আবারও সাদিক এগ্রো থেকে ৬টি ব্রাহমা গরু জব্দ দুদকের
ছাগলকাণ্ডের পর থেকে সাদিক এগ্রোর একের পর এক খামারে ব্রাহমা গরুর সন্ধানে অভিযান চালাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার (৩ জুলাই) দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে একটি দল রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সাদিক এগ্রোর আরও একটি খামারে অভিযান চালিয়ে ৬ টি ব্রাহমা জাতের গরুর সন্ধান পেয়েছে।
জানা যায়, মোহাম্মদপুর থানার নবীনগর এলাকার ১৫ নাম্বার রোডের সাদিক এগ্রোর খামারে অভিযান চালায় দুদক। এসময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা বাসনা আক্তার।
দুদক জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সাদিক এগ্রোতে দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম এসে ৬টি ব্রাহমা গরুর সন্ধান পান।
সেখানে প্রতিটি গরু কোটি টাকা মূল্যের বলে দাবি করেছে সাদিক এগ্রোতে কর্মরতরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাদিক এগ্রোর এক কর্মী বলেন, '৩ তারিখ গভীর রাতে গরুগুলোকে এখানে আনা হয়।'
অভিযানে সাদিক এগ্রোর মালিক বা ম্যানেজার কাউকেই পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর গরুগুলো ২৮০ টাকা কেজি দরে মাংস হিসেবে বিক্রি করার শর্তে নিলামে দিয়েছিল।
এর আগে গত ১ জুলাই সাদিক এগ্রোতে ৭ থেকে ১০ মাস বয়সী ৭টি ব্রাহমা প্রজাতির গরুর বাছুর পেয়েছিল দুদক।
দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে দুদকের ৯ সদস্যের অভিযানিক দল এ অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযান শেষে আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, 'অভিযানে আমরা খামারের বীজ (স্পার্ম) দেওয়ার হিসাব খাতা ও কসাই খাতা দুটি জব্দ করেছি। সেখানে দেখা গেছে গত মাসে ৫টি ব্রাহমা জাতের গাভীকে স্পার্ম দেওয়া হয়েছে। যদিও খামারে ওই পাঁচটি ব্রাহমা জাতের গাভী দেখা যায়নি।'
তিনি বলেন, 'এছাড়াও আমরা ৭ টি ব্রাহমা জাতের বাছুর পেয়েছি। সেগুলো বিক্রি বা স্থানান্তর করতে নিষেধ করা হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'যে ১৬ টি গরু ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশন নিয়েছিল, সেগুলোর বিষয়ে এখনও কিছু জানা যায়নি। তবে ফার্মের খাতায় প্রাপ্ত স্পার্ম দেওয়া গরুর তথ্য ও যে বাছুরগুলো এখনে আছে এ বিষয়ে কমিশনে তথ্য দেওয়া হবে। কমিশন পরবর্তীতে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিবে।'
এরআগে সাভারে কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে অভিযান পরিচালনা করে দুদক। সরকারি প্রতিষ্ঠানটির দরপত্র জালিয়াতিসহ নানান দুর্নীতির অভিযোগ অভিযানের সময় খতিয়ে দেখেছেন দুদকের সদস্যরা।
সেখানে দুদক কর্মকর্তারা কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের পরিচালক মো মনিরুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
খামারটি থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে দুদকের এই অভিযানিক দল সাভারের বিরুলিয়া এলাকায় সাদিক এগ্রোতে এসে অভিযান শুরু করেন।
রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমানের ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাতের ছাগলকাণ্ডের পর থেকে সাদিক এগ্রোকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। পরে অবৈধভাগে খাল ও সিটি করপোরেশনের জায়গা দখল করে গড়ে তোলা এবং ট্রেড লাইসেন্স না নেয়ায় সাদিক এগ্রোর খামার ভেঙে দেয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।
সাদিক এগ্রোর মালিক ইমরান হোসেনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে দেশের গরু আনার অভিযোগ রয়েছে। আমদানির এলসি (ঋণপত্র) না খুলেই ২০২১ সালে ১৮টি ব্রাহমা জাতের গরু জাল কাগজপত্র তৈরি করে দেশে আনেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা এসব গরু শাহীওয়াল জাতের বলে নথিতে উল্লেখ করেছিল সাদিক এগ্রো।
সরকার এর আগে ২০১৬ সালে ব্রাহমা আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়।
আমদানি নিষিদ্ধ উন্নত জাতের ওই গরুগুলো হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জব্দ করেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। একটি গরু তখনি মারা যায়। অন্য গরুগুলো পাঠানো হয় সাভারের গো প্রজনন কেন্দ্রে।
বিষয়টি নিয়ে ওই বছরের ৩ আগস্ট হাইকোর্টেও শুনানি হয়েছিল, এসময় উচ্চ আদালত কাস্টমস কর্মকর্তাদের গরুগুলো জব্দ করার সিদ্ধান্তের পক্ষেই রায় দেন।
২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত গরুগুলো সাভারের গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারেই লালন পালন হয়। পরে গরুর মাংসের চাহিদা মেটাতে দরপত্রের মাধ্যমে নিলামের বিজ্ঞপ্তি দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
দুদক কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ অভিযানের পর সাংবাদিকদের জানান, "তখন মূলত মাংসের চাহিদা পূরণে একটি কমিটি করে ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের কাছে ১৬টি গরু সূলভমূল্যে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু ওই গরুগুলো পরে কীভাবে সাদিক এগ্রোর কাছে গেল এ বিষয়েই মূলত আজকের অভিযান"।
অভিযোগ রয়েছে, এই সুযোগে সাদিক এগ্রো আবার স্বল্পমূল্য গরুগুলো নিলামে জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়ে নেয়।