বিক্ষোভের মুখে আশুলিয়ায় আজ বন্ধ ৭৯ কারখানা
চলমান শ্রমিক অসন্তোষের জেরে আশুলিয়ার বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের বাইপাইল থেকে জিরাবো এলাকা পর্যন্ত অবস্থিত অন্তত ৭৯টি কারখানা আজ বন্ধ রয়েছে।
বিষয়টি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছেন শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম।
তবে বেলা ১১টা পর্যন্ত পাওয়া খবরে শিল্পাঞ্চলের অন্যান্য এলাকাগুলোতে অবস্থিত কারখানাগুলোর কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানা গেছে।
শিল্পের নিরাপত্তায় শক্ত অবস্থানে রয়েছেন শিল্প পুলিশ, সেনা, র্যাব, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
বিজিএমইএ সূত্র জানায়, বেলা ১২টা পর্যন্ত তাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী আজ এই অঞ্চলের অনন্ত, শারমীন, হামীম, স্টারলিং গ্রুপসহ ৬৮টি টি গ্রুপ/কোম্পানির কারখানা স্ব-বেতনে (লিভ ইউথ পে) বন্ধ আছে। যেসব কারখানা খোলা ছিল, তারমধ্যে ১৩টি গ্রুপ/কারখানার শ্রমিকরা আজ কাজ না করে কারখানা থেকে বেরিয়ে যান।
এছাড়া, খোলা থাকলেও শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে কারখানার ভেতরে বিশৃঙ্খলা করছেন, এমন কারখানার সংখ্যা অন্তত ৮টি। এগুলো হলো- মন্ডল নিটওয়্যার, ন্যাচারাল ডেনিম, নিট কম্পোজিট, রেডিয়েন্স জিন্স, রেডিয়েন্স ফ্যাশন, গার্মেন্টস এক্সপোর্ট ভিলেজ, ব্রেভো অ্যাপারেলস লিমিটেড, প্রিন্স জ্যাকার্ড সোয়েটার লিমিটেড।
শ্রমিকরা জানান, গতকাল রাতে কারখানাগুলোর মালিকপক্ষ আজ কারখানাগুলোতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে ফটকে নোটিশ ঝুলিয়ে দেয়। কিছু কারখানা আজ সকালে নোটিশ ঝুলিয়েছে। সকালে শ্রমিকরা কারখানায় গিয়ে বন্ধের নোটিশ পেয়ে কারখানা থেকে ফিরে আসেন।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু টিবিএসকে বলেন, "এই অঞ্চলের অধিকাংশ কারখানাই আজ বন্ধ রয়েছে। কিছু কারখানা খোলা রয়েছে, তবে এই সংখ্যা খুবই কম। হামীম, শারমীনসহ বড় কারখানাগুলোর সব বন্ধ।"
তিনি আরও বলেন, "সকালে শিমুলতলা এলাকায় শ্রমিকরা সড়ক অবরোধের চেষ্টা করছিলেন, তবে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের বুঝিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেন। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার সংবাদ আজ পাওয়া যায়নি।"
শিল্প সূত্র জানায়, অনেক কারখানা থেকেই বন্ধের নোটিশ পাওয়া গেছে। হামীম, শারমীন, ডেকো বন্ধ রয়েছে। যদিও তারা আগেই ঘোষণা দিয়েছিল কারখানা বন্ধ রাখবে। এক কথায়, এই অঞ্চলের বড় বড় গ্রুপগুলো সবই বন্ধ রয়েছে।
যৌথ বাহিনীর গাড়ি ভাঙচুর
এর আগে, গতকাল (৮ই সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় শিমুলতলা এলাকায় বেঙ্গল গ্রুপের ইউফোরিয়া অ্যাপারেলস লিমিটেড নামে একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে কারখানার স্টাফ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও শ্রমিকসহ অন্তত ২০ জনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এরমধ্যে শিল্প পুলিশের একজন উপ-পরিদর্শক মারাত্মক আহত হয়ে সিএমএইচ এ চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে শিল্প পুলিশের একটি সূত্র।
সংঘর্ষ চলাকালে র্যাবের একটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগেরও চেষ্টা করেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্র জানায়, বকেয়া বেতনসহ ১৬ দফা দাবিতে গতকাল সকাল থেকে কর্মবিরতি পালন করছিলেন কারখানাটির শ্রমিকরা। বিকেলের দিকে স্টাফদের সাথে শ্রমিকদের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি থেকে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে, তাদের সাথেও সংঘর্ষে লিপ্ত হন শ্রমিকরা।
র্যাব-৪ সিপিসি ২ এর সাভার ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর জালিস মাহমুদ খান বলেন, "আমরা এবং যৌথ বাহিনীর সদস্যরা সমন্বয় করে তাদের (শ্রমিক) বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে বিকেলের দিকে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটে। তখন গার্মেন্টস থেকে তাদের ডিসপার্স করার জন্য আমরা চেষ্টা করি। পরবর্তীতে তারা উত্তেজিত হয়ে ওঠে, যদিও পরবর্তীতে আমরা পরিস্থিতি সামাল দিয়ে পেরেছি।"
র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, "আজ গার্মেন্টসে যারা দুষ্কৃতিকারী ছিল, তারা র্যাবের একটি গাড়ি ভাঙচুর করে এবং অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করে। পরবর্তীতে আমরা আগুনটা নেভাতে সমর্থ হই। এসময় সেনাবাহিনীর একটি গাড়িতেও তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। আমাদের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন।"
শিল্পে অস্থিরতার পেছনে দায়ীদের শনাক্ত করা হচ্ছে জানিয়ে র্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, "বর্তমানে গার্মেন্টস সেক্টরে অরাজকতার সৃষ্টিকারীদের শনাক্তে ছায়াতদন্তের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারী বাড়ানো হয়েছে। আমরা নির্দিষ্ট করতে সক্ষম হচ্ছি, কারা এর পেছনে মদদদাতা এবং গার্মেন্টস সেক্টরকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেব। এই গার্মেন্টস সেক্টরকে সচল রাখার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাব।"