ভারতের বিপক্ষে হারে সেমির স্বপ্ন বিবর্ণ বাংলাদেশের
দুইশ ছুঁইছুঁই লক্ষ্য তাড়ায় পাওয়ার প্লে থেকে এলো ১ উইকেটে ৪২ রান, ১০ ওভার শেষে ২ উইকেটে ৬৭। ততোক্ষণে ম্যাচ কঠিন হয়ে গেছে বাংলাদেশের জন্য। এর মাঝে এক পাশ আগলে লড়ে গেলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত, শেষ দিকে ছক্কায়-ছক্কায় কিছুটা পথ এগোলেন রিশাদ হোসেন। কিন্তু তাতে জয় তো দূরের কথা, লক্ষ্যের আশেপাশেও যেতে পারলো না বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার এইটে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে হারে সেমি-ফাইনালের স্বপ্ন হয়ে উঠলো বিবর্ণ।
শনিবার অ্যান্টিগার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে সুপার এইটের দুই নম্বর গ্রুপের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ৫০ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। আগের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হার, এবার ভারতের সঙ্গেও একই ফল; এতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে কার্যত বিদায় হয়ে গেল বাংলাদেশের। বাকি থাকা ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জিতলেও তা কেবলই একটি জয়ই হয়ে থাকতে পারে। দুই ম্যাচের দুটিই জিতে শেষ চারে এক পা দিয়ে রাখলো এবারের বিশ্বকাপে কোনো ম্যাচ না হারা ভারত। ২৩ জুন আফগানিস্তানকে হারালে ভারতকে নিয়ে শেষ চারে উঠে যাবে অস্ট্রেলিয়া।
টি-টোয়েন্টিতে ভারতের সঙ্গে হারের রেকর্ড আরও বড় হলো বাংলাদেশের। দলটির বিপক্ষে ১৪ ম্যাচে এটা তাদের ১৩তম হার, জয় কেবল একটিতে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে অপরাজেয় থাকার রেকর্ড ধরে রাখলো রোহিত শর্মার দল। এ নিয়ে পাঁচ ম্যাচের সবকটিতেই বাংলাদেশকে হারালো তারা। আগামী ২৫ জুন কিংসটাউনে সুপার এইটে নিজেদের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে লড়বেন শান্ত-সাকিবরা।
টস জিতে ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠান শান্ত। ব্যাটিং পেয়ে খুশিই হন ভারত অধিনায়ক রোহিত, কারণ টস জিতে ব্যাটিং নেওয়ারই পরিকল্পনা ছিল তার। যা টসের পরে জানান। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ভারতের প্রায় সব ব্যাটসম্যানই রানের দেখা পান। বিরাট কোহলি, ঋষভ পন্ত, শিবম দুবেরা ৩০ এর ঘরে আটকে গেলেও হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ম্যাচ সেরা হার্দিক পান্ডিয়া। এদের ব্যাটে ৫ উইকেটে ১৯৬ রানের বড় সংগ্রহ গড়ে ভারত। জবাবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের শারীরিক ভাষায় মনে হয়নি তারা জিততে নেমেছেন। তানজিতের পর শান্ত অনেকটা একাই লড়েন। শেষ দিকে রিশাদ ঝড় তুললেও তা কেবল হারের ব্যবধান কমায়। ৮ উইকেটে ১৪৬ রানে থামে বাংলাদেশ।
লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা একেবারে মন্দ ছিল না বাংলাদেশের, ৪ ওভারে বিনা উইকেটে ২৭ রান তোলেন তানজিদ ও লিটন। এই জুটি ভেঙে বাংলাদেশকে চাপে ফেলেন ব্যাট হাতে ঝড় তোলার পর বল হাতেও অবদান রাখা হার্দিক। তার করা অফ স্টাম্পের বাইরের বল টেনে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সূর্যকুমার যাদবের হাতে ধরা পড়েন লিটন। ডানহাতি এই ওপেনার ১০ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ১৩ রান করেন।
শুরু থেকে প্রয়োজনীয় অনুসারে রান তুলতে পারেনি বাংলাদেশ, প্রথম উইকেট হারানোর পর রান তোলার গতি আরও কমে যায় তাদের। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে এক উইকেটে বাংলাদেশ তোলে ৪২ রান। দ্বিতীয় উইকেটে ৩১ রানের জুটি গড়েন তানজিদ ও শান্ত। দশম ওভারে আউট হওয়ার আগে ৩১ বলে ৪টি চারে ২৯ রান করেন তানজিদ। ১০ ওভার শেষে ২ উইকেটে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৬৭ রান। জয়ের জন্য ৬০ বলে দরকার তখনও ১২৯ রান। তৈরি হওয়া এই ব্যবধান আর কমাতে পারেননি কেউ, দল চাপে থাকা অবস্থাতেই ফিরে যান তাওহিদ হৃদয় ও সাকিব আল হাসান।
এরপর শান্ত বিদায় নিলে বাংলাদেশের সব সম্ভাবনাই শেষ হয়ে যায়। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ৩২ বলে একটি চার ও ৩টি ছক্কায় ৪০ রান করেন। পারেননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও, ১৫ বলে ১১ রান করেন তিনি। কেউ যা পারেননি, শেষ দিকে তা করে দেখান রিশাদ। বাংলাদেশের এই লেগ স্পিনার ব্যাট হাতে ঝড় তুলে ১০ বলে একটি চার ও ৩টি ছক্কায় করেন ২৪ রান। বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ভোগানো ভারতের রিস্ট স্পিনার কুলদীপ যাদব ৪ ওভারে ১৯ রানে নেন ৩ উইকেট। দুই পেসার আর্শদীপ সিং ও জাসপ্রিত বুমরাহ পান ২টি করে উইকেট। ম্যাচসেরা হার্দিকের শিকার একটি উইকেট।
এর আগে উইকেটে গিয়েই ঝড় তোলেন রোহিত। ১১ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ২৩ রান করেন ডানহাতি এই ওপেনার। ২৮ বলে একটি চার ও ৩টি ছক্কায় ৩৭ রানের ইনিংস খেলেন কোহলি। ব্যাট হাতে দারুণ ধারাবাহিক পন্ত ২৪ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩৬ রান করেন। ভারতের পক্ষে ব্যাটিং করা সাত ব্যাটসম্যানের মধ্যে কেবল সূর্যকুমার রান করতে পারেননি, ২ বলে ৬ রান করে ফেরেন তিনি।
পঞ্চম উইকেটে ৩৪ বলে ৫৩ রানের জুটি গড়েন দুবে ও পান্ডিয়া। ২৪ বলে ৩টি ছক্কায় ৩৪ রান করেন দুবে। সবাই রান পেলেও ভারতের ইনিংসে কেবল হার্দিক পঞ্চাশ ছুঁতে পেরেছেন। শেষ বল পর্যন্ত ব্যাটিং করা এই ডানহাতি ২৭ বলে ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৫০ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেন। অক্ষর প্যাটেল ৩ রানে অপরাজিত থাকেন।
বিশ্বকাপে বল হাতে আলো ছড়িয়ে আসা বাংলাদেশের তরুণ পেসার তানজিম হাসান সাকিব ৪ ওভারে ৩২ রানে ২টি উইকেট নেন। লেগ স্পিনার রিশাদ শিকারও ২ উইকেট। তবে তিনি খরুচে ছিলেন, ৩ ওভারে তার খরচা ৪৩ রান। ৩ ওভারে ৩৭ রানে একটি উইকেট নেন সাকিব।
এই উইকেট দিয়ে দারুণ এক মাইলফলকে পৌঁছেছেন অভিজ্ঞ এই স্পিনার। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসের প্রথম বোলার হিসেবে ৫০ উইকেট পূর্ণ করেছেন তিনি। ৩৯ উইকেট নিয়ে দুই নম্বরে পাকিস্তানের সাবেক লেগ স্পিনার শহীদ আফ্রিদি। বর্তমানে খেলা ক্রিকেটারদের মধ্যে সাকিবের পর সবচেয়ে বেশি উইকেট শ্রীলঙ্কার ভানিন্দু হাসারাঙ্গার, চারে থাকা এই লেগ স্পিনারের শিকার ৩৭ উইকেট।