বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও পর্যটক বাড়ায় নজিরবিহীন চালের সংকটে জাপান
দোকানগুলোতে পড়ে আছে খালি তাক, অনলাইন বিক্রেতারা পারছেন না গ্রাহকদের অর্ডার পূরণ করতে এবং অন্যদিকে সরকার বলছে অপেক্ষা করুন, দেখি কী হয়! এমন অবস্থাই এখন জাপানে। দেশটিতে দেখা দিয়েছে নজিরবিহীন চালের সংকট।
ধান উৎপাদনে শতভাগ স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকার দাবিদার একটি দেশে এই সংকট বিস্ময়কর। ২০২৩ সালে ক্যালোরির ভিত্তিতে সামগ্রিক খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতার হার ছিল মাত্র ৩৮ শতাংশ। এর মানে, জাপান অন্যান্য খাদ্যপণ্যের জন্য ব্যাপকভাবে আমদানির ওপর নির্ভরশীল, ফলে সামগ্রিকভাবে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতার হার কম।
বর্তমানে ইতো-ইয়োকাডো সুপারমার্কেটসহ বেশ কিছু দোকানে প্রতি পরিবারের জন্য চাল কেনার পরিমাণ এক প্যাকেটের মধ্যে সীমিত করে দেওয়া হয়েছে।
তবে, কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছে। কৃষিমন্ত্রী তেতসুশি সাকামোতো বলেছেন, "২০২৪ সালে ধানের ফলন ভালো হয়েছে। কিছু এলাকায় ফসল কাটার কাজ এক সপ্তাহ আগেই শুরু হবে, তাই বাজারে চালানও আগেভাগে শুরু হওয়া উচিত"। "নতুন চাল না আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে হবে," যোগ করেন ইয়োকাডো।
শক্তিশালী টাইফুন শানশানের কারণে ঝড়ো বাতাস ও সামুদ্রিক ঝড়ের সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করায় জাপানিদের মধ্যে চিন্তা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। টাইফুনটি ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জাপানে থাকতে পারে, যা তাদের ধানের ভালো ফলনের জন্য একটি বড় হুমকি।
টাইফুনে ফসল নষ্ট হলে এই সংকট আরও বাড়বে। তখন জাপান সরকারকে হয় ধান আমদানি করতে হবে অথবা ১৯৯৩ সালে সংরক্ষিত ৯ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন জরুরি মজুদ থেকে চাল সরবরাহ করতে হবে।
চাহিদা বৃদ্ধি
এবছরের বসন্ত থেকেই সংকটের আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জুন মাসে বেসরকারি খাতে মজুদ ছিল ১৫.৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন, যা ১৯৯৯ সাল থেকে শুরু হওয়া পরিসংখ্যানের মধ্যে সর্বনিম্ন এবং ২০২৩ সালের তুলনায় ২০ শতাংশ কম। জুলাই মাসে, ৬০ কেজি ধানের পাইকারি মূল্য দাঁড়ায় ১৫,৬২৬ ইয়েনে (৯৭.১০ ইউরো), যা আগের বছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি।
একই সময়ে, ২০২৩ সালের জুন থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত চাহিদা ১ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন থেকে বেড়ে ৭ দশমিক ২ মিলিয়ন মেট্রিক টনে পৌঁছেছে, যা ১০ বছরের মধ্যে প্রথম বৃদ্ধি।
কারণ? করোনা মহামারির পর জাপানে পর্যটক বাড়ার সাথে সাথে খাদ্যের চাহিদাও বেড়েছে। ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে জাপান ১৭.৭৮ মিলিয়ন বিদেশি দর্শনার্থীকে স্বাগত জানিয়েছে, যা ২০১৯ সালের প্রথমার্ধের তুলনায় এক মিলিয়ন বেশি।
আরেকটি সমস্যা হলো মুদ্রাস্ফীতি, যা জাপানি ভোক্তাদের ক্রমশ ধানের দিকে ঝুঁকাচ্ছে। কৃষিমন্ত্রী হিরোশি ইতাকুরার মতে, গমের মতো অন্যান্য ফসলের তুলনায় ধান তুলনামূলক সস্তা।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ধান চাষেও প্রভাব পড়ছে। ১৯৯৩ সালে ধান চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল অত্যন্ত ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে। অন্যদিকে, ২০২৩ সালে স্বাভাবিকের চেয়ে ১ দশমিক ৭৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা ধানের গুণগত মানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
উচ্চ তাপমাত্রার পাশাপাশি গ্রীষ্মের শুষ্ক আবহাওয়াও ধানের ফলনকে প্রভাবিত করেছে, যা সংকটকে আরও তীব্র করেছে। এই অবস্থায় টাইফুন শানশানের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করতে পারে, যা ধান উৎপাদনে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন