পাকিস্তানে ৬০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড; অন্তত ১৪৪ জনের প্রাণহানি
১৯৬১ সালের পর সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড হয়েছে পাকিস্তানে। দেশটির আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছে, গত এপ্রিল মাসে দেশটিতে স্বাভাবিকের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি বৃষ্টি হয়েছে।
শুক্রবার প্রকাশিত মাসিক জলবায়ু প্রতিবেদনে পাকিস্তানের আবহাওয়া বিভাগ জানায়, এপ্রিলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ রেকর্ড করা হয়েছে ৫৯.৩ মিলিমিটার (২.৩ ইঞ্চি), যা স্বাভাবিক গড় ২২.৫ মিলিমিটার (০.৯ ইঞ্চি) এর চেয়ে অত্যধিক বেশি।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ বেলুচিস্তানে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা গড়ে পরিমাণের চেয়ে ৪৩৭ শতাংশ বেশি।
এপ্রিল মাসে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বজ্রপাত ও বাড়ি ধসে কমপক্ষে ১৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখোয়ায়, যেখানে ৩৮ শিশুসহ ৮৪ জন মারা গেছে এবং ৩,৫০০ এরও বেশি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়ার বেশিরভাগ অঞ্চলের জনজীবন যখন দাবদাহে নাজেহাল, তখন এপ্রিলে পাকিস্তানের জাতীয় মাসিক তাপমাত্রা ছিল মাত্র ২৩.৬৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৭৪.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট), যা গড় ২৪.৫৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়ে ০.৮৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম।
পাকিস্তানের আবহাওয়া বিভাগের মুখপাত্র জহির আহমেদ বাবর বলেন, 'জলবায়ু পরিবর্তন একটি বড় কারণ যা আমাদের অঞ্চলের অনিয়মিত আবহাওয়ার ধরনকে প্রভাবিত করছে।
২০২২ সালে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে পাকিস্তানের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা প্লাবিত হয়, যার ফলে ১ হাজার ৭৩৯ জন মারা যায়। বন্যায় ৩০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যা থেকে এখনও পাকিস্তান পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে। সে বছর বেলুচিস্তানে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫৯০ শতাংশ এবং করাচিতে স্বাভাবিকের চেয়ে ৭২৬ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছিল।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থা ওসিএইচএ সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলেছে, 'আকস্মিক এ বন্যায় ফসলের বিস্তীর্ণ এলাকা, বিশেষ করে কাটার জন্য প্রস্তুত গমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর ফলে স্থানীয় কৃষক ও সম্প্রদায়ের জন্য উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে'।
পাকিস্তানের কিছু এলাকায় তাপপ্রবাহ এবং মারাত্মক বায়ু দূষণের সমস্যাও দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা এসব সমস্যার জন্য দুর্বল অবকাঠামো ও অকার্যকর প্রশাসনকে দায়ী করছেন।
পরিবেশবাদী আইনজীবী ও অ্যাক্টিভিস্ট আহমাদ রাফে আলম এএফপিকে বলেন, 'জলবায়ু সম্পর্কিত ঘটনা এখন প্রায় প্রতি বছরই ঘটছে, তবে আমরা এসবের জন্য এখনও প্রস্তুত নই।' জলবায়ু সমস্যা মোকাবেলায় পদক্ষেপগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া আমাদের প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় উভয় সরকারেরই ওপর নির্ভর করে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে মনে হচ্ছে, তারা এখন রাজনীতি নিয়েই বেশি মনোযোগী।'
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন