ঈদে লঞ্চে যাত্রী বাড়াতে নানা উদ্যোগ; অগ্রিম টিকেট ২০ রোজা থেকে
পদ্মা সেতু চালুর পর থেকেই নৌপথে যাত্রীদের চাপ কমে গেছে। এছাড়াও যানজট ও সড়কে অব্যবস্থাপনার কারণে সদরঘাট পর্যন্ত যাত্রীদের পৌঁছানোটাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
যানজটে ভারি ব্যাগ, বাচ্চা নিয়ে অনেক সময় হেঁটে টার্মিনালে পৌঁছতে হয়। এই সমস্যা সমাধানে ঈদের আগে সদরঘাট থেকে বাহাদুরশাহ পার্ক পর্যন্ত রাস্তা যানজটমুক্ত এবং সদরঘাট টার্মিনাল ও লঞ্চগুলো হকারমুক্ত রাখতে নির্দেশ দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ।
পাশাপাশি যাত্রীদের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসগুলোকে ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকায় সড়কের পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একইসাথে সদরঘাট টার্মিনালের সম্মুখস্থ সড়ক থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত রাস্তার দুপাশে মধ্য রাত থেকে গণপরিবহনগুলোকে এলোমেলোভাবে অবস্থান না করে নির্ধারিত স্ট্যান্ডে পার্কিং নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
গত ১৮ মার্চ অভ্যন্তরীণ নৌপথে নিরাপদ ও দুর্ঘটনামুক্ত নৌযান চলাচল নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর সভাকক্ষে সকল স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে একটি সভা হয়। সভার কার্যবিবরণী থেকে এমন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে জানা যায়।
একইসাথে সভায় যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের স্বার্থে লঞ্চে মোটরসাইকেল পরিবহণ সীমিত করা হয়েছে। যাতে কোনোভাবেই ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন করা না হয়।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১২০ ফুট দৈর্ঘ্যের লঞ্চে দুইটি, ১২০ ফুট থেকে ২০০ ফুট দৈর্ঘ্যের লঞ্চে চারটি এবং ২০১ ফুট থেকে ৩০০ ফুট দৈর্ঘ্যের লঞ্চে সর্বোচ্চ ছয়টি মোটরসাইকেল পারাপার করা যাবে।
এছাড়া মোটরসাইকেল পরিবহনের ভাড়াও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। ওজন ও আকৃতি বিবেচনা করে ঢাকা-চাঁদপুর পর্যন্ত প্রতিটি মোটরসাইকেলের জন্য ৩০০ টাকা এবং ঢাকা-চাঁদপুরের ডাউনে (বরিশাল-ঝালকাঠী-পটুয়াখালী-বরগুনা) প্রতিটি মোটরসাইকেলের জন্য ৫০০ টাকা।
যদিও সভায় এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন লঞ্চ বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপথ যাত্রী পরিবহণ সমিতির (বিআইডব্লিউপিসিএ)-এর সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী।
বর্তমানে লঞ্চে যাত্রী কমে গেছে উল্লেখ করে সিদ্দিকুর রহমান মটরসাইকেল পারাপারের সংখ্যা বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন। তবে সেটা সভায় আমলে নেওয়া হয়নি।
এছাড়াও যাত্রীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় যে-সব সিদ্ধান্ত হয়েছে তার মধ্যে আছে, ঈদের আগে পাঁচ দিন, ঈদের দিন এবং পরে পাঁচ দিনসহ মোট ১১ দিন সদরঘাট হয়ে নৌযানে মালামাল পরিবহণ বন্ধ থাকবে। রাতের বেলায় বন্ধ থাকবে স্পিডবোট চলাচল। নৌপথে জরুরি প্রয়োজনে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এবং বিআইডব্লিউটিএর হটলাইন ১৬১১৩ এ যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
এদিকে ২০ রোজা থেকে অগ্রিম টিকেট বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে লঞ্চ মালিকরা।
বিআইডব্লিউপিসিএ-এর সিনিয়র সহ-সভাপতি বদিউজ্জামান বাদল বলেন, "২০ রোজা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের লঞ্চে অগ্রিম টিকেট দেওয়া হবে। কেউ চাইলে আমরা এখনও দিতে পারব।"
এদিকে মালিকরা লঞ্চে যাত্রী আশানুরূপ না হওয়ার আশঙ্কা করছেন। বদিউজ্জামান বাদল বলেন, "আগে অগ্রিম টিকেট শুরুর আগেই অনেকে টিকিটের কথা বলে রাখত। এবার এখন পর্যন্ত কেউ অগ্রিম টিকেটের কথা বলেনি। আমরা আশঙ্কা করছি এবার লঞ্চে তেমন যাত্রী হবে না।"
বদিউজ্জামান বাদল জানান, স্বাভাবিক সময়ের মতই সদরঘাট থেকে সীমিত (৩০ থেকে ৩৫টি) লঞ্চ ছাড়া হবে। যাত্রী হলে লঞ্চের সংখ্যা বাড়ানো হবে। গত ঈদে ৬০ থেকে ৬৫টি লঞ্চ চালানো হয়েছিল।
গত ঈদে শেষ মুহূর্তে ব্যাপক যাত্রী হয়েছিল। নৌপুলিশের তথ্যমতে, গত বছরের ঈদুল ফিতরের সময় সদরঘাট থেকে বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী ও চাঁদপুরগামী লঞ্চে ১০ লাখ ৬৩ হাজার ৭৭৫ জন যাত্রী পরিবহণ করা হয়।