ঈদ মৌসুমে দেড় মাসে ৫০০ কোটি টাকার সেমাইয়ের বাজার উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে
বছরের বেশিরভাগ সময় ৬০ বছর বয়সি জাহাঙ্গীর আলম অ্যালুমিনিয়ামের তৈজসপত্র তৈরির কারখানায় কাজ করেন। কিন্তু প্রতি ঈদে তিনি পেশা বদল করে হয়ে ওঠেন সেমাইয়ের কারিগর।
বগুড়ার স্থানীয় এ বাসিন্দা গত ২০ বছর ধরে সেমাই কারখানায় মৌসুমি কারিগর হিসেবে কাজ করে আসছেন। এ কাজে তার ভালোই আয় হয়।
তিনি বলেন, 'রমজান মাস ও ঈদুল ফিতরের ঈদকে সামনে রেখে দেড় মাস বড় পরিসরে কাজ চলে। এ সময় আমি প্রায় ৭০ হাজার টাকা আয় করি।'
তিনি একা নন। ঈদের সময় সেমাইয়ের চাহিদা বাড়লে বগুড়ার কারখানাগুলোয় বিপুল সংখ্যক মৌসুমি শ্রমিক চুক্তিভিত্তিক যোগদান করেন।
স্থানীয় হিসেব অনুযায়ী, বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের অন্যান্য জেলায় ঈদ মৌসুমে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার সেমাই উৎপাদিত হয়।
বগুড়ার স্থানীয় সেমাই শিল্প এর গুণমানের জন্য সারাদেশে এবং তার বাইরেও সুনাম অর্জন করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ জেলার সেমাই মধ্যপ্রাচ্যেও যাচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, রোজার ১৫ দিন আগে থেকে শুরু হওয়া এ কর্মযজ্ঞে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে ২৬ হাজার ২০০ মেট্রিক টনের বেশি সেমাই উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে এ অঞ্চলের ১৬টি জেলায় ৩৪০ কোটি টাকার ব্র্যান্ডের সেমাই এবং ২০০ কোটি টাকার নন-ব্র্যান্ড সেমাই উৎপাদিত হয়।
ঈদ মৌসুমে জেলার অন্তত ১৭০টি কারখানা সেমাই উৎপাদন করে। বাংলাদেশ ব্রেড, বিস্কিট অ্যান্ট কনফেকশনারি দ্রব্য প্রস্তুতকারক সমিতি উত্তরবঙ্গ পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কারখানার সংখ্যা আড়াইশ ছাড়িয়েছে।
এসব পণ্য ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেটসহ সারাদেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বগুড়ায় উৎপাদিত সেমাই স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে স্বল্প পরিসরে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও রপ্তানি হচ্ছে।
বগুড়ার ১০০ বছরের পুরোনো আকবরিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান হাসান আলী আলাল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ঈদের মৌসুমে মোট উৎপাদিত সেমাইয়ের এক-তৃতীয়াংশ জেলায় উৎপাদিত হয়। গ্রুপটি গত কয়েক বছর ধরে সৌদি আরব, কাতার এবং ইয়েমেনে সেমাই রপ্তানি করে আসছে।
তিনি বলেন, 'আমরা সেসব দেশের বাজার দখলের চেষ্টা করছি। রপ্তানিসংক্রান্ত বিভিন্ন সরকারি নীতি শিথিল করা হলে সেমাই রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।'
বগুড়ায় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ১০টি কারখানা রয়েছে যেগুলো সারাবছর সেমাই উৎপাদন করে। বাকিগুলো মূলত ঈদ মৌসুমে উৎপাদন করে।
স্থানীয় ব্র্যান্ড রয়্যালের জন্য সেমাই উৎপাদনকারী খাজা কনফেকশনারির একজন প্রবীণ সেমাই কারিগর রুস্তম আলী বলেন, প্রতিষ্ঠানটিতে ৪০ জন শ্রমিক কাজ করেন। প্রতিটি কারখানায় শ্রমিকেরা ৮–১২ জনের দলে বিভক্ত। প্রতিটি দল প্রতিদিন প্রায় ১২ বস্তা আটা-ময়দার সেমাই প্রস্তুত করতে পারে।
শ্রমিকদের কেউ কেউ তাদের নিয়মিত কাজের চেয়ে বেশি মজুরির প্রত্যাশায় ঈদের মৌসুমে এসব সেমাই কারখানায় কাজ করেন। ঈদশেষে চাহিদা কমে গেলে তারা আবার অন্য পেশায় ফিরে যান। আবার কেউ কেউ ঈদের সময় চুক্তিভিত্তিক এবং বছরের বাকি সময় মাসিক বেতনের ভিত্তিতে কাজ করেন।
বগুড়ার সেমাইয়ের উচ্চ সুনামের কারণে স্থানীয় এ শিল্প অনেক নতুন উদ্যোক্তাকেও আকৃষ্ট করছে।