টিমওয়ার্ক, নেতৃত্ব গুণ – এসব দক্ষতাই বেশি কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশি কর্পোরেটদের কাছে: টিবিএস জরিপ
বৈশ্বিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে বিশ্লেষণী চিন্তাশক্তি এবং উদীয়মান প্রযুক্তি সাক্ষরতাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়। তবে বাংলাদেশি কর্পোরেটরা এসব যোগ্যতার চেয়ে চাকুরিপ্রার্থীর দলবদ্ধ হয়ে কাজের সক্ষমতা (টিমওয়ার্ক) এবং নেতৃত্ব গুণকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এমনটাই উঠে এসেছে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের এক সমীক্ষায়।
বাংলাদেশের শিল্পগুলো তাঁদের সম্ভাব্য কর্মীদের মধ্যে যোগাযোগ দক্ষতা, অদম্য মনোভাব, শেখার আগ্রহ ও উদ্দীপনার মতো সফট স্কিল থাকাকেও গুরুত্ব দেয়। সফট স্কিল হলো এমন কিছু চারিত্রিক ও ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য, যা অন্যের সঙ্গে ভালোভাবে কাজ করতে বা মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে মানুষকে কাজ করতে শেখায়। এই দক্ষতাগুলো অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে, আস্থা বাড়াতে এবং দলগতভাবে কাজ করতে সাহায্য করে।
এই জরিপের ফলাফল গত ৯ মে টিবিএসের ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স বাংলাদেশের (ইআইবি) দ্বিতীয় সংস্করণে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডেটাসেন্স এর সাথে যৌথভাবে ইআইবি প্রস্তুত ও প্রকাশ করছে টিবিএস। এতে বাংলাদেশের কর্পোরেট বা বাণিজ্যিক খাত যেসব সফট স্কিল বা নমনীয় দক্ষতাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয় তা তুলে ধরা হয়েছে।
সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সাক্ষরতাকে এখন বিশ্বের প্রায় সবখাতের প্রতিষ্ঠানই চাকুরিপ্রত্যাশীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করে। তবে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক খাত যে পাঁচটি যোগ্যতাকে মূল্যায়নের শীর্ষে রেখেছে, তারমধ্যে এখনও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা বিগ ডেটার মতো বিষয় নেই। পরবর্তী পর্যায়ের কর্মী নিয়োগের আগপর্যন্ত এসব প্রযুক্তি সাক্ষরতার বিষয়ে বাংলাদেশের শিল্পগুলো অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
'স্কিলস ফর দ্য ফিউচার ইন বাংলাদেশ' শীর্ষ এই জরিপে দেশের শীর্ষ ২৭টি কর্পোরেট হাউজের জনশক্তি নিয়োগের দৃষ্টিভঙ্গি উঠে এসেছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে নানান ধরনের শিল্পখাতে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩ লাখ ৯০ হাজার কর্মী রয়েছে।
কর্পোরেট চাকরিপ্রত্যাশী তরুণ গ্রাজুয়েটদের মধ্যে সমস্যা সমাধানের দক্ষতার অভাব খুবই বেশি বলে জানিয়েছেন এই নিয়োগদাতারা। তবে আশার কথা হলো, কোনো নির্দিষ্ট পদের জন্য যে ধরনের ইংরেজি ভাষার দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী প্রয়োজন, নিয়োগের জন্য তেমন জনশক্তি সহজেই পাওয়া যাচ্ছে। ফলে জরিপের সময়ে এর ওপর বেশি জোর দেয়নি তারা।
সৃজনশীল চিন্তাকে গুরুত্ব দেওয়া বৈশ্বিক কর্পোরেট খাতের অন্যতম প্রবণতা, কিন্তু বাংলাদেশের কর্পোরেট বেশি জোর দিচ্ছে ব্যক্তির চারিত্রিক নানান বৈশিষ্ট্য এবং ব্যবস্থাপনার দক্ষতাকে। জরিপের ফলাফল জানাচ্ছে, আগামী দুই বছরের নিয়োগের ক্ষেত্রে এসব বিষয়কেই প্রাধান্য দেওয়া হবে।
নতুন নিয়োগকৃতদের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে জরিপে অংশ নেওয়া মাত্র ৩৭ শতাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কেন এসব প্রতিষ্ঠানের ৯৩ শতাংশই নতুন নিয়োগকৃতদের নির্দিষ্ট পদের চাকরির উপযুক্ত হিসেবে গড়ে তুলতে প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রেখেছে – তার কারণ এই ফলাফলই বলে দিচ্ছে।
নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশি কর্মীদের মধ্যে প্রত্যাশিত যোগ্যতা যদি নাও পাওয়া যায় – তারপরেও হরহামেশা বিদেশি কর্মী নিয়োগ দেওয়ার কথা ভাবে না জরিপের আওতাভুক্ত প্রায় ৬৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে, ২২ শতাংশ কোম্পানি 'প্রায় সময়েই' বিদেশি কর্মী নিয়োগে তাঁদের আগ্রহের কথা জানিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান আবার এমন খাতে যেখানে বিপুল ও বৈচিত্রপূর্ণ জনশক্তি প্রয়োজন হয়। এগুলো হলো – পোশাক শিল্প, ফাস্ট মুভিং কনজিউমার গুডস, আথিতেয়তা ও ইলেক্ট্রনিক্স শিল্পখাত।
কর্পোরেট চাকরি প্রত্যাশী বাংলাদেশি গ্রাজুয়েটদের মধ্যে সমস্যা সমাধানের দক্ষতার অভাব নিয়েই বেশি উদ্বিগ্ন বাংলাদেশের শিল্পগুলো।
দেশের ব্যবসা খাতের ক্রম বিবর্তনের ফলে টিমওয়ার্ক, নেতৃত্বদানের সক্ষমতা ও সার্বিক অন্যান্য দক্ষতার উন্নয়ন আরো গুরুত্ব পাচ্ছে। দেশের ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় একটি দক্ষ ও সম্ভাবনাময় জনশক্তি গড়ে তুলতে এর বিকল্পও নেই।
টিবিএসের সাম্প্রতিকতম ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স এর সংস্করণটি পড়তে ইআইবির ওয়েবসাইটে যেতে পারেন এই লিঙ্কে: intel.tbsnews.net