ইউক্রেনকে প্রথমবারের মতো দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র গোপনে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
গোপনে ইউক্রেনকে দূরপাল্লার মিসাইল সরবরাহ করেছে আমেরিকা। এরমধ্যেই এসব ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারও করছে দেশটি। মার্কিন কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন । খবর বিবিসির
সম্প্রতি ইউক্রেনের জন্য ৬১ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তার প্যাকেজ অনুমোদন করেছে আমেরিকা। তার আগের পৃথক এক সহায়তা প্যাকেজের আওতায়– ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইউক্রেনের হাতে পৌঁছেছে চলতি মাসেই। তবে ইউক্রেনের সামরিক অভিযানের গোপনীয়তা রক্ষা বা অপারেশনাল সিকিউরিটির কারণে বিষয়টি তাঁরা ওই সময়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেননি বলে মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
গোপনে পাঠানো দূরপাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্রের নাম হচ্ছে– আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেমস ( সংক্ষেপে– অ্যাটাকমস)। বুধবার এটি নিশ্চিত করেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন মুখপাত্র।
এর আগে অ্যাটাকমস মিসাইলের মাঝারি পাল্লার সংস্করণ ইউক্রেনকে দিয়েছিল ওয়াশিংটন। সেসময় আরো শক্তিশালী এই দীর্ঘপাল্লার সংস্করণ পাঠানোর বিষয়ে আপত্তি করেছে। পেন্টাগনের যুক্তি ছিল, দূরপাল্লার অ্যাটাকমস মিসাইলের মজুত যথেষ্ট সীমিত। ইউক্রেনকে দিতে হবে মার্কিন সেনাবাহিনীর নিজস্ব অস্ত্রাগার থেকে। এতে তাদের সেনাবাহিনীর যুদ্ধপ্রস্তুতি ব্যাহত হবে।
তবে শেষমেষ ইউক্রেন তা পেয়েছে বলে জানানো হয়েছে। মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, এরমধ্যেই রুশ অধিকৃত ক্রিমিয়ার একটি লক্ষ্যবস্তুতে এই মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছে।
নতুন অনুমোদিত প্যাকেজের আওতায় আরো সামরিক সরঞ্জাম ইউক্রেনের দিকে আসছে। অচিরেই এগুলো পৌঁছাবে বলেই প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র দিয়ে ইউক্রেন রুশ ভূখণ্ডের আরো ভেতর দিকে আঘাত হানতে পারে– এনিয়ে কিছুটা উদ্বেগও কাজ করছে মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যে। কারণ এতে সংঘাত আরো ছড়িয়ে পড়তে পারে, ন্যাটো এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে তখন। এনবিসি নিউজের কাছে তাঁরা এই মন্তব্য করেছেন। আমেরিকার এই গণমাধ্যমই প্রথম দূরপাল্লার অ্যাটামস মিসাইল প্রদানের সংবাদ প্রকাশ করে।
দূরপাল্লার অ্যাটাকমস মিসাইল ৩০০ কিলোমিটার দূরে আঘাত হানতে পারে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে এটি ইউক্রেনকে দেওয়ার গোপন অনুমতি দেন বাইডেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রধান মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, "ইউক্রেনের অপারেশনাল নিরাপত্তার খাতিরেই যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে ঘোষণা দেয়নি।"
কতগুলো দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনকে দেওয়া হয়েছে– সেটি অবশ্য তিনি জানাননি। তবে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান বলেছেন, ওয়াশিংটন আরো ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে।
তিনি বলেন, এই অস্ত্র অবশ্যই পার্থক্য গড়ে দেবে। তবে আমি আগেও বলেছি… এটা কোনো জাদুকরি সমাধান নয়।
দূরপাল্লার অ্যাটাকমসের মাধ্যমে ইউক্রেনের রুশ-অধিকৃত এলাকার আরো গভীরে বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটি, অস্ত্রাগার ও সরবরাহ ব্যবস্থার কেন্দ্রে আঘাত হানতে পারবে কিয়েভ।
গত সপ্তাহে প্রথমবারের মতো অধিকৃত ক্রিমিয়ার একটি রুশ বিমানঘাঁটিতে এটি দিয়ে হামলা করা হয়েছে, বলে জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যমগুলো। এরপর গত মঙ্গলবার রাতে দ্বিতীয় হামলাটি করা হয়েছে রুশ অধিকৃত বন্দরনগরী বার্দিয়ানস্কে।
গত কয়েক মাস ধরে গোলাবারুদের তীব্র সংকটে ভুগেছে ইউক্রেন। পশ্চিমা সহায়তার গতি থমকে পড়ায় দেশটির নিজস্ব গোলাবারুদের মজুতও তলানির দিকে নেমে আসে। এই সুযোগ লড়াইয়ের সম্মুখভাগে ভালো অগ্রগতি করতে থাকে রুশ সেনারা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদেও এতদিন ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তার প্রস্তাব পাস আটকে ছিল। তবে এখন এটি অনুমোদন লাভ করাই দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করছে পশ্চিমা বিশ্ব।
অনুবাদ: নূর মাজিদ