বায়োগ্যাস ও জৈব সারের বিপুল সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারছে না বাংলাদেশ
প্রতি বছর উৎপাদিত ১২৪.১৫ মিলিয়ন টন প্রাণী বর্জ্য ব্যবহার করে বাংলাদেশে ৫০ লাখ বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট তৈরির সম্ভাবনা থাকলেও এর বিপরীতে মাত্র ১.৫ লাখ প্ল্যান্ট তৈরি হয়েছে বলে এক গোলটেবিল আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএইড-এর এসিডিআই/ভিওসিএ এবং দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড আয়োজিত 'আনলকিং দ্য মিথেন এমিশন রিডাকশন পটেনশিয়াল: বায়োগ্যাস ফর আ ক্লাইমেট-রেজিলিয়েন্ট বাংলাদেশ' শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা।
আলোচনায় প্রধান বক্তব্য উপস্থাপনকালে ইউএসএইড ফিড দ্য ফিউচার লাইভস্টক অ্যাক্টিভিটি-র চিফ অভ পার্টি এবং এসিডিআই/ভিওসিএর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ নুরুল আমিন সিদ্দিক বলেন, '৪৩ কোটি গবাদিপশুর (২০২১-২২) যে বর্জ্য, সেটিকে রিসোর্সে পরিণত করার সুযোগ রয়েছে। এটাকে কাজে লাগিয়ে বায়োগ্যাস তৈরি করলে সেটাকে রান্নার ও বিদ্যুতের কাজে যেমন লাগানো যাচ্ছে, তেমনি মাটির স্বাস্থ্যের জন্য পাওয়া যাচ্ছে অরগানিক জৈব সার।'
এ কার্যক্রমে ১০ লাখ পশুপালনকারী কৃষকের উপকারের লক্ষ্যে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২৩টি জেলায় দুধ ও মাংসের উৎপাদনশীলতা, বিপণনযোগ্যতা এবং ভোগে সহায়তা করা হচ্ছে।
নুরুল আমিন সিদ্দিক বলেন, 'বাই-প্রডাক্ট হিসেবে অর্গানিক সারের ব্যবহার বাড়িয়ে রাসয়ানিক সারের ব্যবহার অন্তত ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনার সুযোগ রয়েছে।'
টিবিএসের কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন পত্রিকাটির হেড অব ডিজিটাল জাহিদ নেওয়াজ খান।
সচেতনতার অভাব, স্থাপনের চড়া ব্যয়, অর্থায়ন না পাওয়া, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকান না করা এবং ঠিকমতো গড়ে না ওঠা বায়োগ্যাস অবকাঠামোর মতো বায়োগ্যসের প্রসারে বড় চ্যালেঞ্জ বলেও তুলে ধরা হয় মূল বক্তব্যে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, এখন একটি সরকারি প্রকল্প থেকে কিছু আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে কিছু প্ল্যান্ট করা হচ্ছে। এর চেয়েও বড় বিষয় হচ্ছে, বেঙ্গল মিট, গাজী জৈব সার, এসিআইসহ বড় বড় কোম্পনি এ খাতে আসছে এবং কিছু প্ল্যান্ট করছে। এই ধারাকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে হবে বলে মত দেন তারা।
এসিডিআই/ভিওসিএর প্রেসিডেন্ট সিলভিয়া মার্গারেট বলেন, এই খাতে সক্ষমতা গড়ে তোলা দরকার। তবে এর সঙ্গে পলিসি এবং বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে কিভাবে কার্যকরভাবে কাজ করা যায়, তার একটা ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করতে হবে।
পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) প্রতিনিধি জাহিদ হোসেন বলেন, ৩০ হাজার টাকায় বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট করে কতটুকু লাভ করতে পারবে, বা কত টাকা খরচ কমবে—এ বিষয়ে স্পষ্টভাবে জানতে চায় গ্রামীণ জনগোষ্ঠী চায়।
'তারা জানতে চায় কতগুলো চুলায় এ গ্যাস ব্যবহার করতে পারবে, কত বাসায় একটি গ্যাস প্ল্যান্ট থেকে গ্যাস ব্যবহার করতে পারবে। প্রযুক্তিটা কমফোর্টেবল কি না, তা বুঝতে চায়। এজন্য কম খরচে একটি ভালো প্রযুক্তি তাদেরকে দ্রুত সরবরাহ করার পরিকল্পনা দরকার,' বলেন তিনি।
ইডকলের নবায়নযোগ্য ইউনিটের প্রধান ওয়াহিদুর রহমান বলেন, বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট শুধু রান্নার জন্য গ্যাসই দেয় না, বরং ফসল ও মাছের পুকুরের জন্য জৈব সারও তৈরি করে।
তিনি বলেন, 'এ কর্মসূচি রান্নার জন্য বায়োমাস জ্বালানির ব্যবহার কমাতে সাহায্য করছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩৮টি অংশীদার সংস্থার মাধ্যমে সারা দেশে ৫৬ হাজার ৫০০টিরও বেশি বায়োগ্যাস প্লান্ট নির্মাণে অর্থায়ন করেছে।'
ওয়াহিদুর রহমান জানান, ইডকল বর্তমানে বায়োগ্যাস প্ল্যান্টের দুটি মডেলের অর্থায়ন করে থাকে—ইট-সিমেন্টভিত্তিক প্ল্যান্ট ও প্রিফেব্রিকেটেড বায়ো-ডাইজেস্টারভিত্তিক প্ল্যান্ট।
বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রতিনিধি আমান উল্লাহ বলেন, 'আমাদের প্রধান কার্যালয় ২০১৬ সাল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য তিনটি বায়োগ্যাস প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করেছে। এছাড়া একটি খসড়া প্রাণিসম্পদ ইন্টিগ্রেশন ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল নীতির প্রস্তাবও করা হয়েছিল, তবে এটি এখনও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পায়নি।'
তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটি বায়োগ্যাস নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্প চালিয়ে যাচ্ছে। 'আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে যে বায়োগ্যাস শুধু শক্তি ও জৈব পদার্থের উৎস নয়, এটি দূষণের মতো গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য উদ্বেগ কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
'এছাড়াও আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে যে বায়োগ্যাসের মাধ্যমে তৈরি সার প্রথাগত সারের তুলনায় যথেষ্ট উন্নত। আমরা যদি বায়োগ্যাস বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করি, তাহলে বায়োগ্যাস উৎপাদন লাভজনক হতে পারে।'