ফাহিম হত্যাকাণ্ড: 'অভিযুক্ত খুনির বিরুদ্ধে জোরালো প্রমাণ'
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের জনপ্রিয় রাইড শেয়ারিং অ্যাপ 'পাঠাও'য়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহ হত্যাকাণ্ডে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার হওয়া তার সহকারীর বিরুদ্ধে জোরালো প্রমাণ পাওয়ার দাবি করা হয়েছে।
নিরাপত্তামূলক ভিডিও ফুটেজের উল্লেখ করে শনিবার এ দাবি করেছেন প্রসিকিউটররা।
ফাহিমের নির্বাহী সহকারী, ২১ বছর বয়সী টাইরেস হ্যাসপিলকে ম্যানহাটনের লোয়ার ইস্ট সাইডে নৃশংস অপরাধ করায় জামিন-অযোগ্য দ্বিতীয়-ডিগ্রি খুনের অভিযোগে গত মাঝরাতে অভিযুক্ত করা হয়।
এর আগে, ফাহিমের কাছ থেকে ৯০ হাজার মার্কিন ডলার চুরি করে ধরা পড়েন হ্যাসপিল। কিন্তু ফাহিম তাকে পুলিশে ধরিয়ে না দিয়ে, বরং কিস্তিতে ওই টাকা ফেরত দেওয়ার সুযোগ দেন। অথচ এ ঘটনায় উল্টো ফাহিমকে হ্যাসপিল নির্মমভাবে খুন করেন বলে অভিযোগে বলা হয়।
নিরাপত্তাকাজে ব্যবহৃত নজরদারি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, হ্যাসপিল একটি দোকান থেকে করাত ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সেইসব জিনিস কিনছেন, যেগুলো মঙ্গলবার ক্রাইম-সিনে পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ তোলার সময় আদালতে এ কথা বলেন ম্যানহাটনের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি লিন্ডা ফোর্ড।
ফুটেজে খুনির পরনে যে পোশাক দেখা গেছে, ব্রুকলিনে হ্যাসপিলেন বাসা থেকে উদ্ধার করা পোশাকের সঙ্গে সেগুলোর মিল রয়েছে; তাছাড়া তদন্তকারীরা অপরাধটির ঘটনাস্থলে হ্যাসপিলের আসা-যাওয়ার ডিজিটাল ট্র্যাকও নিশ্চিত করেছেন বলে জানান ফোর্ড।
ম্যানহাটন ক্রাইম কোর্টে হ্যাসপিলের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক ওই অভিযোগ তোলার সময় ফোর্ড আরও বলেন, 'এই মামলার ক্ষেত্রে জোরালো প্রমাণ রয়েছে।'
'অপরাধটির আগে ও পরে তাকে (হ্যাসপিল) ওই ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে। ভিডিওটেপ দেখে অন্তত দুজন তাকে শনাক্ত করেছেন।'
অভিযোগে বলা হয়, সোমবার ১টা ৪৫ মিনিটের দিকে ফাহিমের পিছু পিছু তার অ্যাপার্টমেন্টের লিফটে ওঠেন হ্যাসপিল। ফাহিমের মালিকানাধীন সম্পত্তি- সাত তলায় লিফটের দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গেই টেজার গান দিয়ে তাকে কুপোকাত করেন ওই অভিযুক্ত।
ফাহিম ফ্লোরে পড়ে গেলে তার ধড়ে ও গলায় নৃশংসভাবে বেশ কয়েকবার ছুরি চালান হ্যাসপিল, বলেছেন ফোর্ড।
তারপর ফাহিমের মৃতদেহ অ্যাপার্টমেন্টের ভেতরে রেখেই সেখান থেকে চলে যান অভিযুক্ত খুনি।
পরের দিন তিনি দোকান থেকে ইলেকট্রিক করাত ও অন্যান্য জিনিসপত্র কেনেন ফাহিমের মৃতদেহ কেটে টুকরো-টুকরো করার উদ্দ্যেশ্যে।
কয়েকটি সূত্র বলছে, ফাহিমের মৃতদেহ খণ্ড-বিখণ্ড করে, কনস্ট্রাকশনের ব্যাগে ভরে, গুম করার পরিকল্পনা ছিল হ্যাসপিলের; কিন্তু এরই মধ্যে ফাহিমের খালাত বোন ওই অ্যাপার্টমেন্টের ঘণ্টি বাজান; আর তখন সিঁড়ি বেয়ে পালিয়ে যান হ্যাসপিল।
অবশ্য, মঙ্গলবার ঠিক কোন কারণে হ্যাসপিল ঘটনাস্থল থেকে পালিয়েছিলেন, সে সম্পর্কে প্রসিকিউটররা আদালতে বিস্তারিত কিছু বলেননি।
২০১৮ সালে নাইজেরিয়ায় মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং কোম্পানি 'গোকাডা', এবং ইনভেস্টমেন্ট ফার্ম 'অ্যাডভেঞ্চার ক্যাপিটাল'-এর প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহের কাছ থেকে তার সহকারী হ্যাসপিল যে ৯০ হাজার মার্কিন ডলারেরও বেশি অর্থ চুরি করেছিলেন, এ ব্যাপারে আদালতকে নিশ্চিত করেছেন ফোর্ড। ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর সিইও ফাহিম যখন হ্যাসপিলের এই অপকর্ম ধরে ফেলেন, তখন তাকে পুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে বরং ভাগে ভাগে টাকা ফেরত দেওয়ার সুযোগ দেন বলে ফোর্ড জানান।
হত্যার পেছনে হ্যাসপিলের অন্য কোনো কারণ আছে কি না, এখনো নিশ্চিত না হলেও প্রসিকিউটররা বিশ্বাস করেন, ওই চুরির ঘটনায়ই ৩৩ বছর বয়সী ফাহিমের প্রাণ কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
হ্যাসপিলকে জামিন-অযোগ্য অভিযুক্ত হিসেবে বন্ধি রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক জোনাথন স্যভেটকি। ১৭ আগস্ট তাকে আবারও আদালয়ে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
- সূত্র: নিউইয়র্ক পোস্ট