ঢাকা সাবওয়ে, ইস্ট-ওয়েস্ট এক্সপ্রেসওয়ের জন্য স্পেনের সহায়তা চায় সরকার
একটি সাবওয়েসহ (পাতাল রেল) তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই, প্রকৌশলগত নকশা প্রণয়ন এবং পরামর্শ সেবার জন্য স্পেনের সহযোগিতা চাইছে বাংলাদেশ সরকার। এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অনুদান (অ-ফেরতযোগ্য) সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে দেশটি।
এরমধ্যে সেতু বিভাগের ঢাকা সাবওয়ে রুট (টঙ্গী-ঝিলমিল)-এর বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন এবং সরকারি–বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে ঢাকা ইস্ট-ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে পরামর্শ সেবার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।
এছাড়া, শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর ডাঙ্গা বাজার সেতু নির্মাণের সমীক্ষাও স্পেনের মাধ্যমে করতে চায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ইআরডি সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় স্পেনের দূতাবাস ইআরডির পাঠানো এক চিঠিতে অফেরতযোগ্য (নন-রিম্বার্সিবল) সহায়তার প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা বা নকশা প্রণয়নের কাজে আগ্রহ দেখায় দেশটি।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) কর্মকর্তারা জানান, স্পেনের অনুদানে দুটি প্রকল্পের নকশা ও পরামশর্ক সেবার জন্য প্রস্তাব ইআরডিতে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প দুটির জন্য প্রাথমিক প্রযুক্তিগত প্রস্তাব পাঠানোর বিষয়ে স্পেন থেকে প্রাথমিক অনুমোদনও মিলেছে।
সেতু কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী মুহাম্মদ ফেরদৌস বলেন, "ঢাকা শহরকে পুরোপুরি যানজটমুক্ত করতে হলে সাবওয়ে লাগবে। এটি নির্মাণে কোথা থেকে অর্থায়ন আসবে— এক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) প্রয়োজন, নাকি উন্নয়ন সহযোগীদের নামনীয় ঋণে এটি হবে— সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ২৯.২৬ কিলোমিটার টঙ্গী থেকে ঝিলমিল পর্যন্ত সাবওয়ে নির্মাণের নাকশা করা প্রয়োজন।"
এ কারণে স্পেনের কাছে বিস্তারিত নকশা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। আরও বলেন, "একইভাবে পিপিপিতে, ঢাকা ইস্ট-ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের ট্রান্স্যাকশন অ্যাডভাইসর সেবার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।"
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা জানান, পিপিপি প্রকল্পে ট্রান্স্যাকশন অ্যাডভাইসর ভূমিকা বিশাল। দরপত্র ডকুমেন্ট তৈরি, চুক্তিপত্র তৈরি, দরপত্র মূল্যায়ন, নেগোশিয়নসহ যাবতীয় কাজই করে ট্রান্স্যাকশন অ্যাডভাইসর।
দুই বছর আগে স্পেনের প্রতিষ্ঠান টেকনিকা ওয়াই প্রোয়েকটোস সা (টিওয়াইপিএসএ)-এর মাধ্যমে সাবওয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ)। প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রথম ধাপের রুটসহ ১০৫ কিলোমিটারের চারটি সবওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। এতে প্রয়োজন হবে ৩,৫০,০৬৬ কোটি টাকা।
সাবওয়ে রুট ০ তে মোট ২৭টি স্টেশন হবে। এগুলো হলো— টঙ্গী জংশন, আহসানউল্লাহ মাস্টার, উত্তরা সেক্টর-১০, উত্তরা সেক্টর-১৩, উত্তরা সেক্টর-১৪, উত্তর বাউনিয়া, উত্তরা সেক্টর-১৭, সেগুফতা নিউ রোড, কালশী মোড়, পলাশ নগর, ভাষানটেক গভর্নমেন্ট হাই স্কুল, কচুক্ষেত, রজনীগন্ধা মার্কেট, রাওয়া, মহাখালী, বিজি প্রেস, হাতিরঝিল, মগবাজার, কাকরাইল, প্রেসক্লাব, গুলিস্তান, নয়া বাজার, সদরঘাট, খেজুরবাগ, মুসলিম নগর, তেঘোরিয়া বাজার এবং ঝিলমিল।
এদিকে বিবিএ'র কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা ইস্ট-ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প পিপিপিতে করার জন্য সরকারের নীতিগত অনুমোদন রয়েছে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী ইস্ট- ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতি দেন।
এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি মহাসড়ক ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের (এন৫) হেমায়েপুর, ঢাকা-মাওয়া (এন৮) মহাসড়ক এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম (এন১) এর লাঙ্গলবন্দকে ইন্টার-সেকশনের মাধ্যমে সংযুক্ত করে নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ঢাকা-মাওয়ার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে পদ্মা সেতুর সাথে মহাসড়ক এন৫ এবং এন১ এর সংযোগ স্থাপন।
এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের জেলাসমূহের যানবাহনসমূহ ঢাকা শহরে প্রবেশ না করে নির্মিতব্য এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে উল্লিখিত জেলাসমূহে সরাসরি গমন করতে পারবে।
এ লক্ষ্যে ২০১৭ সালে একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়। সম্ভাব্যতা সমীক্ষা অনুসারে প্রকল্পটির দৈর্ঘ্য হবে ৩৯.২৯ কিলোমিটার।
২০২৩ সালের ২ আগস্টে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সেতু ব্যবস্থাপনা শাখার একটি সাইট ভিজিটের পরে স্থানীয় দপ্তরগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ডাঙ্গা বাজার সেতু এবং প্রায় ১০ কিলোমিটারের একটি সংযোগ সড়ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দেখা যায়, সংযোগ সড়কটি নির্মিত হলে পাঁচদোনা-ডাঙ্গা-পলাশ সড়ক এবং জয়দেবপুর-দেবগ্রাম-ভুলতা-মদনপুর সড়কের মধ্যে দূরত্ব কমবে।
এই প্রকল্পের দুই লক্ষ্য লক্ষ্য হলো— অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গে সংযোগ উন্নত করা এবং ঢাকার পূর্ব দিকে একটি নতুন এক্সিট বা এন্ট্রি করিডোর স্থাপন করা।
প্রস্তাবিত ডাঙ্গা বাজার সেতু প্রসঙ্গে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শিশির কান্তি টিবিএসকে বলেন, "আলোচনার ভিত্তিতে ডাঙ্গা সেতুর সমীক্ষার জন্য স্পেনকে অনুরোধ করা হয়েছে। একইসঙ্গে ইআরডির মাধ্যমে এ সংক্রান্ত কিছু তথ্য ও পাঠানো হয়েছে। তাদের সম্মতি পাওয়া গেলে, প্রয়োজনে প্রাথমিক প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হবে।"