প্রতিদিনই চুল ধোয়া কি খারাপ?
চুলের যত্নে শ্যাম্পুর জুড়ি নেই। তবে প্রশ্ন হলো- শ্যাম্পু কি প্রতিদিনই করতে হবে? নাকি সপ্তাহে দু'দিন বা তিনদিন শ্যাম্পু করাই যথেষ্ট?
অনেকে মনে করেন, প্রতিদিন শ্যাম্পু করাটা উল্টো চুলের ক্ষতিই ডেকে আনতে পারে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরাই বা কি বলছেন? চলুন জেনে নেওয়া যাক...
নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ফেইনবার্গ স্কুল অব মেডিসিনের ডার্মাটোলজি বিভাগের ভাইস চেয়ার ড. মুরাদ আলমের ভাষ্য- আপনি প্রতিদিন শ্যাম্পু করবেন কি না তা বেশকিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করছে। যেমন, চুলের গঠন, আপনার চুল কতটা অয়েলি বা তৈলাক্ত হয়, জীবনযাপনের অভ্যাস, বয়স ইত্যাদি।
শ্যাম্পু আপনার স্ক্যাল্প (মাথার ত্বক) ও চুল থেকে খুশকি, ঘাম ও ধুলো-বালির মতো ময়লা দূর করে। এটি স্ক্যাল্পের সিবামও দূর করে।
সিবাম হলো মাথার ত্বক থেকে নিঃসৃত এক ধরনের তেল, যা চুল সুন্দর ও মসৃণ রাখে, মাথার ত্বক রুক্ষ হয়ে পড়া থেকে আটকায় এবং বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রাখে।
তবে সিবামের পরিমাণ বেড়ে যাওয়াটাও একদিক থেকে সমস্যা হতে পারে।
কখন প্রতিদিন শ্যাম্পু করবেন?
ডা. মুরাদ আলম বলেন, যাদের স্ক্যাল্প বেশি তৈলাক্ত অর্থাৎ যাদের ত্বকে বেশি পরিমাণে সিবাম উৎপন্ন হয়, তাদের জন্য প্রতিদিন শ্যাম্পু করাটা যুৎসই হতে পারে।
আবার যাদের চুল বেশ মোটা, তাদের চুল খুব দ্রুত তৈলাক্ত হয়ে উঠতে পারে। তারাও প্রতিদিন শ্যাম্পু করতে পারেন।
আবার অনেকে চুলে ঘন ঘন জেল বা হেয়ার স্প্রের মতো প্রসাধনী ব্যবহার করেন। সেক্ষেত্রেও প্রতিদিন শ্যাম্পু করা যেতে পারে।
কখন প্রতিদিন শ্যাম্পু করা এড়িয়ে চলবেন?
চুলের গঠন অনুযায়ী প্রতিদিন শ্যাম্পু করাটা কিছু ধরনের চুলের জন্য উপযোগী না-ও হতে পারে। যেমন, কোঁকড়া চুল। প্রতিদিন বা প্রতি দু'দিন অন্তর শ্যাম্পু করার ফলে এ ধরনের চুল ভঙ্গুর হয়ে পড়তে পারে বা ভেঙে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন নিউইয়র্ক সিটির মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের ডার্মাটোলজির সহকারী ক্লিনিক্যাল অধ্যাপক রোজমারি ইঙ্গেলটন।
আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব ডার্মাটোলজির পরামর্শ- যদি আপনি কৃষ্ণাঙ্গ হন, সেক্ষেত্রে সপ্তাহে একবার শ্যাম্পু করাই যথেষ্ট।
চুল যতই সূক্ষ্ম বা তৈলাক্ত হোক না কেন, তা নিয়মিত পরিষ্কার রাখার পরামর্শ নিউ ইয়র্ক সিটির ইদ্রিস ডার্মাটোলজির প্রতিষ্ঠাতা ও চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ শেরিন ইদ্রিসের।
তার কথা- 'স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্যের প্রসঙ্গ যখন আসে, তখন আমি প্রতিদিন শ্যাম্পু করার পরামর্শ দেই না। কারণ, এর ফলে স্ক্যাল্পে জ্বালাপোড়াসহ অন্যান্য সমস্যা হতে পারে।'
ডা. মুরাদ আলম জানান, চুলে রঙ ও রিল্যাক্সারের মতো কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট চুলের শ্যাফটের আরও ক্ষতি করতে পারে। সেক্ষেত্রে তিনি এমন চুলে সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার শ্যাম্পু করার পরামর্শ দিয়েছেন।
কিছু ওষুধ যেমন স্ট্যাটিন, অ্যান্টিহিস্টামিন ও ডাইইউরেটিক্স ত্বক ও স্ক্যাল্পের শুষ্কতা বাড়িয়ে তুলতে পারে। যদি আপনি এসব ওষুধ গ্রহণ করে থাকেন, তাহলে শুষ্কতা ও জ্বালাপোড়া ঠেকাতে ময়েশ্চারাইজার রয়েছে এমন হালকা কেমিক্যালযুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন।
এছাড়াও গরম পানির পরিবর্তে উষ্ণ পানির সঙ্গে শ্যাম্পু ব্যবহারও চুলের জন্য উপকারী হতে পারে। গরম পানি ব্যবহারের ফলে স্ক্যাল্প থেকে অধিক পরিমাণে তেল নিঃসৃত হয়।
শ্যাম্পু ব্যবহারের ক্ষেত্রে বয়সও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ডা. মুরাদ আলমের মতে, সাধারণত শৈশবকালে সিবাম তৈরি হয় হয় ধীরে ধীরে। বয়ঃসন্ধিকালে এটি তৈরি হওয়া মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যায়। যৌবনকালে এটি তৈরি হওয়া বাড়েও না, কমেও না। কিন্তু ৭০ বছর বয়সের পরে এটি তৈরি হওয়া ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে।
তাই আপনি বয়স্ক হলে আপনার স্ক্যাল্প শুষ্ক হতে পারে এবং প্রতিদিনই স্ক্রাবের (শ্যাম্পু, পানি ও ব্রাশ দিয়ে জোরে জোরে ডলে পরিষ্কার করা) প্রয়োজন না-ও হতে পারে।
নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস থাকলে সেক্ষেত্রে যা করবেন
আপনার যদি প্রতিদিনই ব্যায়ামের অভ্যাস থাকে এবং পরনে যদি অতিরিক্ত জামা-কাপড় থাকে, তাহলে ঘামের লবণ জমে আপনার শরীরের লোমকূপ ও চুলের গোড়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যা পরিষ্কারের জন্য প্রতিদিন শ্যাম্পু করা বা পরিষ্কার পানি দিয়ে আপনার চুল ধোয়া লাগতে পারে। এক্ষেত্রে অন্তত যদি পরিষ্কার পানি দিয়েও চুল না ধুয়ে ফেলেন, তাহলে আপনার চুলের গোড়ায় প্রদাহ হতে পারে।
ডা. ইদ্রিস বলেন, যদি আপনার চুল তৈলাক্ত ধরনের হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে প্রতিদিনই চুল ধোয়াটা আপনার জন্য আরও বেশি জরুরি। তবে সবসময়ই শ্যাম্পু ব্যবহারের দরকার নেই। আর যদি শ্যাম্পু ব্যবহার করতেই হয়, তাহলে সালফেটমুক্ত ও তুলনামূলক কম কেমিক্যালযুক্ত শ্যাম্পু বেছে নিতে পারেন। সেই সঙ্গে চুল ধোয়ার ক্ষেত্রে গরম পানি ও মাত্রাতিরিক্ত স্ক্রাবিং এড়িয়ে চলুন।
আর ভেজা চুল শুকানোর ক্ষেত্রে ডা. মুরাদ আলমের পরামর্শ- সম্ভব হলে বাতাসেই চুল শুকিয়ে নেওয়া। কারণ এতে চুলের ক্ষতি সবচেয়ে কম হয়।
ডা. মুরাদ আলম বলেন, আপনি প্রতিদিন চুল ধোয়ার পরও যদি স্ক্যাল্পে জ্বালাপোড়া না হয়, কিংবা চুল শুষ্ক ও ভঙ্গুর হয়ে না ওঠে, তাহলে আপনি চাইলে প্রতিদিনই শ্যাম্পু করতে পারেন।
অনুবাদ: রেদওয়ানুল হক