ছেলের দেখা পেতে ৭ দিন ধরে কোর্টের বারান্দায় ঘুরছেন সবুরা বেগম
মেয়েকে নিয়ে গত সোমবার থেকে ঢাকার সিএমএম কোর্টের বারান্দায় ঘুরছেন গার্মেন্টস কর্মী সবুরা বেগম। উদ্দেশ্য গ্রেপ্তার হওয়া ছেলে ও মেয়ের জামাইকে একবারের জন্য হলেও দেখা।
সবুরা বেগম (৪৫) টিবিএসকে বলেন, "গত সপ্তাহে পুলিশ মেস থেকে তাদেরকে আটক করে নিয়ে যায়। আমরা ওইদিন তাদের সঙ্গে থানায় দেখা করি। এরপর থেকে আমার ছেলের দেখা নাই। পুলিশ বলে কোর্টে প্রেরণ করেছে। কিন্তু কোর্টে এসে ওর দেখা পাইনি।"
"গত কয়েকদিন ধরে থানায় আর কোর্টের বারান্দায় ঘুরছি", যোগ করেন তিনি।
সবুরা বেগম সাভারের একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন। স্বামী ও দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে ভালোই চলছিল সংসার। তবে কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে চলা সহিংসতার ঘটনা পুরো তালমাতাল করে দিয়েছে সবুরা বেগমের পরিবারকে।
গত রোববার সাভারে একটি মেস থেকে সবুরার ছেলে ও মেয়ের জামাইকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর থেকে ছেলের এক ঝলক দেখা পেতে বিভিন্ন জায়গা ঘুরছেন সবুরা বেগম।
রোববার দুপুরে সিএমএম কোর্ট প্রাঙ্গনে কথা হয় সবুরা বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, তার ছেলে সাব্বির (১৮) ও মেয়ের জামাই আনিস (২২) সাভারের নিউমার্কেট এলাকার একটি মেসে ভাড়া থাকতেন। সাব্বির রাস্তায় শরবত বিক্রি করতেন, অন্যদিকে আনিস কাজ করতেন একটি গার্মেন্টসে।
এ সময় পাশে থাকা সবুরা বেগমের কন্যা সালমা আক্তার (২০) বলেন, "শনিবার রাতে আমাদের বলেছেন রোববার আমারা স্বামীকে কোর্টে আনবে। তাই সকাল ৭টা থেকে কোর্ট প্রাঙ্গনে বসে আছি।"
"এখন ৩টা বাজে, অনেক আসামিকে আনা হয়েছে। প্রত্যেকটা গাড়ি চেক করেছি। কিন্তু আমার স্বামী এবং ভাই, কাউকে দেখিনি," যোগ করেন সালমা।
"আমার ছেলের জামিন লাগবে না। আমাকে একবার দেখা করতে দাও," বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন সবুরা বেগম ।
সবুরার মতো অনেকেই এসেছেন সিএমএম আদালত প্রাঙ্গনে। যাদের স্বজনদেরকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও অধিকাংশ পরিবারের দাবি পুলিশ তদন্ত ছাড়াই গণহারে গ্রেপ্তার করেছে।
সকাল থেকে সিএমএম কোর্টের গারদের সামনে অপেক্ষা করছিলেন কুলসুম বেগম (৪০)। জানালেন, গত শনিবার বিকেলে মিরপুর থেকে তার ছেলে সুজন মিয়াকে (২১) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
কুলসুম বেগম বলেন, "আমার ছেলে একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে মার্কেটিং বিভাগে কাজ করে। ডিউটি চলাকালে পুলিশ তাকে আটক করে। পরে মিরপুরে দায়ের করা ভাঙচুরের মামলায় গ্রেপ্তার দেখায়।"
"আমার ছেলে আন্দোলন চলাকালে বাসায় ছিল। সে কোনো দলও করেনা। আমার ছেলেটাকে বিনা অপরাধে ধরে এনেছে," যোগ করেন কুলসুম।