জন্মহার কমায় জাপানের স্থানীয় জনসংখ্যা রেকর্ড হারে কমছে, বাড়ছে বিদেশির সংখ্যা
প্রজনন হার বাড়ানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছে জাপান সরকার। কিন্তু তা সত্ত্বেও জাপানের স্থানীয় জনসংখ্যা প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১০০ জন হারে কমছে।
শুক্রবার (১২ এপ্রিল) প্রকাশিত সরকারি তথ্য অনুসারে, ১৯৫০ সালে তুলনীয় রেকর্ড রাখা শুরু হওয়ার পর থেকে গত বছরই জাপানি নাগরিকদের সংখ্যা এক বছরে সবচেয়ে বেশি কমেছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১২ মাসে স্থানীয় জাপানি নাগরিকের সংখ্যা কমেছে ৮ লাখ ৩৭ হাজার।
হিসাব অনুযায়ী, এ ১২ মাসে জাপানি নাগরিকের সংখ্যা দৈনিক ২ হাজার ২৯৩ জন কমেছে। অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় কমেছে মাত্র ৯৬ জনের কিছু কম।
স্বরাষ্ট্র ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় প্রকাশিত একই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত অক্টোবরে জাপানের মোট জনসংখ্যা ছিল ১২৪.৩ মিলিয়ন—যা আগের বছরের চেয়ে ৫ লাখ ৯৫ হাজার কম। অন্যদিকে দেশটিতে অভিবাসী কর্মী, বিদেশি শিক্ষার্থী এবং বিদেশী স্থায়ী বাসিন্দার সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।
গত বছর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেশটির ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস এজেন্সি বলেছে, জাপানে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকদের সংখ্যা ২০২৩ সালের জুনের শেষে রেকর্ড সর্বোচ্চ ৩.২ মিলিয়নে পৌঁছেছে। নির্দিষ্ট কিছু খাত ও কারিগরি ইন্টার্নশিপে দক্ষ কর্মীদের জন্য নেওয়া ভিসা কর্মসূচির আওতা বাড়ানোর কারণে দেশটিতে বিদেশি নাগরিকের সংখ্যা বেড়েছে।
এই নিয়ে টানা ১৩ বছর কমল জাপানি নাগরিকের সংখ্যা। জনসংখ্যা হ্রাস এবং প্রবীণ নাগরিকের সংখ্যা বৃদ্ধিতে উন্নত দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে জাপান। এশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের উন্নত দেশগুলোতেও জাপানের মতোই নিজস্ব নাগরিক হ্রাস ও প্রবীণ নাগরিকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে ক্রমেই।
একটি প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালে জাপানে রেকর্ড সর্বনিম্ন ৭ লাখ ৫৮ হাজার ৩৬১টি শিশু জন্মগ্রহণ করেছে, যা এর আগের বছরের তুলনায় ৫.১ শতাংশ কম।
জাপানের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অভ পপুলেশন অ্যান্ড সোশ্যাল সিকিউরিটি রিসার্চ (আইপিএসএস) তাদের সাম্প্রতিক পূর্বাভাসে বলেছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে সংখ্যাটি নতুন শিশু জন্মের সংখ্যা ৭ লাখ ৫৫ হাজারে নেমে আসবে। অর্থাৎ দেশটিতে জনসংখ্যা হ্রাসের হার এখন প্রত্যাশার চেয়ে অনেক দ্রুত।
জাপানে এখন ১৫ বছরের কম বয়সি মানুষের সংখ্যা রেকর্ড সর্বনিম্ন। মোট জনসংখ্যার ১১.৪ শতাংশের বয়স ১৫ বছরের কম। বিপরীতে ৬৫ বছরের বেশি বয়সিদের মানুষের সংখ্যা ২৯.১ শতাংশ, যা রেকর্ড সর্বোচ্চ।
জনসংখ্যার এই হ্রাস জাপানকে দীর্ঘস্থায়ী জনমিতিক সংকটে ফেলে দিয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেছেন, এ সংকটের ফলে তার দেশ 'সামাজিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে অক্ষম হওয়ার দ্বারপ্রান্তে' চলে গেছে।
সংকট কাটাতে চিকিৎসা, শিক্ষা ও অন্যান্য খরচ কমানোর মাধ্যমে জাপানিদের আরও বেশি বেশি সন্তান নিতে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে গত বছর একটি প্যাকেজ হাতে নেয় জাপান সরকার। সেইসঙ্গে প্রজনন হার হ্রাসের দীর্ঘস্থায়ী ধারা বদলাতে ব্যর্থ হওয়া পুরনো সব নীতিও ঢেলে সাজিয়েছে।
শুক্রবার আইপিএসএস আরেকটি দুঃসংবাদ দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, জাপানে পরিবারের আকার ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অবিবাহিত মানুষের সংখ্যা।
আইপিএসএসের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে জাপানে প্রতি পরিবারের গড় সদস্যসংখ্যা ছিল ২.২১ জন। একাকী বাস করা বাড়তে থাকায় ২০২৩ সালে দেশটিতে পরিবারপ্রতি গড় সদস্যসংখ্যা ২ জনের নিচে নেমে যাওয়ার পথে ছিল।