সিলেটে বিনামূল্যে বাসায় পৌঁছে যাবে অক্সিজেন সিলিন্ডার
গত ২২ জুন শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে মারা যান সিলেটের জকিগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা এহিয়া আহমদ। শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ার পর তার জন্য বিভিন্ন জায়গায় অক্সিজেন সিলিন্ডার খুঁজতে থাকে পরিবার। কিন্তু সময়মতো পাওয়া যায়নি।
এহিয়া আহমদের ভাগ্নে হোসাইন আহমদ সুজাত বলেন, মামার শরীর খারাপ করার পর অনেক জায়গায় অক্সিজেন সিলিন্ডার খুঁজেছি। কিন্তু কোথাও পাইনি। শেষ পর্যন্ত অনেক কষ্টে ১০ হাজার টাকার একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার ২৮ হাজার টাকা দিয়ে কিনি। তবে অক্সিজেন দেওয়ার আগেই মামা মারা যান।
সিলেটে এমন ঘটনা ঘটছে আরও। করোনা সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পর থেকেই বেড়েছে অক্সিজেনের চাহিদা। এই সুযোগে দামও বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। অনেক ক্ষেত্রে বেশি দমেও মিলছে না সিলিন্ডার। এতে বিপাকে পড়ছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।
এই অবস্থায় সিলেটের রোগীদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে 'আব্দুল জলিল ফাউন্ডেশন' নামে এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। নগরীতে বিনামূল্যে বাড়ি বাড়ি অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিচ্ছে তারা। নগরীর যে কেউ প্রয়োজনে ফোন করে এ সেবা গ্রহণ করতে পারেন। এজন্য খোলা হয়েছে হটলাইনও।
শনিবার থেকে এই সেবা চালু করে সংগঠনটি। এরপর থেকে প্রতিদিন অক্সিজেন সিলিন্ডারের জন্য অনেক ফোন আসছে বলে জানিয়েছেন এর সঙ্গে সম্পৃক্তরা।
এই সংগঠনের পর অঙ্গীকার বাংলাদেশ, সিলেট; পে ইট ফরোয়ার্ড বাংলাদেশ ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন নামের তিনটি বেসরকারি সংস্থাও বিনামূল্যে বাড়ি বাড়ি অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।
সিলেটের ব্যবসায়ী নেতা আবদুল জব্বার জলিল নিজের নামে এই ফাউন্ডেশন গড়ে তোলেন। করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন মানবিক উদ্যোগ নিয়ে অসহায় মানুষের সহায়তা করে এসেছে ফাউন্ডেশনটি। এবার বিনামূল্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হলো।
এ ব্যাপারে ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার জলিল বলেন, প্রতিদিনই শুনতে পাই অনেকে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেও অক্সিজেন সিলিন্ডার পাচ্ছেন না। অক্সিজেনের অভাবে রোগী মারা যাওয়ার খবরও আসছে। এ অবস্থায় অসুস্থ মানুষদের পাশে দাঁড়াতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আপাতত প্রতিদিন অন্তত ১০ জন রোগীদের সেবা প্রদানের প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। অক্সিজেন সিলিন্ডার বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য দুটি গাড়িও রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে সেবার পরিধি আরও বাড়ানো হবে।
এই কার্যক্রম শুরুর পর থেকে ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিদিন ৬ থেকে ৭ রোগীকে সেবা দিতে হচ্ছে।
এই কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। তিনি বলেন, কেবল করোনা আক্রান্ত না, অন্য রোগীদেরও অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। সবার কথা বিবেচনা করেই আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি। সিলেটে অক্সিজেনের অভাবে কোনো রোগীকে যাতে দুর্ভোগ পোহাতে না হয়, এই চিন্তা থেকেই এমন উদ্যোগ।
ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা যায়, অক্সিজেন সিলিন্ডারের প্রয়োজন হলে ০১৭৩৩-৩০৯৮৬২ ও ০১৭৩৩-৩০৯৮৬৩ নম্বরে যে কেউ ফোন করে যোগাযোগ করতে পারেন। ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে গাড়ি দিয়ে রোগীর বাসায় অক্সিজেন সিলিন্ডার পাঠানো হবে।
এই উদ্যোগের সাথে যুক্ত ডা. এহসানুজ্জামান খান বলেন, রোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে ফোন দিলে আমরা বাসায় অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে যাবো। এসময় পালস অক্সিমিটার দিয়ে রোগীর শারিরীক অবস্থা পরীক্ষা করা হবে। যদি অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় তাহলে তাকে এ সেবা দেওয়া হবে।
এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত আরেক চিকিৎসক ডা. আবু ইউসুফ নাজিম বলেন, করোনা আক্রান্ত ৮০ শতাংশ রোগীই বাসায় চিকিৎসা নিতে পারবেন। এতে হাসপাতালের ওপর চাপও কমবে। তবে বাসায় চিকিৎসাধীন করোনা আক্রান্ত রোগীদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে অক্সিজেনের প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু তাৎক্ষণিক এই সেবা পাওয়া যায় না। এতে রোগীর প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। এই সংকটের কথা চিন্তা করে সিলেট শহরের রোগীদের জন্য জরুরি অক্সিজেন সেবা চালু করা হয়েছে।
অঙ্গীকার বাংলাদেশ, সিলেট; পে ইট ফরোয়ার্ড বাংলাদেশ ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন'র সঙ্গে সম্পৃক্ত অ্যাডভোকেট মো. মনির হোসেন বলেন, আগামী সপ্তাহ থেকে আমরাও এই কার্যক্রম শুরু করব। প্রাথমিক অবস্থায় ১ টি সিলিন্ডার দিয়ে কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। অক্সিজেন সিলিন্ডারের প্রয়োজন হলে যে কেউ ০১৭১৫০১৭৮২০ ও ০১৮৪২৮২৩৩৩২ এই দুই নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন।