বিআরটিএ’র প্রস্তুতি সত্ত্বেও ঈদে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়েছে ১৮.৭৫%
নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল ঈদযাত্রা নিশ্চিতে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)-এর নানান প্রস্তুতি সত্ত্বেও গত ঈদের তুলনায় এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ১৮.৭৫ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বিআরটি-এর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার।
এবারের ঈদযাত্রার ১৭ দিনে (৪-২০ এপ্রিল) সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে প্রতিদিন ১৯ জন করে মারা গেছেন। আর গত ঈদে দিনে গড়ে ১৬ জন করে মারা যায়।
রোববার (২১ এপ্রিল) রাজধানীর বনানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে বিআরটিএ-এর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান।
গত বছরের তুলনায় দুর্ঘটনার সংখ্যা বৃদ্ধি না পেলেও মৃত্যু বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান তিনি। গতবছর ঈদযাত্রার ১৫ দিনে ২৫৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৩৯ নিহত ও ৫১০ আহত হন।
এবার ঈদের আগেই মসৃণ ঈদযাত্রায় নানান প্রস্তুতি নিয়েছিল বিআরটিএ। এর মধ্যে ছিল– দেশের সড়ক-মহাসড়কে যানজটের স্থানগুলোর জন্য সমাধান, বাইক নিয়ন্ত্রণ, তিন চাকার হিউম্যয়ান হোলার ও অবৈধ গাড়ি সড়কে না চলতে দেওয়া, মালবাহী গাড়িতে যাত্রী না তোলা, ঈদের আগে ও পরের তিনদিন করে মহাসড়কে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও লরি চলাচল বন্ধ রাখাসহ কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা।
তবে এসবের পরেও সড়কে দুর্ঘটনা ঘটেছে।
এসব দুর্ঘটনার দায় কাদের– এমন প্রশ্নের জবাবে বিআরটিএর চেয়ারম্যান স্বীকার করেন, দুর্ঘটনার পেছনে বিআরটিএসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের দায় আছে।
তিনি বলেন, "আমরা আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে এখন নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।"
তবে তার দাবি, সচেতনতার অভাবে দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
দুর্ঘটনার কারণ প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে— চালকের অসাবধানতায় গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা, অতিরিক্ত ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, চালকের অসতর্ক/ঝুঁকিপূর্ণভাবে ওভারটেকিং করা, পথচারীর অসাবধানতা এবং যত্রতত্র রাস্তা পারপার হওয়া, মহাসড়কে তিন চাকার যান ও ইজিবাইক, নসিমন, করিমনসহ অবৈধ বাহন চলাচল, মোটরসাইকেল চালকের অসচেতনতাসহ ট্রাফিক আইন যথাযথ অনুসরণ না করা, মহাসড়কে ট্রাফিক সাইন, রোড মার্কিং ইত্যাদি না মেনে চলা, মহাসড়কে অবৈধ পার্কিং করা, পার্শ্ব সড়ক থেকে মূল সড়কে ওঠার সময় চালকের অসাবধানতা এবং উভয়মুখী সড়কে ডিভাইডার না থাকা।
বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, কেবল আইন প্রয়োগ করে সড়ক দুর্ঘটনার মত বহুমাত্রিক সমস্যা মোকাবেলায় আশানুরূপ ফল আসবে না।
জনবল কম উল্লেখ করে বিআরটিএ প্রধান বলেন, "আমাদের মাত্র ৮ জন মেজিস্ট্রেট। তাই সারাদেশের লাখ লাখ পরিবহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।"
"একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সবাইকে তার নিজ নিজ জায়গা থেকে এ দায়িত্ব পালন করতে হবে। সকলকে সড়কে আইন মানতে হবে," যোগ করেন তিনি।
চেয়ারম্যান আরও বলেন, সড়কে অবৈধ, মেয়াদউত্তীর্ণ ও রুটপারমিটবিহীন মোটরযান ও ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন চালক কর্তৃক মোটরযান চলাচাল বন্ধে পুলিশ বিভাগ, হাইওয়ে পুলিশ, সড়ক পরিবহন মালিক ও শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগীতায় প্রতিদিন সড়কে নজরদারি বৃদ্ধি ও নিয়মিত অভিযান পরিচালনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আগামী মাসের মধ্যেই এর সমস্যার সমাধান হবে। এরপর মেয়াদউত্তীর্ণ ও রুটপারমিটবিহীন মোটরযানকে আনফিট বিবেচনা করে এরকম পরিবহন পেলেই ডাম্পিং এ পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।
এ বছর ইদযাত্রার ১৭ দিনে, সারা দেশে ২৮৬টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে; গড়ে প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৭টি। এতে ৩২০ জনের মৃত্যু ছাড়াও আহত হয়েছেন ৪৬২ জন। গড়ে প্রতিদিন আহত হয়েছেন ২৭ জন।
এবার সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন ঢাকা বিভাগে– ৭৩ জন, আর সবচেয়ে কম মৃত্যু হয়েছে সিলেট বিভাগে– ১৭ জন।
সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে মোটরসাইকেল– ১১৭টি বা ২৮.৬১ শতাংশ। এরপরই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে ৭৭টি বাস বা মিনিবাস।