ডেঙ্গু টিকার ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত নেই, প্রতিরোধে গুরুত্ব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের
দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর ২৩ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে ২০২৩ সালে। এ বছর ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। তবে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু টিকার ট্রায়াল বা ব্যবহারের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি, ডেঙ্গু মোকাবেলায় প্রিভেশন বা প্রতিরোধ ও চিকিৎসার ওপর জোর দিচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
যদিও এর আগে, ২০২২ সালের অক্টোবরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদনের পর, জাপানের তাকেদা ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির তৈরি ডেঙ্গু ভ্যাকসিন 'কিউডেঙ্গা'য় আগ্রহ দেখিয়েছিল স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশিদ আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "ডেঙ্গু ভ্যাকসিন নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ডেঙ্গু ভ্যাকসিনের ডেটা সম্ভবত ইন্দোনেশিয়া তৈরি করছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। আমরা এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিনের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা পাইনি।"
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কিউডেঙ্গা ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছিল— দেশে ডেঙ্গুর টিকা প্রয়োগ করতে ন্যাশনাল ইমিউনাইজেশন টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজরি গ্রুপের (নিটাগ) পরামর্শ চেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এ বিষয়ে নিটাগের সভাপতি ডা. খান আবুল কালাম আজাদ বলেন, "জাপানের ওষুধ কোম্পানি তাকেদার তৈরি কিউডেঙ্গা ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের ফল নিয়ে আমরা শিগগিরই একটি মিটিং করবো। তারপর সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হবে।"
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। ডেঙ্গু এখন আর শহরের রোগ নেই, সারাদেশেই এটি ছড়িয়ে পড়েছে। ডেঙ্গুর ভ্যাকসিনের এখনো অনেক ধরণের সীমাবদ্ধতা আছে, সব বয়সীদের এই ভ্যাকসিন দেওয়া যাবেনা। আবার যাদের একবার ডেঙ্গু হয়েছে, তাদেরও দেওয়া যাবেনা। তাই ভ্যাকসিনের ওপর নির্ভর না করে মশা মারার ওপর জোর দিতে হবে।"
মশা নিধন করতে হবে, নিজেকে মশার কামড় থেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ডেঙ্গু মোকাবেলায় কৌশল
দেশে সাধারণত ডেঙ্গুর মৌসুম জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ বছর ডেঙ্গু মোকাবেলায় কী করছে জানতে চাইলে এবিএম খুরশিদ আলম বলেন, "ডেঙ্গুর মৌসুম আসছে তা মোকাবেলায় আমরা প্রিভেনশন, ট্রিটমেন্ট এবং লসিস্টিক সাপ্লাই— এই তিনটি বিষয়ের ওপর জোর দিচ্ছি।"
তিনি বলেন, "প্রিভেনশন বা প্রতিরোধের জন্য আমরা বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশনকে প্রি-মনসুন, মনসুন এবং পোস্ট মনসুন সার্ভে করতে অবহিত করেছি। আমাদের পক্ষ থেকে প্রতিটি হেলথ কমপ্লেক্স থেকে শুরু করে সব জায়গায় যাতে তথ্যগুলো ঠিকমত প্রচার হয়, সেটি নিশ্চিতে লাইফ স্টাইল হেলথ এডুকেশ ডিপার্টমেন্টকে দিয়ে কাজ করছি।"
"আমাদের হাসপাতালগুলো রেডি আছে। কোভিডের সময় যেসব হাসপাতাল আমরা ডেডিকেটেড করেছিলাম, সেগুলো তো আছে– সাথে অতিরক্ত আরো বেড যদি লাগে তাও যোগ করা হবে।"
''ডেঙ্গুর চিকিৎসায় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় ফ্লুইড; এরজন্য আমরা ইতোমধ্যে সমস্ত ওষুধ কোম্পানির সাথে কথা বলেছি। কী পরিমাণ ফ্লুইড লাগবে, তার চাহিদা চেয়েছে তারা, তাদেরকে সেই চাহিদাও দেওয়া হয়েছে। তাই আশা করছি ফ্লুইড নিয়ে সমস্যা হবেনা," যোগ অরেন ডা. এবিএম খুরশিদ আলম।
তিনি আরও বলেন, "সমস্যা যেটা– তা হলো মশা। গবেষকেরা বলছেন, মশা এখন দিন-রাত মানছেনা, রাতেও কামড়াচ্ছে। ময়লা পানিতেও এডিস মশা জন্মাচ্ছে, যা চিন্তার বিষয়। আবার মশার ওষুধও নাকি কাজ করছেনা— এসব নিয়ে কাজ করতে হবে মশা মারার দায়িত্বে যারা তাদের।"
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১২ মে পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু এবং হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা ইতোমধ্যেই গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ছাড়িয়ে গেছে। পাঁচ মাসে ডেঙ্গুতে ২৯ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল মাত্র ১২ জন। অর্থাৎ, এ বছর মৃত্যুর সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যাও গত বছরের তুলনায় এ বছর দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে।
২০২৩ সালে দেশে রেকর্ড ৩,২১,১৭৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল এবং মৃত্যু হয়েছিল ১,৭০৫ জনের।