প্রশ্নফাঁসে জড়িত পিএসসির আরও ১০-১২ কর্মকর্তা: গ্রেপ্তারকৃতদের জবানবন্দি
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) অধীনে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) এবং অন্যান্য নন-ক্যাডার পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে পিএসসির আরও ১০ থেকে ১২ জন কর্মকর্তা জড়িত রয়েছে। মঙ্গলবার (৯ জুলাই) ঢাকার পৃথক ছয়টি আদালতে গ্রেপ্তার ছয়জনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
পিএসসির এসব কর্মকতাদের মধ্যে একজন সহকারী পরিচালক পদমার্যাদার, একজন সদস্য ও বাকি চারজন কর্ম কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- পিএসসির অফিস সহায়ক খলিলুর রহমান, সাবেক গাড়ি চালক সৈয়দ আবেদ আলী, অফিস সহায়ক (ডিসপাস) সাজেদুল ইসলাম, ব্যবসায়ী সহোদর সাখাওয়াত হোসেন ও সায়েম হোসেন এবং বেকার যুবক লিটন সরকার। মঙ্গলবার ঢাকার বিভিন্ন আদালতে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) দায়ের করা মামলায় তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আদালতে দায় স্বীকার করে দেওয়া জবানবন্দিতে পিএসসির অফিস সহায়ক খলিলুর রহমান জানান, ৩৩তম বিসিএস পরীক্ষায় ১০ জন প্রার্থীর কাছে প্রশ্নফাঁস করেন তিনি। তাদের মধ্যে ৩ জন বর্তমানে বিভিন্ন ক্যাডারে চাকরি করছেন। ওই বিসিএসে তার ফাঁস করা প্রশ্নে ১০ জনের মধ্যে ৬ জন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। সেই ৬ জনের মধ্যে ৩ জন মৌখিক পরীক্ষায় বাদ পড়েন।
এছাড়াও, সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও রেলের অন্তত কয়েকশো নিয়োগে খলিলুরের হাত ছিল বলেও তিনি আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
জবানবন্দিতে খলিলুর আরও জানিয়েছেন, পিএসসির সাবেক একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে তিনি চাকরিপ্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিতেন। সেখান থেকে সবুজ সংকেত মিললে নিয়োগের বিষয়ে আর্থিক লেনদেনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতো।
সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়ামুলও এসব প্রশ্নপত্র ফাঁসে বিভিন্ন সময়ে তাকে সহযোগিতা করেছেন বলে জানিয়েছেন খলিলুর।
খলিলুরের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য নিয়ে ইতোমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি।
এদিকে, বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ ওঠা এসব কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসসি। ইতোমধ্যে তাদের অনেককে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে সিআইডি ও পিএসসির একাধিক সূত্র।
জানতে চাইলে পিএসসির চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন বলেন, "প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় পিএসসির অবস্থান অত্যন্ত কঠোর। এসব ঘটনায় আরও যেসব কর্মকর্তা জড়িত আছেন, তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আরও বেশ কয়েকজনকে নজরদারিতে রেখেছে বলেও আমরা জানতে পেরেছি।"
এদিকে, গত ৫ জুলাই পিএসসির অধীনে বাংলাদেশ রেলওয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস ও জালিয়াতির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া পিএসসির ৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অসাধু উপায়ে অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে তদন্ত ও ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনে চিঠি দিয়েছে পিএসসি।
বুধবার (১০ জুলাই) পিএসসির সিনিয়র সহকারী সচিব জামিলা শবনম দুদক সচিবকে এই চিঠি পাঠান। চিঠিতে উপ-পরিচালক আবু জাফর, উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক আলমগীর কবির, ডেসপাস রাইডার আলমগীর কবির ও অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য-প্রমাণ ও তথ্যের ভিত্তিতে দুর্নীতির মামলা করার কথা বলা হয়েছে।