার শারীরিক অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন।
এদিকে, রোববার রাতে এন্ড্রু কিশোরের ফেসবুক পেজে তার স্ত্রী একটি পোস্ট প্রকাশ করেন। সেখানে এন্ড্রু কিশোর তার স্ত্রীকে বলেন, 'ঈশ্বরকে বলি আমাকে তাড়াতাড়ি নিয়ে যাও, বেশি কষ্ট দিও না।'
সোমবার দুপুরে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে এন্ড্রু কিশোরের দুলাভাই ডা. প্যাট্রিক বিপুল বিশ্বাস জানান, এন্ড্রু কিশোর সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে রাজশাহীতে এসে বর্তমানে মহানগরীর মহিষবাতান এলাকায় তার বাসায় রয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, ''এন্ড্রু কিশোরকে অক্সিজেন দেওয়া হয়েছে। তাকে নিয়েই আমরা ব্যস্ত আছি। আপনাদের সঙ্গে পরে কথা বলব।''
রোববার বিকেলে এন্ড্রু কিশোরের শারীরিক অবস্থার অবনতির খবর ছড়িয়ে পড়ে। স্বজনরা জানিয়েছেন, তার শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন। তিনি কারও সঙ্গেই কথা বলছেন না। তার শারীরিক সুস্থতার জন্য সবাইকে দোয়া করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
রোববার রাত ১০টার দিকে এন্ড্রু কিশোরের ফেসবুক পেজ থেকে তার স্ত্রী একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি এন্ড্রু কিশোরের শারীরিক অবস্থার বিবরণ জানিয়ে লেখেন, ''এখন কিশোর কোনো কথা বলে না। চুপচাপ চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে। আমি বলি কী ভাবো? সে বলে, কিছু না, পুরানো কথা মনে পড়ে আর ঈশ্বরকে বলি আমাকে তাড়াতাড়ি নিয়ে যাও, বেশি কষ্ট দিও না।''
তিনি সেখানে লেখেন, ক্যান্সারের লাস্ট স্টেজ খুব যন্ত্রণাদায়ক ও কষ্টের হয়। এন্ড্রু কিশোরের জন্য সবাই প্রাণ খুলে দোয়া করবেন, যেন কম কষ্ট পায় এবং একটু শান্তিতে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে যেতে পারে।
তিনি আরও লিখেন, আমার মনে হলো, কিশোর শুধু আমার বা আমাদের সন্তানের বা আমাদের পরিবারের নয় বরং দেশের মানুষের একটা অংশ বা সম্পদ। তাই এই কথাগুলো দেশের ভক্ত স্রোতাদের বলা বা জানানো আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
তিনি লিখেছেন, ''এটাই শেষ পোস্ট, এর পর আর কিছু বলা বা লেখার মত আমার মানসিক অবস্থা থাকবে না। এখনও মাঝে মাঝে দুঃস্বপ্ন মনে হয়, কিশোর থাকবে না অথচ আমি থাকবো, মেনে নিতে পারছি না।''
রাজশাহীর ওস্তাদ আবদুল আজিজ স্মৃতি সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক ও এন্ড্রু কিশোরের পারিবারিক বন্ধু শফিকুল আলম বাবু জানান, তিনি ভালোও নেই, আবার মন্দও নেই। তিনি উভয় অবস্থার মাঝামাঝি পর্যায়ে রয়েছেন। তবে তার অবস্থা সংকটাপন্ন বলা যায়। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।
ব্লাড ক্যান্সার নিয়ে গত বছরের অক্টোবর থেকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোর। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পর ১১ জুন রাতে বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় আসেন তিনি। পরের দিন তিনি ঢাকা থেকে রাজশাহী চলে আসেন। এরপর থেকে তিনি তার বোন ডা. শিখার বাড়িতে রয়েছেন।
এন্ড্রু কিশোরের জন্ম রাজশাহীতে। সেখানেই কেটেছে তার শৈশব ও কৈশোর। এন্ড্রু কিশোর প্রাথমিকভাবে সংগীতের পাঠ শুরু করেন রাজশাহীর আবদুল আজিজ বাচ্চুর কাছে। একসময় গানের নেশায় রাজধানীতে ছুটে আসেন। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি রবীন্দ্র সঙ্গীত, নজরুল সঙ্গীত, আধুনিক গান, লোকগান ও দেশাত্মবোধক গানে রেডিওর তালিকাভুক্ত শিল্পী হন।
১৯৭৭ সালে আলম খানের সুরে 'মেইল ট্রেন' চলচ্চিত্রে 'অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ' গানের মধ্য দিয়ে এন্ড্রু কিশোরের চলচ্চিত্রে প্লেব্যাকযাত্রা শুরু হয়। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
এন্ড্রু কিশোরের খুব জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে 'জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প', 'হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস', 'ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে', 'আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি', 'আমার বুকের মধ্যেখানে', 'আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান', 'ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা', 'সবাই তো ভালোবাসা চায়', 'পড়ে না চোখের পলক', 'পদ্মপাতার পানি', 'ওগো বিদেশিনী', 'তুমি মোর জীবনের ভাবনা', 'আমি চিরকাল প্রেমের কাঙ্গাল' প্রভৃতি। এন্ড্রু কিশোর আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন।