আফ্রিকার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির তার নিজের মহাদেশেই ৩৫ দেশের ভিসা নিতে হয়
নাইজেরিয়ায় জন্ম নেওয়া আলিকো ডাঙ্গোতে আফ্রিকার সবথেকে ধনী ব্যক্তি। অথচ ইউরোপীয় পাসপোর্টধারীরা তার থেকে বেশি সহজে পারি দিতে পারে আফ্রিকার যেকোনো দেশে। আর তাকে ভিসা পেতে পোহাতে হয় ঝক্কি। সম্প্রতি আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডার রাজধানী কিগালিতে 'আফ্রিকা সিইও ফোরাম' এ এমনই এক অভিযোগ এনেছেন তিনি।
তিনি বলেছেন, "আফ্রিকাকে মহান করতে চায়, এমন একজন বিনিয়োগকারী হিসেবে আমাকে ৩৫টি ভিন্ন ভিসার জন্য আবেদন করতে হয়। এম্বাসিতে গিয়ে আমার পাসপোর্ট জমা দিয়ে ভিসা নেওয়ার জন্য এত সময় আমার হাতে নেই।"
আফ্রিকার কয়েকটি দেশে আলিকোর ব্যবসা থাকার সুবাদে তাকে প্রায়ই মহাদেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে যেতে হয়। কিন্তু ভিসা জটিলতায় তাকে প্রায়ই বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। ৬৭ বছর বয়সী এ উদ্যোক্তা ভিসা নিয়ে যেসব সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন সেগুলো আফ্রিকানরা মহাদেশটির বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের সময় যেসকল জটিলতার মুখোমুখি হন, তারই একটি প্রতীকী চিত্র।
ঔপনিবেশিক শক্তির ইউরোপীয় পাসপোর্টগুলো ব্যবহার করে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ভিসা ছাড়া প্রবেশ করার সুযোগ আফ্রিকান পাসপোর্টের চেয়ে অনেক বেশি। এটি নিয়ে আফ্রিকার অনেক মানুষই হতাশ।
ডাঙ্গোতে ২০২৩ সালে সমস্ত আফ্রিকান নাগরিকদের জন্য ভিসা বাতিল করার জন্য রুয়ান্ডার উদ্যোগের প্রশংসা করেন। বেনিন, গাম্বিয়া এবং সেশেলসের মতো অন্যান্য দেশগুলোতেও সমস্ত আফ্রিকানরা ভিসা ছাড়া প্রবেশ করতে পারে। কিন্তু আফ্রিকার অধিকাংশ দেশে প্রবেশের ক্ষেত্রে এখনো আফ্রিকানদের ভিসার প্রয়োজন হয়। এর সাথে বৈষম্য, বন্ধুত্বহীনতা ও অতিরিক্ত ফি'র মত জটিলতাগুলো যুক্ত হয়।
বিব্রতকর অভিজ্ঞতা
নাইজেরিয়ান ভ্রমণ বিষয়ক সিনেমা নির্মাতা তায়ো আইনা বলেছেন, ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে ইথোপিয়ার আদ্দিস আবাবায় প্লেন থেকে নামার পর ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা তার থেকে মূত্রের নমুনা সংগ্রহ করেছিল তিনি মাদক গ্রহণ করেন কিনা সেটা পরীক্ষা করে দেখতে।
লন্ডন থেকে ফোনে সিএনএনকে তিনি বলেন, "আফ্রিকাতে ভ্রমণ করা আমার জন্য সবচেয়ে অপমানজনক অভিজ্ঞতা ছিল।" নাইজেরিয়ান পাসপোর্টের কারণে তাকে কেনিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিমানবন্দরে আটক করা হয়েছিল।
তায়ো আইনা এ বছর দেড় লাখ ডলারে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ সেন্ট কিটস এন্ড নেভিসের একটি পাসপোর্ট কিনেছেন যাতে তিনি আরো স্বাধীনভাবে ভ্রমণ করতে পারেন।
আফ্রিকান ইউনিয়ন আফ্রিকানদের জন্য বিধিনিষেধমূলক আইন পরিবর্তন ও ভিসা-মুক্ত ভ্রমণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে ভ্রমণ, কাজ ও তাদের নিজস্ব মহাদেশের মধ্যে যাতায়াত সহজ করার লক্ষ্য প্রকাশ করেছে। তবে এসব লক্ষ্য বাস্তবায়নে ধীরগতি রয়েছে। আফ্রিকা মহাদেশীয় মুক্ত বাণিজ্য এলাকার সাফল্যের জন্য মহাদেশের মধ্যে অবাধ চলাচল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
স্থায়ী অভিবাসনের ভয় থেকে আফ্রিকান দেশগুলো অন্যান্য আফ্রিকানদের জন্য ভ্রমণ সহজ করছে না বলে মনে করেন অভিবাসন বিষয়ক গবেষক অ্যালান হিরশ। তিনি সিএনএনকে বলেছেন, ধনী আফ্রিকান দেশগুলো আশঙ্কা করে, দরিদ্র দেশগুলোর মানুষ স্থায়ী অভিবাসন চায়। অনেক আফ্রিকান অনানুষ্ঠানিকভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে যার কোন রেকর্ড থাকে না। কিছু দেশের আশঙ্কা, অভিবাসীদের নিরাপদ আশ্রয় দিলে তারা পরে নিরুদ্দেশ হয়ে যাবে।
নতুন বাধা
আফ্রিকানরা সাধারণত স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে নিজ অঞ্চলে ভ্রমণ করতে পারলেও, এর বাইরে ভ্রমণ করা তাদের জন্য কঠিন। পূর্ব আফ্রিকান দেশগুলোর অধিবাসীদের এ অঞ্চলের দেশগুলোতে ভ্রমণ করতে ভিসার প্রয়োজন হয় না। দক্ষিণ ও পশ্চিম আফ্রিকার অনেক দেশেই ভিসা ছাড়াই এ নির্দিষ্ট অঞ্চলের অধিবাসীরা ভ্রমণ করতে পারে।
কিন্তু আপাত অগ্রগতিও কখনো কখন নতুন বাধার সৃষ্টি করতে পারে। আগে কেনিয়ার পাসপোর্টধারীরা ২৫ ডলারেই নাইজেরিয়াতে 'অন অ্যারাইভাল' ভিসা (সরাসরি একটি দেশে পৌঁছানোর পর সেটির ভিসা নেওয়া) নিতে পারতো। কিন্তু আবেদন প্রক্রিয়ার পরিবর্তনের জন্য এখন কেনিয়ানদের একটি নাইজেরিয়ান ই-ভিসার জন্য অগ্রিম আবেদন করতে হয় যার জন্য তাদের খরচ করতে হয় ২১৫ ডলার।
কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো কেনিয়ায় সমস্ত ভ্রমণকারীদের জন্য ভিসা বাতিল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি একটি ইলেক্ট্রনিক ট্রাভেল অথরাইজেশন (ইটিএ) চালু করেছেন যেটির আবেদন প্রক্রিয়ার সাথে ভিসা আবেদন প্রক্রিয়ার মিল আছে। প্রসেসিং ফি বাদে এর জন্য ৩০ ডলার খরচ হবে এবং অনুমোদন পেতে বেশ কয়েকদিন সময় লাগতে পারে।
আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ভিসা আবেদনের জন্য ফর্ম, ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং ফ্লাইট ও হোটেল বুকিংয়ের প্রমাণ জমা দিতে হয়। অসম্পূর্ণ ডকুমেন্টেশন বা অস্পষ্ট কারণে আবেদনকারীরা প্রায়ই ভিসা প্রত্যাখ্যানের সম্মুখীন হন।
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়