চাল সরবরাহ কম, লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার মেঘনা নদীর ভিওসি ঘাটে প্রতিদিন প্রায় এক লাখ মণ ধানের বেচা-কেনা হয়। এই হাট দেশের পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ধানের মোকাম। প্রতিবছর এই হাটকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেই চাল সংগ্রহ করে সরকার।
কিন্তু এবার সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে খরচ বেশি পড়ায় চাল কম সরবরাহ করছেন মিল মালিকরা। ফলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে চাল সংগ্রহে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
চাতালকল মালিক সমিতির অভিযোগ, বেপারিরা হঠাৎ করেই ধানের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। সেজন্য বাড়তি দাম দিয়ে ধান কিনে লোকসান গুণতে হচ্ছে। এতে চাল সরবরাহ কার্যক্রমে বিঘ্নতার সৃষ্টি হচ্ছে। যেসব মালিকরা কম দামে ধান কিনে রেখেছিলেন, তারাই এখন সরকারি গুদামে চাল সরবরাহ অব্যাহত রেখেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন নৌকায় করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাড়াও কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ, সিলেট ও হবিগঞ্জ জেলার হাওরা লে উৎপাদিত ধান আশুগঞ্জ ধানের মোকামে নিয়ে আসেন কৃষক ও বেপারিরা। প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মোকামে চলে ধানের বেচা-কেনা। মূলত জেলার সাড়ে তিন শতাধিক চাতালকলে ধানের যোগান দেয় এই মোকাম।
আশুগঞ্জ উপজেলা সদরের মেঘনা নদীর ভিওসি ঘাটে বসা ধানের এই হাটটি শতবছরের পুরনো। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত ধানের বেচাকেনা হয় হাটে। ধানের শ্রমিক, ব্যাপারি, কৃষক ও মিল মালিক মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার মানুষের আনাগোনা হয়।
প্রতিবছরই জেলার চাতালকল মালিকদের সঙ্গে সিদ্ধ ও আতপ চাল সংগ্রহের জন্য চুক্তি করে খাদ্য বিভাগ। চুক্তি অনুযায়ী গত ৭ মে থেকে শুরু হওয়ায় চাল সংগ্রহ কার্যক্রম আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চলবে। এ বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ৪১ হাজার টন সিদ্ধ ও আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।
এর মধ্যে শুধু আশুগঞ্জ উপজেলার চাতালকল মালিকরাই সরবরাহ করবেন সাড়ে ২৭ হাজার টন চাল। মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) পর্যন্ত সাড়ে ১৮ হাজার টন চাল সংগ্রহ হয়েছে বলে জানিয়েছে খাদ্য বিভাগ।
তবে এবার মোকামে ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা মতো ধান সংগ্রহ করতে পারছেন না চাতালকল মালিকরা। এতে ক্ষতির কারণ দেখিয়ে সরকারি গুদামে চাল সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন তারা। আর ধান বিক্রি কম হওয়ায় কৃষক-বেপারিরাও মোকামে ধানের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে এ বছর সরকারের চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
আশুগঞ্জ উপজেলার কয়েকজন চাতালকল মালিক জানান, ধান থেকে চাল তৈরি পর্যন্ত সব খরচ মিলিয়ে প্রতি মণ ধানের দাম পড়ছে এক হাজার টাকা। আর প্রতি মণ ধানে চাল হয় ২৪ কেজি। সে হিসেবে প্রতি কেজি চালের দাম পড়ছে ৪০ টাকারও বেশি। কিন্তু সরকার ৩৬ টাকা দরে চাল সংগ্রহ করছে। এতে লোকসান গুণতে হচ্ছে চাতালকল মালিকদের। সেজন্য চাল সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন তারা।
আশুগঞ্জ উপজেলা চাতালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হেলাল শিকদার বলেন, আমরা প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের কাছ থেকে সরসারি ধান কিনি না। কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনেন বেপারিরা।
''বেপারিরা কারসাজি করে ধানের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রতি কেজি চালে আমাদের চার টাকা করে লোকসান হচ্ছে'', বললেন হেলাল শিকদার।
''সবাই চাতালকল মালিকদের দোষারোপ করেন। কিন্তু এখানে আমাদের কিছুই করার নেই। আমাদের অবস্থা খারাপ। বেপারিরাই দাম বাড়িয়ে সংকট তৈরি করেছে। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের কথাবার্তা হচ্ছে। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চাল সরবরাহ করতে'', যোগ করেন তিনি।
এ ব্যাপারে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী বলেন, চাতালকল মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। গত দুই বছর তাদের প্রতি কেজি চালে পাঁচ থেকে সাত টাকা করে লাভ হয়েছে। এবার হয়তো তাদের প্রতি কেজিতে এক টাকা বা ৫০ পয়সা করে লোকসান হচ্ছে।
''যেহেতু আমাদের সঙ্গে তারা চুক্তি করেছে, সেজন্য লোকসান হলেও তারা আমাদের চাল দিচ্ছে। আশা করি আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে'', বললেন সুবীর নাথ।