নিরুত্তাপ কোরবানির পশুর হাট শেষ মুহুর্তে চাঙ্গা হওয়ার আশায় ব্যবসায়ীরা
কোরবানি উপলক্ষে রাজধানীর হাজারীবাগের লেদার টেকনোলজি কলেজের মাঠে স্থাপিত গবাদি পশুর অস্থায়ী হাটে রাজবাড়ি থেকে গত সোমবার আটটি গরু নিয়ে এসেছিলেন ডাবলু মোল্লা। তবে ক্রেতার উপস্থিতি কম থাকায় গতকাল বুধবার পর্যন্ত একটি গরুও তিনি বিক্রি করতে পারেননি।
হতাশাঝরা কন্ঠে তিনি বলছিলেন, "গত কয়েকদিন ধরেই এই মার্কেটে ক্রেতার উপস্থিতি খুব কম। মহামারি করোনার কারণে যে অবস্থা, ঈদের আগের দিনও মানুষজন হাটে আসবে কিনা আমার সন্দেহ।"
"এই গরুগুলো যদি বিক্রি না করতে পারি, তাহলে আমি জানিনা এগুলো দিয়ে কী করবো। গত এক-দেড় বছর ধরে নিজের সব পুঁজি দিয়ে এই গরুগুলো আমি লালন-পালন করেছি। কিন্তু এখন যদি একটা ভালো দাম না পাই তবে আমাকে লোকসান গুণতে হবে," বলছিলেন ডাবলু মিয়া।
ঈদের আর মাত্র দুদিন বাকি থাকায় ডাবলু মিয়ার মতো গরু নিয়ে ঢাকায় আসা এমন শত শত ব্যবসায়ীর কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তাদের শঙ্কা বর্তমান পরিস্থিতিতে এতো কষ্ট করে ঢাকায় নিয়ে আসা সব গরু বিক্রি নাও হতে পারে।
কয়েকজন ছোট ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, এই ঈদে বিক্রি না হলে আরও একবছর এই প্রাণীগুলোকে লালন-পালন করতে হবে যা তাদের জন্য খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে।
তবে অধিকাংশ ব্যবসায়ীরই আশা, শেষ মুহুর্তে বেচাকেনা ভালো হবে। তাদের বিশ্বাস, বৃহস্পতিবার থেকেই ক্রেতারা হাটে ভীড় জমাবেন।
কুষ্টিয়া থেকে আরেক ব্যবসায়ী মো. রাসেল হাজারীবাগের এই কলেজ মাঠেই এসেছিলেন ১৮টি গরু নিয়ে। তবে এই ব্যবসায়ী অনেকটা আত্মবিশ্বাসী।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, "ঝুঁকি হলো আমাদের ব্যবসার একটা অংশ। এবার ক্রেতারা বাজারে একেবারে কম আসায় আমরা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু সবকিছুরই একটা সমাধান আছে। এখানে বিক্রি না হলে আমি এলাকায় নিয়ে কসাইদের কাছে বিক্রি করে দেবো।"
মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে এবছর ঢাকার মাত্র ১৬টি স্থানে কোরবানির পশুর হাট বসানোর অনুমতি দিয়েছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন।
গত বুধবার সকাল থেকে দুই সিটি কর্পোরেশনের অধীনে প্রাণী সম্পদ বিভাগের ১৬টি ভেটেরনারি মেডিকেল টিম এবং একটি বিশেষ ভেটেরনারি মেডিকেল টিম পশুর হাটগুলোতে কাজ করা শুরু করেছে।
হাটে অসুস্থ পশু শনাক্তের পাশাপাশি এই মেডিকেল টিম কোরবানির জন্য ক্রেতাদের সুস্থ-সামর্থ্য পশু কিনতে সহায়তা করবে। এ ছাড়াও অসুস্থ পশুদের চিকিৎসাসেবা দেবেন তারা। আগামী শুক্রবার পর্যন্ত সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সেবা সহায়তা দেবেন এই ভেটেরনারি টিমের সদস্যরা। মৎস ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ৮টি পর্যবেক্ষক দল তাদের কাজের তদারকি করছে।
এছাড়াও হাটের পরিস্থিত সবসময় নজরে রাখতে বিভিন্ন ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের নিয়ে একটি পর্যবেক্ষক টিম গঠন করেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। এই টিমটি বিভিন্ন পশুর হাটে স্বাস্থ্য সচেতনতা মানা হয় কিনা তা নিশ্চিত করতে সবগুলো হাট পরিদর্শন করছে। স্বাস্থ্য সচেতনতা নিশ্চিতে পশুর হাটগুলোতে মোবাইল কোর্টও স্থাপন করা হয়েছে।