বর্ষায় আড়িয়ল বিলের শাপলায় বেড়েছে স্থানীয় কৃষকদের রোজগার
বর্ষায় মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরের আড়িয়ল বিলে ফোটা শাপলা স্থানীয়দের বাড়তি রোজগারের সুযোগ তৈরি করেছে।
প্রায় সারা বছর শাপলা ফুটলেও বর্ষা ও শরৎ এই উদ্ভিদ জন্মানোর শ্রেষ্ঠ সময়। আষাঢ়ের বৃষ্টির পানিতে বিস্তীর্ণ আড়িয়ল বিল এখন পানিতে পরিপূর্ণ। আর তাই পুরো বিলজুড়ে ফুটেছে শাপলা।
শুষ্ক মৌসুমে আড়িয়ল বিলে ধানসহ বিভিন্ন শাক-সবজির আবাদ হলেও, বর্ষার মৌসুমে বিল পাড়ায় নিম্ন আয়ের অধিকাংশ মানুষই বেকার হয়ে পড়ে।
আর এই সময়কে কাজে লাগিয়ে আড়িয়ল বিলে শাপলা, শামুক কুড়ানোর পাশাপাশি মাছ শিকার করে সংসারের অর্থের যোগান দিয়ে থাকেন বিল পাড়ের বহু মানুষ।
স্থানীয়রা প্রতিদিন সূর্য ওঠার আগেই ছোট ডিঙ্গি ও কোষা নৌকা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন আড়িয়ল বিলের শাপলা তুলতে। দিনের কয়েক ঘন্টা শাপলা কুড়িয়ে নৌকাভর্তি করে ফেরেন বাড়িতে।
আড়িয়ল বিল এলাকার শ্রীনগর অংশের গাদিঘাট, আলমপুর, মদনখালী, শ্রীধরপুর এলাকার বিভিন্ন সড়কের পাশে স্থানীয় ভাবে এসব শাপলা বেচা বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে অন্তত ১০ ট্রাক শাপলা যাচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন সবজির পাইকারি বাজারে।
স্থানীয়রা বলেন, জীবন ও জীবিকার তাগিদে বিকল্প উপার্জন হিসেবে বর্ষার মৌসুমে শতশত বেকার যুবক-বৃদ্ধ আড়িয়ল বিলের শাপলা বিক্রির আয়ে সংসার চালাচ্ছেন।
সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, গাদিঘাট সড়কের পাশে নৌকা থেকে আনন্দ-উল্লাস করে নৌকা থেকে শাপলা নামানো হচ্ছে। পরে শাপলার আটি গুণে-গুণে তোলা হচ্ছে পিকআপ ভ্যানে।
এ সময় আমিনুল, আল-আামিন ও জনি নামক তিন শাপলা সংগ্রাহক জানান, ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত তারা শাপলা আনতে আড়িয়ল বিলের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ান। বর্ষায় কোনো কৃষি কাজ না থাকায় বিনা পুঁজিতে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো শাপলা কুড়িয়ে বিক্রি করেন পাইকারের কাছে। এতে দৈনিক ১০০০-১৫০০ টাকা আয় হয় তাদের।
মো. মোয়াজ্জেম নামের স্থানীয় আরেকজন জানান, অন্তত দুই শতাধিক মানুষ বর্ষায় আড়িয়ল বিলের শাপলা বিক্রির আয়ে সংসার চালান।
আলমপুর এলাকার মো. আয়নাল হক বলেন, স্থানীয়দের থেকে শাপলা সংগ্রহ করে ঢাকার বিভিন্ন পাইকারির হাট বাজারে নেন তিনি। এখন আড়িয়ল বিলে শাপলার পরিমাণ কিছুটা কম। পানি বাড়লে শাপলার পরিমাণও অনেক বাড়বে।
রফিকুল ইসলাম জানান, গাদিঘাট থেকে প্রতিদিন চার পিকআপ শাপলা ঢাকায় পাঠাচ্ছেন তিনি। প্রতি আটি শাপলার পাইকারি দাম ১৬ টাকা।
মুন্সীগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, 'মূলত শ্রীনগরের আড়িয়ল বিল এবং সিরাজদিখানের কিছু কিছু এলাকায় বর্ষাকালে ডুবে যাওয়া কিছু জমিতে প্রাকৃতিকভাবেই এই শাপলা জন্মায়। এগুলো আবাদ করতে হয় না। এটা কৃষকদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। তারা এসব শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।'
তিনি আরও বলেন, 'মুন্সিগঞ্জের আশেপাশের বিভিন্ন জেলা এবং ঢাকা শহরে শাপলার চাহিদা বেশি। কৃষকরা প্রতিদিন তোলা শাপলা মহাজনদের কাছে বিক্রি করেন। মহাজনরা আবার এগুলো আড়তদারদের কাছে বিক্রি করেন। এগুলো বিক্রি করে বেশ ভালো অংকের অর্থ আয় করেন তারা।'
বর্ষার মৌসুমে আড়িয়ল বিলের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ভ্রমণ পিপাসুরা আসতে শুরু করেছেন। তারা নৌকা, ট্রলার ও ময়ূরপঙ্খী নৌকা নিয়ে বিস্তীর্ণ আড়িয়ল বিলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ঘুরে দেখছেন।