পরিবারকে 'অবৈধভাবে' লাভবান করেছেন ড. ইউনূস: গ্রামীণ ব্যাংকের আইন উপদেষ্টা
ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) দায়িত্বে থাকা অবস্থায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষমতার অপব্যবহার করে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে নিজের পরিবারের লোকজনকে অবৈধভাবে আর্থিক সুবিধা দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ব্যাংকটির প্রধান আইন উপদেষ্টা মাসুদ আখতার।
এছাড়াও সম্প্রতি বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য দিয়ে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে 'প্যাথলজিক্যাল লায়ার'বলে আখ্যায়িত করেছেন গ্রামীণ ব্যাংকের এই আইন উপদেষ্টা।
তবে ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন বলছেন, 'গ্রামীণ ব্যাংকের জন্য ড. ইউনূসের সেক্রিফাইস অনস্বীকার্য। একটি গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তাকে হেয় করার জন্য এসব অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।'
সম্প্রতি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) লিখিত অভিযোগ দিয়েছে গ্রামীণ ব্যাংকের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ।
অভিযোগে বলা হয়, ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকে থাকাকালীন তিনি তার পারিবারিক প্রতিষ্ঠান প্যাকেজেস করপোরেশন লিমিটেডকে ব্যাংক থেকে বেআইনিভাবে সাড়ে ৯ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছেন।
গত রোববার গ্রামীণ ব্যাংকের এই অভিযোগ নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেন ড. ইউনূস ও তার আইনজীবী।
ড. ইউনূস ও তার আইনজীবীর বক্তব্যের প্রতিবাদে সোমবার (৩ জুন) সুপ্রিম কোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এসব কথা বলেন ব্যাংকের প্রধান আইন উপদেষ্টা মাসুদ আখতার।
তার বক্তব্যের পর সেখানেই গণমাধ্যমে কথা বলেন ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন।
সংবাদ সম্মেলনে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান আইন উপদেষ্টা বলেন, 'তিনি (ড. ইউনূস) এবং তার পরিবার কোনো সুবিধা নেননি বলে জানিয়েছেন। কিন্তু তিনি তার প্রিন্টিং প্রেসের জন্য গ্রামীণ ব্যাংক থেকে শতকোটি টাকার ওয়ার্ক অর্ডার দিয়েছেন নিজের পারিবারিক ছাপাখানায় এবং তা ৩০-৪০ শতাংশ বেশি দরে দিয়েছেন।'
ব্যাংকটির প্রধান আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, 'ওই সময় গ্রামীণ ব্যাংকের এক জিএম এসবের প্রতিবাদ করলে তাকে নির্যাতন করারও তথ্য পাওয়া গেছে। ওই জিএমকে গৃহবন্দি করা হয়।'
তিনি বলেন, 'তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে ১৯৯৭ সাল থেকে। ড. ইউনূস ২০১১ সালে ব্যাংক ছাড়লেও পরবর্তী সময়ে তিনি তার দুর্নীতি ফাঁস করতে দেননি। কারণ, এরপর তার লোকজনই গ্রামীণ ব্যাংক চালিয়েছেন। তবে ২০২০ সালে এক অডিটে ভয়াবহ দুর্নীতির কথা উঠে আসে। আমাদের হাতে এগুলো আসে ২০২৩ সালে।'
তিনি আরও বলেন, 'মিথ্যাচারকে তিনি একটি শৈল্পিক পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন। মানুষ যখন মিথ্যা বলতে বলতে এমন অবস্থায় চলে যায় যে সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না, ইংরেজিতে একে বলা হয় প্যাথলজিক্যাল লায়ার।'
আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, ড. ইউনূস এবং তার বাবার প্যাকেজেস কর্পোরেশন (ছাপাখানা) ঋণের ভারে জর্জরিত ছিল। এ প্রতিষ্ঠানকে বাঁচাতে ড. ইউনূস ঋণ ছাড় করেন গ্রামীণ ব্যাংক থেকে। আবার তিনি তা মওকুফ করেন, যা তিনি করতে পারেন না। আমরা তাকে আঘাত করিনি। শুধু তার অপকর্মগুলো তুলে ধরেছি।'
তিনি বলেন, 'প্যাকেজেজ করপোরেশনকে তিনি গ্রামীণ ব্যাংককে দিয়ে দিয়েছেন বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন, আসলে সেটা ঠিক নয়। এ ধরনের কোনো দলিল গ্রামীণ ব্যাংকের কাছে নেই। এখনও সেই প্রতিষ্ঠান তাদের নিজেদেরই আছে।'
এদিকে ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, 'যেসব লোক বিবৃতি দিচ্ছেন তাদের চাকরি ছিল না। আজ তারা ড. ইউনূসের বদনাম করছেন। আর গ্রামীণ ব্যাংক যখন সৃষ্টি করেন, তখন গ্রামীণ ব্যাংকের এত সম্পদ ছিল না।'
গ্রামীণ ব্যাংকের জন্য ড. ইউনূস যে সেক্রিফাইস করেছেন, তা অনস্বীকার্য দাবি করে এ আইনজীবী বলেন, 'গ্রামীণ ব্যাংক লোভ-লালসায় পড়েছে। প্যাকেজেস করপোরেশন ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংককে দেননি, তার ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব দিয়েছেন। গ্রামীণ ব্যাংকের তখন এত সম্পদ ছিল না। প্যাকেজেস করপোরেশন দিয়ে গ্রামীণ ব্যাংক লাভ করেছে, আর ড. ইউনূস ও তার পরিবার নিঃস্ব হয়েছেন। তার পরিবার এজন্য সেক্রিফাইস করেছে।'